স্বপ্নের সৈকতে এঁকে যাই পদচিহ্ন (দ্বিতীয় কিস্তি)
মাঝের কথা (দ্বিতীয় দিন)ঃ দ্বিতীয় দিনের যাত্রা ছিল দক্ষিণ শিলখালি ইউনিয়ন থেকে ইনানি পর্যন্ত প্রায় ৩৫ কি.মি. পথ। সকাল সাতটা নাগাদ কিছু শুকনো খাবার আর দুপুরের লাঞ্চের জন্য ফ্রাইড রাইস নিয়ে রওনা দেই সবাই। টেকনাফ থেকে কক্সবাজার সৈকত ধরে হাঁটার মধ্যে এই দ্বিতীয় দিনের সৈকত আর সমুদ্রের রূপ অসাধারণ, চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। সাগরের নীল জল দেখে আপনার মনে হবে নীল জল দেখতে এতো কষ্ট করে সেন্টমার্টিন বা দেশের বাইরে যাওয়ার কি দরকার? বীচ জুড়ে প্রায় দশ কিলোমিটার এলাকায় লাল কাঁকড়ার চাদর দেখে মনে হবে এ কোথায় এলাম?
ইভেন্টের আগেই জানা ছিল দ্বিতীয় দিনের এই রুপময় সৈকতের কথা, আর তাই এদিন মিস করেনি কেউ এই রুপসুধা। সুবিশাল সৈকত, সর্পিলাকারে বাঁক নিয়ে নিয়ে ভাঁজে ভাঁজে এগিয়ে গেছে যেন সেই সুদুরপানে। মাঝে মাঝে পেড়িয়ে যাচ্ছিলাম জেলে পল্লীগুলো, সেখানে সৈকতে এক এক করে ভিড়ছিল জেলেদের মাছ ধরার নৌকাগুলো, সারারাত ধরে মাছ ধরে ফিরে এসেছে সেগুলো। সাগরের নীলজল, মাথার উপরে নীলাকাশ, সাথে ঝাউবন ঘেরা সবুজের দেয়াল সাগরের বিপরীতে... তার উপর মুগ্ধতায় ঘায়েল করা লাখো লাল কাঁকড়ার দল। পুরাই মাথা নষ্ট!!!
এই পথের জাদুময় রূপের কারণেই কিনা জানিনা, দ্বিতীয় দিন বেশীরভাগ সদস্যই পুরো পথ হেঁটে পাড়ি দিয়েছে। রাত সাতটা নাগাদ শেষ দল ইনানি এসে পৌঁছে। আমরা সন্ধ্যা নাগাদ ইনানি পৌঁছই, ইয়ে... আমি কিন্তু পুরো পথ হাঁটি নাই শেষ বিকেলে সূর্য ডোবার আগে একদল বাউন্ডুলের দল নেমে পড়ি ইনানি বীচের জলে। শীতের সন্ধ্যায় সমুদ্রের জলে খুনসুটি শেষে সন্ধ্যা হতে শুরু হয় বারবিকিউ এর আয়োজন। ভ্রমণ বাংলাদেশের ইভেন্টে বারবিকিউ থাকবে না এটা কি হতে পারে?
রাত দশটা নাগাদ বারবিকিউ শেষ হলে শুরু হল ভক্ষণ পর্ব, শেষ হতে হতে রাত এগারোটা। এরপর আমরা দশ-বারো জনের দল চলে গেলাম বীচে। আমাদের এদিনের ডেরা ছিল ইনানিস্থ সৈকত সংলগ্ন মোটেল। মোটেল থেকে সাগরের ঢেউ দেখা গেলেও আমরা চলে গেলাম একেবারে সাগর পাড়ে। রাতের খোলা আকাশের নীচে, সাগরের ফেনিল ঢেউ আমাদের পা চুমু দিয়ে যখন বার বার ফিরে যাচ্ছিল তখন কোটি তারার মেলা আকাশ জুড়ে, লুঘু সপ্তর্ষি মাথার উপর।