Touching The Void (2003) (মুভি রিভিউ )


জয়ের অদম্য নেশায় আপনারা দুইবন্ধু পাড়ি দিয়েছেন একুশ হাজার ফুট উঁচু এক পর্বতমালা। জয়ের সাফল্যমালা করায়ত্ত করে সেখান থেকে নেমে আসার সময় এক তুষার ঝড়ের রাতে আপনার সঙ্গীর পা ভেঙ্গে গেল এমন এক সময় যখন আপনারা দুজনে ঝুলে আছেন পর্বতাহরণের দড়িতে। আপনি উপরে, সঙ্গী নীচে, তাকে ধরে রাখতে গিয়ে আপনি নিজেই প্রাণ হারাতে বসেছেন। তখন আপনি কি করবেন? আপনি যাই করুন না কেন, Simon Yates কিন্তু দড়ি কেটে দিয়েছিলেন বন্ধুর প্রতি ভালবাসা পাথর চাপা দিয়ে। না এটা কোন গল্প বা সিনেমার কাহিনী নয়, একেবারে নির্জলা সত্য।১৯৮৫ সালে দুই ব্রিটিশ পর্বতারোহী Joe Simpson এবং Simon Yates প্রথমবারের মত পেরুর সিউলা গার্ডেন নামক পর্বত জয়ের নেশায় বেড়িয়ে পড়েন, যার চূড়া তখনো ছিল অজেয়। সেই অজেয় চূড়া জয়ের নেশায় দুই তরুন হাজির হন পেরুতে। সেই পর্বতশৃঙ্গ বিখ্যাত ছিল তার অনুনেমেয় আবহাওয়ার জন্য। ক্ষণে ক্ষণে তীব্র তুষার ঝড় ছিল সেখানকার স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য। কিন্তু এই তরুন দুই বন্ধু, ঠিকই জয় করলেন সেই পর্বত শীর্ষ। কিন্তু বিপত্তি বাঁধল সেখান থেকে ফিরে আসার সময়। কিছুটা নেমে আসার পর এক তুষার ঝড়ের সময়ে সিম্পসন এক তুষার ধসে ভারসম্য হারিয়ে ফেলেন, ফলে তিনি প্রাণে বেঁচে গিয়ে মাউণ্টেন রোপে ঝুলে থাকেন, কিন্তু পা ভেঙ্গে ফেলেন এক পা। এই অবস্থায় সিমন অনেক কসরত করার পর যখন বুঝতে পারেন বন্ধুকে বাঁচাতে গেলে তার নিজের প্রাণ রাখা দায়, তখন সকল ভালবাসা আর বন্ধুত্ব বিসর্জন দিয়ে তিনি সেই দড়ি কেটে দিয়ে বন্ধুকে চিরনিদ্রার জগতে ছুঁড়ে দেন। 

কিন্তু কথায় আছে না, রাখে আল্লাহ্‌ মারে কে? সিম্পসন গিয়ে পড়েন এক গিরি ফাটলের ভেতর যেখানে শুধু রয়েছে জমাট বরফের সব চাই। সেখান থেকে ভাঙ্গা পা নিয়ে কীভাবে বেঁচে ফিরেছিলেন তিনি এই নিয়ে উপজীব্য করে গড়ে উঠেছে এই সিনেমাটি। পুরো সিনেমা দেখে শেষের দিকে এসে আপনার চোখ হতে জল গড়াবে কি না জানিনা, আমার কিন্তু গড়িয়েছে।

পুরো সিনেমা (বা বলতে পারেন ডকুমেন্টারি) জুড়ে সিম্পসন এবং সিমন পৃথক পৃথক ভাবে সেই অভিযানের বর্ণনা দিয়েছেন। এই অভিযানে সিম্পসন তার শরীরের ওজনের এক তৃতীয়াংশ হারিয়ে ফেলেন। দুই বছরে ছয়বার অপারেশন থিয়েটারের নীচে যেতে হয়েছিল তাকে স্বাভাবিক হয়ে উঠতে। কিন্তু তাতে কিন্তু দমে যাননি উনি, পরে আবার বেড়িয়ে পড়েছেন পর্বতাহরণে এবং আরও অনেকবার চরেছেন পর্বত শীর্ষে। কিন্তু সেই ঐতিহাসিক অভিযান সম্পর্কে বলতে গিয়ে, ক্ষণে ক্ষণে তারা আবেগাপ্লুত হয়েছেন, আপনিও দেখতে দেখতে সেরকমই হবেন বলে বিশ্বাস করি। চমৎকার বিনির্মাণ আপনাকে পদে পদে রোমাঞ্চিত করবে সেই লোমহর্ষক অভিযানের কথা মনে করিয়ে দিয়ে। 

দেশে ফিরে কিন্তু সিমন’কে ব্যাপক সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়েছিল। যাই হোক, সেই অভিযান ছিল একমেবিদ্বিতীয়ম, তার সমতুল্য অভিযানের কথা আজও শোনা যায় কম। পর্বতাহরণ ভুবনে সর্বকালের আলোচিত পর্বতাহরণ হিসেবে বিবেচিত এই অভিযান কাহিনী নিয়ে প্রথমে রচিত হয় একটি বই, নামঃ Touching The Void, Joe Simpson। ব্যাপক সাফল্য পাওয়া এই বইয়ের চিত্রায়িত রূপই হচ্ছে এই ডকুমেন্টারি টাইপ মুভিটি। 

মুভি সম্পর্কিত কিছু তথ্যঃ
• Initial release: January 23, 2004 (USA)
• Director: Kevin Macdonald
• Produced by: John Smithson
• Running time: 1h 46m
• Adapted from: Touching the Void
• Awards: BAFTA Award for Best British Film
• IMDb: Rating: 8.1/10 

মুভি রিভিউ The Perfect Wave (2014) (Adventure & Travel Movie Review - পর্ব ০১)

তো বন্ধুরা? কবে দেখছেন এই মুভিটি?

Translate

বোকা পর্যটকের কথা

মানুষ যেমন হঠাৎ করেই কারো প্রেমে পড়ে, ঠিক তেমনই করে আমিও প্রেমে পড়েছি ভ্রমণের। আজব এক নেশায় নেশাগ্রস্থ, কবে থেকে জানি না। তবে নিজের আর্থ-সামাজিক অবস্থানে লড়াই করে টিকে থাকার পর ভ্রমণে মনঃসংযোগ করতে উদ্যত হই। সেই থেকে যখনই সময়-সুযোগ হয় বেড়িয়ে পড়ি ঘর হতে, ভ্রমণের তরে। মজার ব্যাপার হল, আমি সাইক্লিস্ট নই, সাঁতার কাটতে পারি না, না পারি ট্র্যাকিং, হাইকিং, ক্লাইম্বিং। কোন ধরণের এডভেঞ্চারধর্মী কোন গুণই আমার নেই, শুধু আছে ভ্রমণের শখ আর অদম্য ইচ্ছাটুকু। আর সেই ইচ্ছা থেকেই সময় সময় আমার ঘুরে বেড়ানো আর সেই গল্পগুলো লিপিবদ্ধ করে রাখা এই ডায়েরীতে। আমার এই লেখাগুলো বিভিন্ন সময়, বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে এবং ব্যক্তিগত ডায়েরীতে লেখা ছিল; সেগুলো সব একত্রে সংরক্ষণ করে রাখার নিমিত্তেই এই ব্লগ। যদি আপনাদের কারো এই লেখাগুলো কোন কাজে লাগে তবে আমার পরিশ্রম কিছুটা হলেও সার্থক হবে।

পোস্ট সংরক্ষণাগার

যোগাযোগ ফর্ম

প্রেরণ