কুল্লু তিব্বতীয় মনস্ট্রি ভ্রমণ
সকালবেলা কুল্লু মানিকারান যাওয়ার পথে আমাদের রাস্তাটি ছিল বিয়াস নদীর পাশ ঘেঁষে, মাঝখানে পাথুরে বিয়াস নদী আর তার দুপাশে পিচঢালা পাহাড়ি চমৎকার রাস্তা। তো এই রাস্তা ধরে যাওয়ার সময় একটা স্থানে রাস্তার অপর পাশে খুব সুন্দর একটা তিব্বতীয় মনস্ট্রি দেখতে পেলাম। আমাদের ড্রাইভার কাম গাইড বিপিন'কে জিজ্ঞেস করলে বললো ওটা আমাদের ভ্রমণ লিস্টে নাই। কিন্তু আমি যে যেতে চাই, আমার ইচ্ছেটা জানাতে সে বললো প্রায় ত্রিশ কিলোমিটারের উপর অতিরিক্ত জার্নি হবে, যার জন্য আলাদা পেমেন্ট করতে হবে। কত? দশ রুপি প্রতি কিলো!!! হাসবো নাকি কাঁদবো? ব্যাটা মাত্র তিন চার'শত রুপী বাঁচাতে এটা মিস করবো? তাকে জিজ্ঞেস করলাম, বোট রাফটিং করে কুল্লু-মানিকারান এর উষ্ণ প্রস্রবণ দেখে ফেরার সময় এটা দেখার পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যাবে কি না? সে বলল, তার দেয়া টাইম টেবিল মেইনটেইন করলে সম্ভব। আমরা বললাম, জো হুকুম জাহাপনা। 😁
তো সকালবেলা বোট রাফটিং করে চলে গিয়েছিলাম কুল্লস্থ মানিকারান উষ্ণ প্রস্রবণ'কে ঘিরে গড়ে ওঠা লাগোয়া হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মন্দির এবং শিখ ধর্মাবলম্বীদের গুরুদুয়ারা দেখতে। সেই গল্প পড়তে পারবেন এখান থেকেঃ কুল্লু মানিকারান ভ্রমণ । সেখান থেকে ফেরার সময় আমরা এলাম সেই কুলু তিব্বতীয় মনস্ট্রি দেখতে, নাম “HIMALAYAN NYINMPA BUDDHIST MONASTERY” যা KAIS Monastery of Kullu নামেও পরিচিত। এই মনস্ট্রিটি অধুনা তৈরি, ২০০৫ সালের মে মাসে দালাই লামা এটা উদ্বোধন করেন। বিয়াস নদীর তীরে অবস্থিত এই মনস্ট্রি হতে ছবির মত পাহাড়ি উপত্যকা, বিয়াস নদী আর সুদূরের পাহাড় সারি দেখলে আপনি সেখান হতে দৃষ্টি সরাতে পারবেন না। তাই সেখানে ঢুঁকে আমার সাথীরা যখন পুরো মনস্ট্রি ঘুরে ঘুরে ছবি তোলায় ব্যস্ত, আমি তখন একটা বেঞ্চে বসে প্রকৃতির রূপসুধা পানে মত্ত। কিন্তু হঠাৎ চেয়ে দেখি কালো রঙের ইয়া বড় এক কুকুর তার ধারালো দাঁত আর জিহবা বের করে আমার থেকে হাত তিনেক দূরে দাঁড়িয়ে আছে! আমি ভয়ে জমে গেলাম, আশেপাশে কেউ নেই যে আমাকে সাহায্য করে। কি করি ভেবে যখন পেরেশান, তখনই একজন বৌদ্ধ ভিক্ষু টাইপ ছাত্র সেখান দিয়ে যাচ্ছিল, আমাকে দেখে বুঝল আমি ভয় পাচ্ছি। সে এগিয়ে এসে কুকুরটাকে ধরে নিয়ে গেল, কুকুর ব্যাটা নড়তে চায় না... তাকে কসরত করে সরানো হল, আমি জলদি করে দলের সাথে ভিড়ে গেলাম। সেখানে থেকে যখন বের হচ্ছিলাম, তখনও দেখি সেই কুকুর আমার দিকে চেয়ে আছে, যেন সুযোগ পেলেই ঝাঁপিয়ে পড়বে।
এই মনস্ট্রি কুলু হতে প্রায় দশ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এটি এমন একটা স্থানে নির্মাণ করা হয়েছে যে, বিয়াস নদীর উভয় প্রান্ত থেকে এর পূর্ণ ভিউ পাওয়া যাবে। তিনদিকে সবুজ পাহাড়ে ঘেরা, সামনে বয়ে চলা বিয়াস, তার অপর পাশে আবার পাহাড়ের সারি উপত্যকা শেষে, মাথার উপর সুবিশাল নীলাকাশ... ভেবে দেখুন কি অপূর্ব। আসলে ছবিতে পুরোটা একসাথে ধরা সম্ভব না। এই মনস্ট্রি নির্মাণ করা হয় তিব্বতীয় জনগনের কালচার এবং ধর্ম বিকাশে ভুমিকা রাখতে, যার জন্য দালাই লামা বিশেষভাবে ভারতীয় সরকার এবং হিমাচল প্রাদেশিক সরকারকে ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। এক জমকালো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এর সূচনা হয়েছিল, যেখানে তিব্বতীয় নানান গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি থেকে শুরু করে স্থানীয়রা অংশগ্রহণ করে। বর্তমানে বিশ্বের নানান প্রান্ত থেকে পর্যটকের দল মানালি আসলে অতি অবশ্যই এখানে ঢুঁ মারতে ভুল করে না।
মন্তব্যসমূহ