৯,০০০ টাকায় উড়িষ্যায় উড়াউড়ি, থুক্কু ঘোরাঘুরি, কোনার্ক টু পুরি
কিভাবে যাবেনঃ ঢাকা থেকে প্রথমেই কলকাতা। এটা নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই, কমবেশী সবাই জানেন এবং আমার আগের নোটগুলোতেও এ নিয়ে লেখা হয়েছে। ঢাকা থেকে বাস বা ট্রেনে যশোহর বা বেনাপোল হয়ে পেট্রাপোল থেকে বাই বাস অথবা বনগাঁ স্টেশন থেকে ট্রেনে কলকাতা। এই রুটে আপনি ১০০০-১৫০০ টাকার মধ্যে খুব সহজেই পৌঁছে যাবেন কলকাতা। কলকাতা হতে বাস/ট্রেন/বিমান; প্রতিটি যোগেই আপনি উড়িষ্যার রাজধানী ভুবনেশ্বর পৌঁছে যেতে পারবেন। প্রতিদিন প্রায় ষাটটি ফ্লাইট যাতায়াত করে কলকাতা থেকে ভুবনেশ্বর; যেগুলোর সর্বনিম্ন ভাড়া বাংলাদেশী টাকায় দু’হাজার এর মধ্যে পেয়ে যাবেন। কলকাতা থেকে ভুবনেশ্বর বা পুরির উদ্দেশ্যে প্রতিদিন বিশ থেকে পঁচিশটি ট্রেন ছেড়ে যায় সারাদিন ব্যাপী; ভাড়া ২৯০ রুপী স্লিপার ক্লাস থেকে শুরু। এছাড়া বাসে করেও যেতে পারবেন ভুবনেশ্বর বা পুরি। কলকাতা থেকে বাসুদেব ট্রাভেলস, ডলফিন ট্যুরস এন্ড ট্রাভেলস, গ্রান্ড ট্রাভেলস, দাশ ট্রাভেলস, জাগাকালিয়া ট্রাভেলস, মহাপাত্রা ট্রাভেলস, প্রাধান ট্রাভেলস, নীলমাধব ট্রাভেলস, রয়েল ক্রুজার, গ্রীনলাইন, অরোশিষ প্রভৃতি কোম্পানির এসি-নন এসি ভলভো স্লিপার, সেমি-স্লিপার, সিটার বাস চলাচল করে। ভাড়া ৪০০ রুপি থেকে শুরু করে ১৫০০ রুপী পর্যন্ত রয়েছে।
কোথায় থাকবেনঃ উড়িষ্যা ভ্রমণ এর জন্য আপনি দুটি স্থানের যে কোন একটি বেঁছে নিতে পারেনঃ ভুবনেশ্বর অথবা পুরি। আমি পছন্দ করবো পুরি; কারন সৈকত এর ধারে ভাল দেখে বাজেটের মধ্যে হোটেল খুঁজে নিয়ে এখানে ডেরা ফেলে চষে বেড়ানো যাবে উড়িষ্যার নানান স্পটে। ৫০০ রুপী থেকে শুরু করে ২৫,০০০ রুপী বাজেটের মধ্যে হোটেল রয়েছে পুরি শহরে এবং এর সৈকত এলাকায়। যাই হোক আপনার পছন্দ মাফিক কোন একটি হোটেল বুক করে নিন booking.com; agoda, Goibibo ‘র মত অনলাইন বুকিং সাইটগুলো হতে। আমি পছন্দ করবো OTDC (Odisha Tourism Development Corporation) এর Puri Panthanivas হোটেল এর কাছাকাছি কোন একটা হোটেল। কেননা এই পান্থনিবাস হোটেল হতেই আমাদের সাইট সিয়িং এর OTDC’র টুরিস্ট বাস প্রতিদিন সকালবেলা ছেড়ে যায়।
কি কি দেখবেনঃ উড়িষ্যাকে বলা হয়ে থাকে মন্দিরের শহর। এর পরতে পরতে রয়েছে মন্দির যার সবগুলোই “কালিঙ্গা স্থাপত্য রীতি”তে তৈরী। উড়িষ্যা মূলত এর মন্দির এবং সমুদ্র সৈকত এর জন্য বিখ্যাত। এছাড়া প্রতি বছর ০১-০৫ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় Konar Festival এবং International Sand Art Festival। এই দুটি উৎসবই একই সময়ে অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও সারা বছরের যে কোন সময়েই আপনি উড়িষ্যা ভ্রমণ করতে পারেন। উড়িষ্যার মূল পর্যটন আকর্ষনগুলোর মধ্যে রয়েছেঃ Ramachandi, Chandrabhaga, Konark Temple, Dhauli, Bhubaneswar Temples ( Lingaraj, Kedargouri, Sidheswar), Khandagiri- Udayagiri cave & Nandankanan Zoo, Chilika Lake(Satapada) , Pipli।
কি কি দেখবেনঃ আপনি পুরি হতে OTDC’র দুদিনের দুটি প্যাকেজ নিয়ে এই সবকয়টি ঘুরে দেখতে পারি শুধু পিপলি ছাড়া। যদি ভুবনেশ্বর থাকেন, তাহলে সেখান থেকেও রয়েছে একই রকমের ট্যুর প্যাকেজ। OTDC’র প্রতিদিনের ট্যূরিস্ট বাসের প্যাকেজ এর বিবরণ এবং মূল্য পাবেন এই লিংকেঃ https://visitodisha.org/tour/ । চাইলে অনলাইনে বুকিং করে নিতে পারেন আগে থেকেই আপনার ইন্টারন্যাশনাল ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে।
খাওয়া দাওয়াঃ উড়িষ্যাতে খাবার নিয়ে আপনার তেমন ঝামেলা হবে না। ভারতীয়, বাঙ্গালী, ভেজ-ননভেজ, চাইনিজ, ফাস্টফুড সব ধরনের খাবার দাবারই পেয়ে যাবেন পুরি অথবা ভুবনেশ্বর শহরে। জনপ্রতি ১০০-১৫০ রুপীতে দুপুর আর রাতের খাবার প্রতিবেলায় ভালভাবেই হয়ে যাবে। সকালের নাস্তায় ৫০-৬০ রুপী; চা ০৫-১০ রুপী।
একটি খসড়া প্ল্যান ও বাজেট (অবশ্যই কম খরচে)
দিন ০০ঃ ঢাকা থেকে রাতের ট্রেনে যশোর অথবা বাসে সরাসরি বেনাপোল। সারারাত বাস জার্নি।
দিন ০১ঃ খুব ভোরবেলা পৌঁছে যাবেন বেনাপোল বর্ডার। সেখান থেকে দুই দেশের ইমিগ্রেশন শেষে শেয়ার অটো করে বনগাঁও হয়ে ট্রেনে কলকাতা। দুপুর নাগাদ বা বিকেলের মধ্যে (যদি খুব বেশী জ্যাম বা লেট হয়) কলকাতা নিউমার্কেট এলাকায় পৌঁছে যাবেন। সেখানে চাইলে ঘোরাঘুরি করে বা টুকটাক শপিং করে সময় কাটিয়ে রাতের ডিনার করে চলে আসুন ইডেন গার্ডেনের পেছনের বাবুঘাট এলাকায়। সেখান হতে রাত এর বাসে করে রওনা হয়ে যান পুরির উদ্দেশ্যে। সারারাত বাস জার্নি।
দিন ০২ঃ সকাল সাতটা/আটটা নাগাদ পুরি পৌঁছে যাবেন। আগে থেকে হোটেল বুক করে গেলে সোজা হোটেলে চেকইন করে নিন। পুরিতে হোটেল চেকইন সকাল আটটায় আর চেকআউট সকাল সাতটায়। অনুরোধে এই সময় আগপিছ করা যায়, হোটেলের রুম বুকিং এর উপর নির্ভর করে। আর হোটেল বুক করা না থাকলে বাস স্ট্যান্ড হতে অটোরিকশা করে চলে আসুন পুরি পান্থনিবাস (৫০/৬০ রুপী অটোরিকশা ভাড়া); এরপর আপনার বাজেটের মধ্যে হোটেল খুঁজে বের করে নিন এর আশেপাশের এলাকায়। প্রথম দিন আপনার ফ্রি টাইম। হোটেলে এসে ফ্রেশ হয়ে চলে যান সমুদ্র সৈকতে। চাইলে পুরি হতে লোকাল বাসে করে কোনার্ক চলে যান (৩০ রুপী ভাড়া); সময় নিয়ে ঘুরে দেখুন ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ Konark Sun Temple। বিকেলবেলা পুরি শহরে ঘুরে দেখতে পারেন। রাত্রি যাপন পুরি হোটেলে।
দিন ০৩ঃ সকাল সাড়ে ছয়টা নাগাদ পুরি পান্থনিবাস হতে বাস ছেড়ে যাবে Konark to Dhauli & Bhubaneswar এর জন্য। আগের দিনই টিকেট করে রাখুন, ৫১০ রুপী জনপ্রতি খরচ হবে এই টুরিস্ট বাসের টিকেট এর জন্য। এর বাইরে প্রায় ১৮০-২০০ রুপী খরচ পড়বে বিভিন্ন স্থানের এন্ট্রি ফি বাবদ। সারাদিন এসি বাসে করে আপনি ঘুরে দেখবেন Ramachandi, Chandrabhaga, Konark Temple, Dhauli, Bhubaneswar Temples ( Lingaraj, Kedargouri, Sidheswar), Khandagiri- Udayagiri cave & Nandankanan Zoo। দুপুরের খাবারের জন্য বিরতি দিবে OTDC’র হোটেলে; সেখানে খাবার খেয়ে নিন। অতিরিক্ত দাম রাখে না। ১২০-১৫০ রুপীর মধ্যে মাছ-ভাত-সব্জির থালি পেয়ে যাবেন। সন্ধ্যের পর হোটেলে ফিরে অবসর সময়। রাত্রি যাপন পুরি হোটেলে।
দিন ০৪ঃ এদিন সকালবেলা হোটেল হতে চেক আউট করে ব্যাগ রিসিপশনে রেখে দিন। সকাল সাতটা নাগাদ আজকের ভ্রমণ এর টুরিস্ট বাস ছেড়ে যাবে সেই পান্থনিবাস থেকে Chilika Lake (Satapada)’র উদ্দেশ্যে। টুরিস্ট বাসের টিকেট ৩৫৫ রুপী। আর বোট রাইড টু ডলফিন ট্রিপ এর জন্য আরও ৩০০-৩৫০ রুপী খরচ আছে। আগের দিনের মতই লাঞ্চ এর ব্যবস্থা থাকবে, একই খরচে লাঞ্চ সেরে নিতে পারবেন। সন্ধ্যের পর পুরি ফিরে এসে হোটেল হতে ব্যাগপত্তর নিয়ে বাস স্ট্যান্ড চলে যান রাতের বাস ধরতে; কলকাতা উদ্দেশ্যে। সারারাত বাস জার্নি।
দিন ০৫ঃ কলকাতা এসে পৌঁছবেন সকালবেলা। বাস হতে নেমে নিউমার্কেট এলাকায় চলে যেতে পারেন পেট্রাপোলগামী বাস ধরতে; ২৫০-৩০০ রুপী ভাড়ায় চলে আসতে পারেন বর্ডার। এরপর বর্ডার পার হয়ে যশোর হয়ে ঢাকার বাস ধরুন। চাইলে ভেঙ্গে ভেঙ্গে আপনার মত করে ফিরতে পারেন ঢাকায়। রাতের মধ্যে ঢাকায় পৌঁছে যান।
খরচের হিসাবঃ
- বাস ভাড়া (ঢাকা-কলকাতা-ঢাকা) ২,০০০ টাকা
- বাস ভাড়া (কলকাতা-পুরি-কলকাতা) ১,৫০০টাকা
- দুই রাতের হোটেল ভাড়া (জনপ্রতি) ১,২০০ টাকা
- দুই দিনের সাইট সিয়িং ১,৮০০ টাকা
- খাওয়া খরচ (১৫ বেলা) ১,৮০০ টাকা
- ট্রাভেল ট্যাক্স এবং অন্যান্য ৭০০ টাকা।
সর্বমোটঃ ৯,০০০ টাকা।
মন্তব্যসমূহ