মায়াবী ক্ষণে কাট্টলী সৈকতের বালুকাবেলায় (গানে গানে ছবিব্লগ)

#
চট্টগ্রাম গিয়ে বৃষ্টির খপ্পরে আটকা পড়েছিলাম সকাল থেকে, দুপুরের দিকে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি আর কালো মেঘের ঘনঘটা মাথার উপর সাথে নিয়ে চলে এলাম কাট্টলী সৈকতে, স্থানীয় ভাষায় যাকে ফইল্লাতলী বা জেলেপাড়া বলা হয় সেই এলাকা সংলগ্ন সৈকতে। অধুনা এই সৈকতকে সাগরিকা সৈকত বলেও অনেকে সম্বোধন করে থাকেন, কারণ চট্টগ্রামের সাগরিকা বাসস্ট্যান্ড হতে যে রাস্তাটা জহির আহমেদ স্টেডিয়ামের দিকে চলে গেছে সেই রাস্তা ধরে এগিয়ে গেলেই আপনি চলে আসবেন এই কাট্টলী সমুদ্র সৈকতে। পাড় হতেই চোখে পড়বে জেলে নৌকা আর জেলেদের মাছ ধরার নানান কর্মকাণ্ড। তো সেদিন বৃষ্টি আর কর্দময় পিচ্ছিল পথ পেড়িয়ে সৈকতের বালুকেবেলায় কিছুটা সময় কাটিয়ে চলে আসতে হল। তিনদিন পর আবার গেলাম, পড়ন্ত বিকেলে, সূর্যাস্ত উপভোগ করতে, ছিলাম সন্ধ্যা পর্যন্ত। আসুন দেখি সেই মায়াময় সময়ের কিছু আলোকচিত্র, সাথে কিছু গানের কলি গুণগুণ করে গাইতেই পারি, তাই না?
"আমার ভাঙ্গা তরী ছেড়া পাল
চলবে আর কত কাল
ভাবি শুধু একা বসিয়া রে দয়াল,
এভাবে আর চলবে কতকাল.
তরী কিণারায় ভিড়াইয়া
ভাবি শুধু কাদিয়া।"

"আমার আকাশে মেঘেরা 
আজও এসে ফিরে যায়
শ্রাবণ হয়ে ঝরে পড়ে
মনেরও আঙ্গিনায়
আমার নদীতে নাওয়েরা
আজও একা ভেসে যায়
সাগর পানে ছুটে চলে 
তোমারই প্রতিক্ষায়।"

"দূরে তুমি দাঁড়িয়ে
সাগরের জলে পা ভিজিয়ে
কাছে যেতে পারি না
বলতে আজ পারিনা
তুমি আমার এখনো..."

সৈকতে যাবার পথে এই জহুর আহমেদ স্টেডিয়ামকে পাশে রেখে বামের সরু পথ দিয়ে চলে যেতে হবে...
  

"আকাশের নীল মেঘ
সাগরের সফেদ নীল জল
আর তীরে থাকা এই সবুজ ঘাস
হোক তব আমাদের ভালবাসার
হেথায় নিত্য আবাস..."

"আজ যে শিশু পৃথিবীর আলোয় এসেছে
আমরা তার তরে একটি সাজানো বাগান চাই,
আজ যে শিশু মায়ের হাসিতে হেসেছে
আমরা চিরদিন সেই হাসি দেখতে চাই।"


"এক পায়ে নূপুর তোমার
অন্য পা খালি
এক পাশে সাগর
এক পাশে বালি
আমার ছোট তরী
বল যাবে কি..."

"আবার এলো যে সন্ধ্যা,
শুধু দু'জনে...
চলো না ঘুরে আসি অজানাতে...
যেখানে নদী এসে থেমে গেছে।"

"আমি শুনেছি সেদিন তুমি
সাগরের ঢেউয়ে চেপে
নীলজল দিগন্ত ছুঁয়ে এসেছো,
আমি শুনেছি সেদিন তুমি
নোনা বালি তীর ধরে
 বহু দূর বহু দূর হেটে এসেছো।
আমি কখনো যাই নি জলে
কখনো ভাসিনি নীলে
কখনো রাখিনি চোখ ডানা মেলা গাংচিলে
আবার যেদিন তুমি সমুদ্র স্নান -এ যাবে
আমাকে ও সাথে নিও
নেবে তো আমায়?
বল নেবে তো আমায়...।"

"তুমি যদি নদী হও
আমি হব জেগে থাকা চর
তুমি যদি গতি হও
আমি হব অনন্ত পথ।
আমার চাতক চোখে
তুমি হবে দূরের আকাশ
তুমি লাজ রাঙ্গা গোধূলী
হলে আমি হব সন্ধ্যা কবি
আবীর রং এ রাখবো তুলে
তোমার লাজুক হাসি
তুমি যদি নদী হও
আমি হব জেগে থাকা চর
যদি তুমি সাগর নুরি হও
আমি হব ঝিনুক সৈকত
যদি তুমি রাতের আঁধার হও
আমি হব প্রভাত পাঞ্জেরী।"

"একাকী মন আজ নীরবে
বিবাগী তোমার অনুভবে
ফেরারী প্রেম খোঁজে ঠিকানা
আকাশে মেঘ মানে বোঝো কিনা
বিরহ নীলে নীলে বাঁধে বাসা অজানা
ব্যথায় অধরা তারাগুলো কাঁদে
বেদনায় খেয়ালী তুমি কোথায়।"

"একটা ছেলে মনের আঙিনাতে
ধীর পায়েতে এক্কা-দোক্কা খেলে
বন পাহাড়ি ঝর্ণা খুঁজে
বৃষ্টি জলে একলা ভিজে
সেই ছেলেটা আমায় ছুঁয়ে ফেলে
আমি তো বেশ ছিলাম চুপিসারে
ছোট্ট মেয়ে সে যে একটা কোণে
সবুজ বনে নীলচে আলো জ্বেলে
স্বপ্ন ভেজা মাটিতে পা ফেলে..."

"দখিনা হাওয়া ঐ তোমার চুলে
ছুঁয়ে ছুঁয়ে যায় এলোমেলো করে
কয়েকটি চুলে ঢেকে যায়
তোমার একটি চোখ
আমি ভুলে যাই তুমি আমার নও
একাকী নীরবে এগিয়ে পিছিয়ে
চেয়েছি কত বলতে
খুঁজেতো পাইনি না বলা কথাটি
হারানো দিনের গল্পে
আমি ভুলে যাই,
আমি হেরে যাই
আমি ভুলে যাই তুমি আমার নও
তুমি আমার নও, তুমি আমার নও।"

"শোন ও প্রিয়া কত যতনে
একেছি যে তোমায় আমার এই মনে
কি জাদু তোমার প্রেমে
কি জাদু তোমার চোখে
নিরবে এসে দিয়েছ দোলা
মৃদু হাওয়ার মত আমার এই মনে
কি জাদু তোমার প্রেমে
কি জাদু তোমার চোখে।"

"কখনো ইচ্ছে হয় সারাটি বেলা
ভেজাব এই দুটি মন ঐ নীল জোছনায়,
নিঃশব্দ তুমি আর নিঃশব্দ আমি
কেটে যাবে অনন্ত কাল হৃদয় মোহনায়।
আবেগ জড়ানো রংঙ্গীন সুতোয় গাথা
মাঝে মাঝে একটু দুটো কথা ..."

"সেই তুমি কেন এত অচেনা হলে
সেই আমি কেন তোমাকে দুঃখ দিলেম
কেমন করে এত অচেনা হলে তুমি
কিভাবে এত বদলে গেছি এই আমি
ও বুকের সব কষ্ট দু'হাতে সরিয়ে
চল বদলে যাই... 
তুমি কেন বোঝনা
তোমাকে ছাড়া আমি অসহায়
 আমার সবটুকু ভালবাসা তোমায় ঘিরে
আমার অপরাধ ছিল যতটুকু তোমার কাছে
তুমি ক্ষমা করে দিও আমায়..."

"আকাশনীলা তুমি বল কিভাবে
আমার শুন্য মনে সুখ ছড়াবে?
এমন করে কি তবে ভেবেছ আগে?
ভালবাসা দিয়ে শুধু ভুল ভাঙ্গাবে..."

"হৃদয়...
কাদা মাটির কোন মূর্তি নয়
আঘাত দিলেই ভেঙে যাবে
মন...
উড়ন্ত কোন বেলুন নয়
হুল ফোটালেই চুপসে যাবে।
শুকনো মাঠে ফুল ফোটানো সারাবেলার খেলা 
শূন্যতার মাঝে গড়ি বীনিসূতোর মালা
বুকের মাঝে ভালোবাসা থাকবে জীবনময়।"

"প্রতিটি রাস্তায় প্রতিটি জানালায়
হাসিমুখ, হাসিমুখে আনন্দধারা।
তুমি চেয়ে আছ তাই,
আমি পথে হেটে যাই,
হেটে হেটে বহুদূর, বহুদূর যেতে চাই।
রোদ উঠে গেছে তোমাদের নগরীতে
আলো এসে থেমে গেছে তোমাদের জানালায়,
আনন্দ হাসিমুখ, চেনা চেনা সবখানে
এরই মাঝে চল মোরা হারিয়ে যাই।"

"তুমি আকাশের বুকে বিশালতার উপমা
তুমি আমার চোখতে সরলতার প্রতিমা
আমি তোমাকে গড়ি ভেঙ্গে চুড়ে শতবার
রয়েছো তুমি বহুদুরে আমাকে রেখে ছলনায়
এ হৃদয় ভেঙ্গে গেলে জানো কি তা
লাগে না লাগে না জোড়া
লাগে না লাগে না জোড়া..."

"একদিন ঘুম ভেঙ্গে দেখি
সুখের সমদ্র শুকিয়ে গেছে
জীবনের কল্পনা নিস্প্রান দেহ হয়ে
শুকনো বালুর বুকে পড়ে আছে।
নীল নেই আকাশে নেই কোন নীল
ভাসে না চোখে আর আলো ঝিলমিল
শুভ্র মেঘগুলি কালো শাড়ি পড়ে
উড়ায় বিষাদের আচল।
সূর্যটা যেন আজ আড়ালে লুকিয়ে
থেকে থেকে দেয় উকি।
একদিন ঘুম ভেঙ্গে দেখি..."

"মন শুধু মন ছুঁয়েছে
ও সেতো মুখ খুলেনি
সুর শুধু সুর তুলেছে
ভাষা তো দেয় নি... 
চোখের দৃষ্টি যেন মনের গীতি কবিতা
বুকের ভালোবাসা যেথায় রয়েছে গাঁথা
আমিতো সেই কবিতা পড়েছি
মনে মনে সুর দিয়েছি
কেউ জানে নি… মন শুধু মন ছুঁয়েছে..."

"কে প্রথম কাছে এসেছি?
কে প্রথম চেয়ে দেখেছি?
কিছুতেই পাই না ভেবে
কে প্রথম ভালবেসেছি?
তুমি? না আমি?
ডেকেছি কে আগে? 
কে দিয়েছে সারা?
 কার আনুরাগে, কে গো দিশাহারা...."

"যেখানে সীমান্ত তোমার
সেখানে বসন্ত আমার
ভালোবাসা হৃদয়ে নিয়ে
আমি বারে বার আসি ফিরে
ডাকি তোমায় কাছে।
হাজার ফুলে ছেয়েছে যে পথ
আমি চিনি চিনি সে ঠিকানা
তোমার মনের নীরব ভাষা
সেও তো আমার আছে জানা।
আমিতো চাইনা তোমার এ দ্বিধা
ভেঙ্গে দাও কাঁচেরই বাঁধা
সীমার বাঁধন ছিঁড়ে তুমি
ধরা দাও আমারই কাছে...."

"আজ তোমার মন খারাপ মেয়ে
তুমি আনমনে বসে আছো
আকাশ পানে দৃষ্টি উদাস
আমি তোর জন্য এনে দেব
মেঘ থেকে বৃষ্টির ঝিরি ঝিরি হাওয়া
সে হাওয়ার ভেসে যাবে তুমি।
আজ তোমার চোখের কোনে জল
বৃষ্টি অবিরাম কাঁদে
তোমার সাথে সাথে আমার পথে পথে।
আমি তোমার জন্য এনে দেব
রোদেলা সে ক্ষণ
পাখিকে করে দেব তোমার আপন জন
পরী তুমি ভাসবে মেঘের ভাঁজে
আজ তোমার জোছনা হারায় আলোয়
প্রজাপতির ডানায় বিষাদ করে ভর
যখন তখন বিষাদ করে ভর
আমি তোমার জন্য এনে দেব
অঝর শ্রাবন আকাশ ছোয়া জলে জোছনা
পরী তুমি ভাসবে মেঘের ভাঁজে।"

"ওরে নীল দরিয়া...
 আমায় দেরে দে ছাড়িয়া।
বন্দী হইয়া মনোয়া পাখি,
হায়রে কান্দে রইয়া রইয়া।
কাছের মানুষ দুরে থুইয়া,
মরি আমি ধড়-ফড়াইয়ারে।
দারুন জ্বালা দিবানিশি, অন্তরে অন্তরে।
আমার এত সাধের মন বধূয়া হায়রে
কি জানি কি করে..."

"আকাশের নীলে
হৃদয়ের তুলিতে
তোমায় একে যাই
নীল বেদনায়
হৃদয়ের আলোয়
তারার দ্বীপ জ্বেলে
জেগে রয়েছি
তোমার ই দুচোখে
যত দুরে রয়ে যাও
আমার ই হয়ে রও
তোমার ই জগতে
তোমার ই হাসিতে
কত বৃষ্টি ঝরে যায়
হৃদয়ের আঙ্গিনায়
সঙ্গীহীনতায়..."

"তোমরা কেউ কি দিতে পারো
প্রেমিকার ভালবাসা?
দেবে কি কেউ জীবনে
উষ্ণতার সত্য আশা?
 ভালবাসার আগে নিজেকে নিও বাজিয়ে,
আমার মনের মত নিও সাজিয়ে।
আমি বড় অসহায় অন্যপথে
একটি নাটকই দেখি, মহাকালের মঞ্চে...."
"দিন গেল তোমার পথ চাহিয়া
মন পোড়ে সখি গো কার লাগিয়া
সহে না যাতনা তোমারো আশায় বসিয়া
মানে না কিছুতে মন আমার যায় যে কাঁদিয়া
পুড়ি আমি আগুনে
দিন গেল তোমার পথ চাহিয়া।
যার লাগি তরী বেয়ে যাই
জীবন গতি সেই জনা কি রেখেছে খবর
কার তরে গান গেয়ে যাই
অচেনা সুরে বুঝি না কেবা আপন কে বা পর..."

"মনে কর যদি সব ছেড়ে হায়
চলে যেতে হয় কখনো আমায়
মনে রবে কি রজনী ভরে
নয়ন দুটি ঘুমে জড়াতে
নিশি রাতে কে গান শুনাতো?
তোমারি পথে ফুল ছড়ায়ে
কাঁটাগুলি কে দিতো সরায়ে।
হৃদয় ভরা মাধুরী নিয়ে
সাথে থেকে কে আশা জাগাতো।
মনে কর যদি সব ছেড়ে হায়..."

বাংলাদেশের সমুদ্র সৈকত নিয়ে আমার কিছু পোস্টঃ

  • বাংলাদেশের ডজন দেড়েক সমুদ্র সৈকত (মেগা পোস্ট)
  • চার চর আর তিন সৈকত - এ লাইফ টাইম মেমরেব্ল জার্নি
  • আকাশের নীলে, সাগরের নীলে, হৃদয়ের তুলিতে ( এ ট্রিপ টু সেইন্টমার্টিন আইল্যান্ড উইথ ভ্রমণ বংলাদেশ)
  • সোনার চরের সোনার কোল জুড়ে
  • চক্ষে আমার দারুচিনি দ্বীপ - ফটো ব্লগ (একটি মোবাইলীয় পোস্ট)
  • পারকি’র প্রেমে
  • স্বপ্নের সৈকতে এঁকে যাই পদচিহ্ন (প্রথম কিস্তি)
  • স্বপ্নের সৈকতে এঁকে যাই পদচিহ্ন (দ্বিতীয় কিস্তি)
  • তারুয়া সৈকতের বালুকাবেলায়
  • লাল কাঁকড়ার দেশে

Translate

বোকা পর্যটকের কথা

মানুষ যেমন হঠাৎ করেই কারো প্রেমে পড়ে, ঠিক তেমনই করে আমিও প্রেমে পড়েছি ভ্রমণের। আজব এক নেশায় নেশাগ্রস্থ, কবে থেকে জানি না। তবে নিজের আর্থ-সামাজিক অবস্থানে লড়াই করে টিকে থাকার পর ভ্রমণে মনঃসংযোগ করতে উদ্যত হই। সেই থেকে যখনই সময়-সুযোগ হয় বেড়িয়ে পড়ি ঘর হতে, ভ্রমণের তরে। মজার ব্যাপার হল, আমি সাইক্লিস্ট নই, সাঁতার কাটতে পারি না, না পারি ট্র্যাকিং, হাইকিং, ক্লাইম্বিং। কোন ধরণের এডভেঞ্চারধর্মী কোন গুণই আমার নেই, শুধু আছে ভ্রমণের শখ আর অদম্য ইচ্ছাটুকু। আর সেই ইচ্ছা থেকেই সময় সময় আমার ঘুরে বেড়ানো আর সেই গল্পগুলো লিপিবদ্ধ করে রাখা এই ডায়েরীতে। আমার এই লেখাগুলো বিভিন্ন সময়, বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে এবং ব্যক্তিগত ডায়েরীতে লেখা ছিল; সেগুলো সব একত্রে সংরক্ষণ করে রাখার নিমিত্তেই এই ব্লগ। যদি আপনাদের কারো এই লেখাগুলো কোন কাজে লাগে তবে আমার পরিশ্রম কিছুটা হলেও সার্থক হবে।

পোস্ট সংরক্ষণাগার

যোগাযোগ ফর্ম

প্রেরণ