কম খরচে কম সময়ে ঘুরে আসুন কুয়াকাটা


পায়রা সেতু উদ্বোধন এ কুয়াকাটার পর্যটন এ এনেছে নতুন সম্ভাবনা। 

সাম্প্রতিক সময়ে পায়রা সেতু উদ্বোধন এর পর ঘুরে এলাম কুয়াকাটা। কিছুদিন আগ পর্যন্ত, এমনকি এখনো অনেক পর্যটকই কুয়াকাটা ভ্রমণের ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও এড়িয়ে যান কুয়াকাটা’কে, শুধুমাত্র দূরত্বের এবং যাত্রার ঝক্কি ঝামেলা এড়াতে। নদীপথই বেশীরভাগ মানুষের কুয়াকাটা যাওয়ার প্রথম পছন্দ। ঢাকা হতে পটুয়াখালী, বরিশাল এবং আমতলী; এই তিনটি রুটের লঞ্চে করে পাড়ি দিয়ে বাকী পথ লোকাল পাবলিক বাস অথবা বিআরটিসি’র বাসে করে যেতে হয়। এক্ষেত্রে ঢাকা টু কুয়াকাটা মোট যাত্রাপথে সময় লেগে যায় ১২-১৪ ঘন্টার মত। আবার বাসে করে কুয়াকাটা গেলে ফেরীঘাটের দীর্ঘ লাইনে না পড়লে ১০-১২ ঘন্টা আর এর অন্যথায় হলে আরও বেশী সময় লেগে যায়। ফলে ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও এত ঝক্কি সামলে কুয়াকাটা যেতে চান না অনেকেই। কিন্তু গত ২৪ অক্টোবর পটুয়াখালীর লেবুখালী নদীতে নির্মীত পায়রা সেতু উদ্বোধন এর পর এই চিত্র অনেকটাই পাল্টে গেছে। কুয়াকাটা থেকে কাঁঠালবাড়ি ফেরীঘাট পৌঁছতে ব্যক্তিগত গাড়ীতে ০৪-০৫ ঘন্টা’র বেশী সময় লাগছে না। আর বিআরটিসি’র এসি বাস সার্ভিস রয়েছে কুয়াকাটা থেকে বরিশাল হয়ে কাঁঠালবাড়ি পর্যন্ত, জনপ্রতি ৬০০ টাকা মাত্র। বরিশাল বিআরটিসি’র ডিপোতে ২০ মিনিটের বিরতি এবং কুয়াকাটা থেকে বরিশাল পর্যন্ত বেশকিছু কাউন্টার এ থেমে যাত্রী উঠানো সত্ত্বেও মোট সময় লাগে ০৬ ঘন্টার মত। আর এপারে মাওয়া পৌঁছে এক্সপ্রেস হাইওয়ে ধরে বাবুবাজার সেতু দিয়ে ব্যক্তিগত গাড়ীতে ৪০ মিনিটে ঢাকা পৌঁছে যাওয়া যায়, যদি না কোন অস্বাভাবিক ট্রাফিক জ্যামে পড়তে হয়। পাব্লিক বাসে এক ঘন্টা লেগেছে। যাত্রাবাড়ী হয়ে কয়েকটি পরিবহনের এসি বাস রয়েছে এই রুটে, কিন্তু সেক্ষেত্রে যাত্রাবাড়ী-সায়েদাবাদ এর জ্যাম একটা সময় অপচয় করে দেয়। মাঝে রইলো ফেরী পারাপারের হ্যাপা। চাইলে স্পিডবোট সার্ভিস এ ১৫ মিনিটে নদী পাড়ি দিয়ে শিমুলিয়া-মাওয়া প্রান্তে পৌঁছে যেতে পারেন। আর স্বপ্নের পদ্মাসেতু চালু হয়ে গেলে এই হ্যাপা কমে যাবে। ফলে ঢাকা থেকে কুয়াকাটা চলে যাওয়া যাবে, ব্যক্তিগত গাড়ীতে ০৫ ঘন্টায় অনায়াসে, আর সরাসরি বাস সার্ভিস চালু হলে সর্বোচ্চ ০৬ ঘন্টায়। ফলে যে কোন ছুটির দিনের আগের রাতে (১১-১২টা’র দিকে) বাসে করে রওনা হয়ে ভোরবেলা পৌঁছে যেতে পারবেন কুয়াকাটা। আর রাত ০৯-১০টা’র গাড়ীতে রওনা দিলে, সূর্যোদয়ের আগেই পৌঁছে যাবেন কুয়াকাটা। এরপর সেখান হতে মোটর সাইকেল যোগে গঙ্গামতি’র চরে গিয়ে সূর্যোদয় দেখে আরও বেশ কয়েকটি পর্যটন স্পট, যার মধ্যে রয়েছেঃ কাউয়ার চর, লাল কাঁকড়ার চর, কুয়াকাটা বৌদ্ধ মন্দির, ঐতিহ্যবাহী শতবর্ষী নৌকা, বৌদ্ধ বিহার, মিষ্টি পানির কূপ, রাখাইন পল্লী ইত্যাদি ঘুরে দেখতে পারবেন। এইসব দেখে হোটেলে চেকইন করে বিশ্রাম নিয়ে চাইলে সমুদ্রের পানিতে পা ভিজিয়ে নেন। অথবা দুপুরের রোদ কিছুটা কমে আসা পর্যন্ত হোটেলে বিশ্রাম নিন, নিজের মত করে ঘুরে দেখুন আশেপাশের এলাকা। এরপর বিকেলের শুরুতেই বাইকে করে ফাতরার বন, ঝাউবন, লাল কাঁকড়া, লেবুর বন, শুটকি পল্লী দেখে সূর্যাস্তের রূপ উপভোগ করে ফিরে আসুন হোটেলে। চাইলে লেবুর বনের ওখানে সামুদ্রিক মাছের স্বাদ নিতে পারেন। অথবা সন্ধ্যার পর সামুদ্রিক মাছের স্বাদ নিতে চলে আসুন সৈকতের ডান পাশের “লাইভ ফিশ মার্কেটে”। কেনাকাটা করতে পারেন শুটকি, ঝিনুকের নানান পণ্যসহ আপনার পছন্দের জিনিষ, সৈকত সংলগ্ন মার্কেট হতে। এরপর রাতের খাবার খেয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিলে ভোরবেলা পৌঁছে যাওয়া যাবে ঢাকার ব্যস্ত কর্মজীবনে। আর হাতে সময় থাকলে রাত কাটিয়ে পরদিন সকালে হোটেল হতে চেক আউট করে দুপুরের গাড়ীতে রওনা দিতে পারবেন কুয়াকাটা হতে, খরচ বাড়বে শুধু পরদিন সকাল আর দুপুরের খাবার এর। আর খরচ তেমন একটা বেশী হবে না, গাড়ী ভাড়া ৮০০-১০০০ টাকা করে হলেও মোট ভাড়া ১৫০০-২০০০ টাকা; মোটর বাইক ভাড়া ৬০০-১০০০ টাকা। হোটেল ভাড়া নিলে ৫০০-১০০০ টাকা (নন-এসি) আর তিনবেলার খাবার বাবদ ৬০০-১০০০ টাকা। অর্থাৎ ৩০০০-৪০০০ টাকায় একদিনেই ঘুরে আসতে পারবেন কুয়াকাটা। বাজেট ট্রাভেলার যারা, তারা এই ট্যুর ২০০০-২৫০০ টাকায়ও সম্পন্ন করতে পারবেন। তো অপেক্ষার পালা কবে নাগাদ পদ্মাসেতু সম্পন্ন হয়ে যায়, সেটার। 

কম খরচে কুয়াকাটা ট্যুর প্ল্যানঃ

যাতায়াতঃ ঢাকার যে কোন প্রান্ত থেকে বাসে করে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল (আপ-ডাউন) জনপ্রতি ১০০ টাকা। ঢাকা-বরিশাল লঞ্চ ভাড়া জনপ্রতি ৩০০ টাকা। বরিশাল-কুয়াকাটা-বরিশালঃ বাস ভাড়া জনপ্রতি ৪৫০ টাকা। বরিশাল-কেওড়াকান্দিঃ বাস ভাড়া ৩০০ টাকা কেওড়াকান্দি-মাওয়াঃ নদী পারাপার লঞ্চ ভাড়া ৫০ টাকা। মাওয়া-গুলিস্থানঃ বাস ভাড়া ৮০ টাকা। 

খাবারঃ মোট ০৪ বেলার খাবার ৫০০ টাকা। 

ঘোরাঘুরিঃ মোটর সাইকেলে গঙ্গামতির চর, কুয়াকাটার কুয়া, রাখাইন পল্লী, বৌদ্ধ মন্দির, বৌদ্ধ বিহার, ২০০ বছরের পুরাতন নৌকা, লেম্বুর চর, তিন নদীর মোহনা, ফাতরার বন, ঝাউবন এবং তদসংলগ্ন লাল কাঁকড়ার আস্তানা দেখতে মোটর সাইকেল লাগবে দুইজনের ১০০০ টাকা। জনপ্রতি ৫০০ টাকা। 

সর্বমোটঃ জনপ্রতি ১৭৮০ টাকা (কমপক্ষে দুইজন) 

আর চাইলে এখনো ঘুরে আসতে পারেন কুয়াকাটা। রাতের লঞ্চে রওনা হয়ে সকাল আটটার মধ্যে কুয়াকাটা পৌঁছে যাবেন। সেখানে সারাদিন অতিবাহিত করে ফের রাতের গাড়ীতে করে ঢাকার উদ্দেশ্যে ফিরতি যাত্রা করতে পারবেন। তবে সেক্ষেত্র কুয়াকাটার মূল আকর্ষণ সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের মধ্যে একটি বাদ পড়ে যায়, তা হল সূর্যাস্ত। এটি উপভোগ করতে হলে আপনাকে রাত কাটিয়ে সূর্যোদয় দেখে ঢাকা ব্যাক করতে হবে। তো, কবে যাচ্ছেন কুয়াকাটা?

মন্তব্যসমূহ

Translate

বোকা পর্যটকের কথা

মানুষ যেমন হঠাৎ করেই কারো প্রেমে পড়ে, ঠিক তেমনই করে আমিও প্রেমে পড়েছি ভ্রমণের। আজব এক নেশায় নেশাগ্রস্থ, কবে থেকে জানি না। তবে নিজের আর্থ-সামাজিক অবস্থানে লড়াই করে টিকে থাকার পর ভ্রমণে মনঃসংযোগ করতে উদ্যত হই। সেই থেকে যখনই সময়-সুযোগ হয় বেড়িয়ে পড়ি ঘর হতে, ভ্রমণের তরে। মজার ব্যাপার হল, আমি সাইক্লিস্ট নই, সাঁতার কাটতে পারি না, না পারি ট্র্যাকিং, হাইকিং, ক্লাইম্বিং। কোন ধরণের এডভেঞ্চারধর্মী কোন গুণই আমার নেই, শুধু আছে ভ্রমণের শখ আর অদম্য ইচ্ছাটুকু। আর সেই ইচ্ছা থেকেই সময় সময় আমার ঘুরে বেড়ানো আর সেই গল্পগুলো লিপিবদ্ধ করে রাখা এই ডায়েরীতে। আমার এই লেখাগুলো বিভিন্ন সময়, বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে এবং ব্যক্তিগত ডায়েরীতে লেখা ছিল; সেগুলো সব একত্রে সংরক্ষণ করে রাখার নিমিত্তেই এই ব্লগ। যদি আপনাদের কারো এই লেখাগুলো কোন কাজে লাগে তবে আমার পরিশ্রম কিছুটা হলেও সার্থক হবে।

পোস্ট সংরক্ষণাগার

যোগাযোগ ফর্ম

প্রেরণ