১০,০০০ টাকায় ঘুরে আসুন আজমীর শরীফ!!!

ইদানীং কম খরচে ভারত ভ্রমণের পোস্ট এর ছড়াছড়ি অনলাইন প্লাটফর্মে, আর ইউটিউব এ ভিডিও'র সংখ্যা অগণিত। সাম্প্রতিক রাজাস্থান একটা সোলো ট্রিপের প্ল্যান করছিলাম। তো সেখানে দেখি মাত্র ৩,০০০ রূপী প্রতিদিনে ঘুরুন রাজাস্থান!!! রিয়েলি? আমি দৈনিক ১,০০০ রূপীতে প্ল্যান ফাইনাল করে ফেলেছিলাম যেখানে, শুধু বাগড়া দিচ্ছে অনেকগুলো স্পটের ক্যামেরা সহ প্রবেশ ফি। যাই হোক, সম্প্রতি একটা অনলাইন সোশ্যাল মিডিয়া ট্রাভেল গ্রুপে একজন জানতে চাইলো সবচাইতে কমে, কত খরচে আজমীর ঘুরে আসতে পারা যাবে। গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গাল নিয়ে কম খরচে ভারত ভ্রমণ সিরিজে পোস্ট থাকলেও আজমীর নিয়ে কোন পোস্ট করা হয় নাই। সেখানে সংক্ষেপে একটা হিসেব দিয়ে একটা মন্তব্য করে দিলাম। পরে মনে হল, যেহেতু আমাদের দেশ হতে প্রচুর মানুষ আজমীর শরীফ ভ্রমণে যায়, তাদের জন্য একটা পোস্ট করা যাক। আর সেই থেকেই আজকের এই পোস্টের অবতারনা। 


ভিসা

যদি আপনার একটা ইন্টারন্যাশনাল ভিসা ক্রেডিট কার্ড থাকে তাহলে ব্যাংক স্টেটমেন্ট বাবদ কোন খরচ নেই। অন্যথায় ব্যাংকভেদে যদি কোন চার্জ আরোপিত হয় তা এই হিসেবের বাইরে রইলো। এখন আর ভারতীয় ভিসা আবেদনের জন্য অনলাইনে ফর্ম পূরণে তেমন কোন ঝামেলা নেই। ফর্ম পূরণ করে এক সপ্তাহের ভেতর জমা দিতে পারবেন। এর বাইরে রইলো ছবি, ১০০-১২০ টাকায় ২"X২" সাইজের সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডে ছবি তুলে ফেলতে পারবেন। ভালো হয় প্রিন্টে বলবেন ২ কপি নরমাল পাসপোর্ট সাইজ ছবি, ২ কপি ২"X২" সাইজের প্রিন্ট দিতে। এতে ২ কপি নরমাল পাসপোর্ট সাইজ ছবি অন্য কাজে ব্যবহার করতে পারবেন। ভিসা প্রসেসিং ফি বাবদ ৮০০ টাকা সহজে বিকাশ থেকে পেমেন্ট করতে পারেন। খরচ পড়বে ৮২৪ টাকা, অনেক সময় ক্যাশব্যাক অফার থাকে, তা অগ্রাহ্য করে নিলাম এক্ষেত্রে। আর ঢাকা শহরের যে কোন প্রান্ত থেকে যমুনা ফিউচার পার্ক লোকাল বাসে করে চলে আসতে পারেন, আসা যাওয়ার ভাড়া  ১০০ টাকা করে জমা এবং পাসপোর্ট ফেরত আনা, দুইবারে ২০০ টাকা। 

(০১) তাহলে ভিসা বাবদ মোট খরচ = (১২০+৮২৪+২০০) = ১,১৪৪ টাকা।


যাতায়াত

ঢাকা-কলকাতা-ঢাকাঃ ঢাকা থেকে বেনাপল শিবচর এক্সপ্রেস ৬৫০ টাকা, এস ডি পরিবহণ ৭০০ টাকা, দেশ ট্রাভেলস ৭৫০ টাকায় পদ্মা সেতু দিয়ে নন এসি চেয়ার কোচ পরিচালনা করছে। সকাল সোয়া ছয়টা থেকে প্রথম গাড়ী ছেড়ে যায়। সকাল সাতটার গাড়ীতে চড়লেও দুপুর ২টার মধ্যে বেনাপল পৌঁছে যাবেন। এরপর ট্রাভেল ট্যাক্স ৫০০ টাকা এবং পোর্ট ফি ৫০ টাকা প্রদান করে দুইপাশের ইমিগ্রেশন পার করে বনগা লোকালে চলে যান শিয়ালদহ স্টেশন। সীমান্তে দুইপাশে কোন বকশিস দেয়ার পক্ষে না থাকলেও ধরে রাখলাম দুইপাশে ১০০ টাকা করে ২০০ টাকা গচ্চা যাবে। আর পেট্রাপল থেকে শিয়ালদহ ১০০ টাকা তথা ৮০ রুপি যথেষ্ট। (রুপীর হিসেব ১০০ টাকায় ৮০ রুপী ধরেই করা হলো)। 

(০২) ঢাকা-কলকাতা-ঢাকা মোট খরচ = (৬৫০+৫০০+৫০+২০০+১০০)X২ = ৩,০০০ টাকা

কলকাতা-আজমীর-কলকাতাঃ এই রুটে সপ্তাহের প্রতিদিন চলে এমন ট্রেন একটি, 12987 SEALDAH - AJMER SF Express। এছাড়াও শিয়ালদহ এবং হাওড়া থেকে আরও কিছু ট্রেন নির্দিষ্ট কিছু দিনে আজমীর হয়ে যাতায়াত করে। এর বাইরে আপনি যে কোন ট্রেনে দিল্লী গিয়ে সেখান থেকে বাসে করে আজমীর চলে যেতে পারেন। তো আগে থেকে আসা যাওয়ার টিকেট করে ফেললে ৮৫০-৮৯০ রুপি করে খরচ পড়বে নন-এসি স্লিপার এর জন্য। আপ-ডাউন ১,৮০০ রুপী। 

(০৩) কলকাতা-আজমীর-কলকাতাঃ = ১,৮০০/০.৮০ = ২,২৫০ টাকা


যেহেতু রাজাস্থানে প্রবেশ করছেন তাই পুসকার এবং জয়পুর তো ঢুঁ মারবেনই। সেই বাবদ আরও ৮০০ রুপী বরাদ্দ রাখা হলো। ফোর্ট, মিউজিয়াম ঘুরতে হলে সেটার খরচ আপনার নিজের। এখানে তা আর সংযুক্ত করা হলো না। এই ৮০০ রুপী দিয়ে আজমির থেকে পুসকার এবং জয়পুর যাতায়াত এর সকল খরচ হয়ে যাবে। আচ্ছা দিলাম না হয় সকল এন্ট্রি ফি বাবদ অতিরিক্ত ১,২০০ রুপী; তবে বাইরে থেকেই পুসকার লেক, জয়পুর হাওয়া মহল, জল মহল, ফোর্টগুলোর বাইরের ভিউ, সেগুলোও কিন্তু কম চিত্তাকর্ষক নয়। এছাড়া লোকাল লাইফ এক্সপ্লোর তো রয়েছেই। 

(০৪) জয়পুর এবং পুসকার ভ্রমণ বাবদ অতিরিক্ত ২,০০০ রুপী = (২,০০০/.৮০) = ২,৫০০ টাকা।



থাকা

দুই রাত আজমীর/পুসকার এবং দুই রাত জয়পুর থাকা বাবদ ১,৬০০ রূপী। রাজাস্থান অঞ্চলে প্রচুর হোস্টেল এর বাংকবেড পাবেন ২০০-৪০০ রুপীতে। এরমধ্যে zostel সবচাইতে জনপ্রিয় সারা বিশ্ব থেকে আসা ব্যাকপ্যাকারদের কাছে।

(০৫) থাকা বাবদ খরচ ১,৬০০ রুপী = ২,০০০ টাকা।



খাওয়া

মোট ০৮ দিন এর জন্য প্রতিদিন নাস্তা বাবদ ৫০রুপী, লাঞ্চ এবং ডিনার ১২৫ রুপী করে এবং দুইবারে চা-জলপান বাবাদ ২৫ রুপী করে ৫০ রুপী হিসেবে দৈনিক ৩৫০ রুপী হিসেবে ০৮ দিনে ২,৮০০ রুপী।

(০৬) খাওয়া বাবদ খরচ ২,৮০০ রুপী = ২,৮০০/.৮০ = ৩,৫০০ টাকা।



মোট খরচঃ 

(০১) ভিসা বাবদ মোট খরচ = ১,১৫০ টাকা (রাউন্ড করে নিলাম)

(০২) ঢাকা-কলকাতা-ঢাকা মোট খরচ = ৩,০০০ টাকা

(০৩) কলকাতা-আজমীর-কলকাতা = ২,২৫০ টাকা

(০৪) জয়পুর এবং পুসকার ভ্রমণ বাবদ = ২,৫০০ টাকা

(০৫) থাকা বাবদ খরচ = ২,০০০ টাকা

(০৬) খাওয়া বাবদ খরচ = ৩,৫০০ টাকা

অন্যান্য বাবদ রিস্ক মানি ৬০০ টাকা


সর্বমোট খরচ = ১৫,০০০ টাকা।


এখন যদি আপনি সত্যি একেবারে কম খরচে ভ্রমণ শেষ করতে চান, তাহলে পুসকার এবং জয়পুর ভ্রমণ বাদ দিন। খরচ বাঁচবেঃ


জয়পুর এবং পুসকার ভ্রমণ বাবদ = ২,৫০০ টাকা

দুই দিনের থাকা বাবদ = ১,০০০ টাকা

দুই দিনের খাওয়া বাবদ = ৮৭৫ টাকা। 

পুসকার এবং জয়পুর ভ্রমণ বাদ দিলে মোট খরচ কমবে  ৪,৩৭৫ টাকা। সেক্ষেত্রে মোট খরচ এর রিস্ক মানি এবং অন্যান্য খরচ বাদ দিলে সর্বমোট খরচ ১০,০০০ টাকায় ঢাকা থেকে আজমীর ঘুরে আসা সম্ভব। সেইক্ষেত্রে খরচের হিসেবটা এমন হবেঃ


মোট খরচঃ 

(০১) ভিসা বাবদ মোট খরচ = ১,১৫০ টাকা (রাউন্ড করে নিলাম)

(০২) ঢাকা-কলকাতা-ঢাকা মোট খরচ = ৩,০০০ টাকা

(০৩) কলকাতা-আজমীর-কলকাতা = ২,২৫০ টাকা

(০৪) দুই রাত আজমীরে থাকা বাবদ খরচ = ১,০০০ টাকা

(০৫) খাওয়া বাবদ খরচ = ২,৬০০ টাকা

সর্বমোট খরচ = ১০,০০০ টাকা।


IRCTC তে একটা একাউন্ট করে নিজে নিজে ক্রেডিট কার্ড দিয়ে টিকেট করে নিতে পারেন। এ ব্যাপারে ইউটিউবে প্রচুর ভিডিও এবং অনলাইনে প্রচুর পোস্ট পাবেন। ভারতে বাস এর টিকেট এর জন্য Red Bus এবং হোস্টেল এর জন্য Zostel এপ্স ব্যবহার করুন। এই ভ্রমণে যে সকল এপ্স প্লে স্টোর থেকে নামিয়ে নিতে পারেনঃ 

  • bKash
  • IRCTC Connect 
  • Red Bus
  • Zostel 


তো আর কি? এই ২০২২ সালের উচ্চমূল্যের বাজারে ১০,০০০ টাকায় আজমীর শরীফ ভ্রমণ; আর ১৫,০০০ টাকায় জয়পুর-পুসকার এর সাথে আজমীর। আর আমার আগের দিল্লী পোস্ট ঘেটে নিজের মত সাজিয়ে নিলে ১৮,০০০ টাকায় দিল্লী-ফতেহপুর সিক্রি-আগ্রা-জয়পুর-পুসকার এর সাথে আজমীর ভ্রমণও সেরে আসতে পারেন। 

মন্তব্যসমূহ

Translate

বোকা পর্যটকের কথা

মানুষ যেমন হঠাৎ করেই কারো প্রেমে পড়ে, ঠিক তেমনই করে আমিও প্রেমে পড়েছি ভ্রমণের। আজব এক নেশায় নেশাগ্রস্থ, কবে থেকে জানি না। তবে নিজের আর্থ-সামাজিক অবস্থানে লড়াই করে টিকে থাকার পর ভ্রমণে মনঃসংযোগ করতে উদ্যত হই। সেই থেকে যখনই সময়-সুযোগ হয় বেড়িয়ে পড়ি ঘর হতে, ভ্রমণের তরে। মজার ব্যাপার হল, আমি সাইক্লিস্ট নই, সাঁতার কাটতে পারি না, না পারি ট্র্যাকিং, হাইকিং, ক্লাইম্বিং। কোন ধরণের এডভেঞ্চারধর্মী কোন গুণই আমার নেই, শুধু আছে ভ্রমণের শখ আর অদম্য ইচ্ছাটুকু। আর সেই ইচ্ছা থেকেই সময় সময় আমার ঘুরে বেড়ানো আর সেই গল্পগুলো লিপিবদ্ধ করে রাখা এই ডায়েরীতে। আমার এই লেখাগুলো বিভিন্ন সময়, বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে এবং ব্যক্তিগত ডায়েরীতে লেখা ছিল; সেগুলো সব একত্রে সংরক্ষণ করে রাখার নিমিত্তেই এই ব্লগ। যদি আপনাদের কারো এই লেখাগুলো কোন কাজে লাগে তবে আমার পরিশ্রম কিছুটা হলেও সার্থক হবে।

পোস্ট সংরক্ষণাগার

যোগাযোগ ফর্ম

প্রেরণ