"ভ্রমণ বাংলাদেশ" এর সাথে "ইদ্রাকপুর দূর্গ" ঘুরে "আড়িয়াল বিল" এর জলে
গত অক্টোবর-নভেম্বরে রাজাস্থানে লম্বা সলো ট্রিপ দিয়ে আসার পর কোথাও বেড়াতে যাওয়া হয় নাই। আক্ষরিক অর্থে বাসা-অফিস এর বাইরে কোথাও যাওয়া হচ্ছিলো না। গত মহররমের ছুটিতে কোথাও বেড়াতে যাওয়ার প্রচন্ড ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও যাওয়া হয় নাই। তাই ১৫ আগস্টের ছুটিতে ভ্রমণ বাংলাদেশ এর দিনব্যাপী একটা ট্যুর এর ঘোষণায় আগ্রহী হয়ে তাদের সাথে যোগ দিলাম। প্রায় ০৬ বছর পর তাদের সাথে ডে লং ট্রিপে গেলাম, করোনা পরবর্তী সময়ে তাদেরও এটা প্রথম ডে লং ট্রিপ ছিল যতদূর জানলাম। মোট জনা পঞ্চাশের দল নিয়ে একদিনের এই ভ্রমণের রুট ছিলো ঢাকা-মুন্সিগঞ্জ (ইদ্রাকপুর)-মাওয়া ঘাট-আড়িয়াল বিল-ঢাকা। চারটি রিজার্ভ মাইক্রোবাসে করে ভিন্ন ভিন্ন স্থান হতে পিক করে সবাই জড়ো হবে ইদ্রাকপুরে এমনটাই ছিলো পরিকল্পনা।
১৫ আগস্ট সকাল সোয়া সাতটার দিকে বাসা হতে বের হয়ে লালবাগ কেল্লার পশ্চিম পাশে অবস্থিত বিখ্যাত 'মদীনা হোটেল' এর লুচি পরাটা ভাজি দিয়ে নাস্তা করে দলের অন্যদের সাথে 'ওয়েস্ট এন্ড হাই স্কুল' এর নিকট হতে গাড়ীতে চড়ে বসলাম যখন ঘড়িতে তখন সকাল ০৮ঃ০৫। এই গাড়ীর নেতৃত্বে ছিলেন ভ্রমণ বাংলাদেশের সভাপতি আরশাদ হোসেন টুটুল ভাই। পথিমধ্যে ঢাকেশ্বরী মন্দিরের সন্নিকট হতে আরও তিনজন আমাদের গাড়ীতে চড়ে বসলে আমাদের গাড়ীর সদস্য সংখ্যা হলো ০৯ জনে। মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার হয়ে নারায়ণগঞ্জ এর ভেতর দিয়ে ইদ্রাকপুর পৌঁছলাম যখন তখন সকাল সাড়ে নয়টার বেশী, ইদ্রাকপুর দুর্গ'র গেট ওপেন হবে সকাল ১০ঃ০০টায়। পথিমধ্যে নানান জায়গায় ১৫ আগস্ট "শোক দিবস" উপলক্ষ্যে নানান আয়োজন দেখলাম, দুয়েক জায়গায় শোক সভার উদ্দেশ্যে যাত্রা করা মিছিলের পেছনে গাড়ী ধীর গতিতেও চললো। আমাদের মাইক্রোবাসই প্রথমে পৌঁছল ইদ্রাকপুর, তখন বাকীরা অন দ্যা ওয়ে'তে। এই ফাঁকে আমরা কয়েকজন মিলে পাশের চৌরাস্তামত জায়গা হতে দুধ মালাই চা খেয়ে নিলাম। দশটার পর টিকেট কেটে ইদ্রাকপুরের ভেতরে প্রবেশ করলাম।
অর্ধেক পথ পাড়ি দেয়ার পর দেখি সেদিকটায় বৃষ্টি পড়ে নাই। দুপুর দেড়াটার দিকে মাওয়া ঘাটে পৌঁছে 'নিরালা হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্টে' সবাই ঢুকে গেলাম, এখানেই ছিলো দুপুরের আয়োজন। মাওয়া ঘাটের সিগ্নেচার আইটেম সাদাভাত, ইলিশ ভাঁজা, বেগুণ ভাঁজা, ইলিশের লেজ ভর্তা, ঘন ডাল, সালাদ। পেটপূজো শেষ করে সবাই ফের গাড়ীতে চড়ে বসতে বসতে দুপুর তিনটা ক্রস করে গেল।
মাওয়া ঘাট হতে আমাদের পরবর্তী গন্তব্য ছিলো "আড়িয়াল বিল", মূলতঃ এদিনের মূল ইভেন্টই ছিলো আড়িয়াল বিলে নৌভ্রমণ। বিকেল সাড়ে চারটার পরপর আমরা পৌঁছে গেলাম শ্রীনগর এর 'গাদিঘাট' এলাকার নৌকা ঘাটে। ব্রীজের নীচ হতে দুটি ইঞ্চিন নৌকা ভাড়া করা হলো আমাদের পঞ্চাশ জনের দলের জন্য। শান্ত বিলের জলে জমে থাকা সবুজ গুল্ম, লতা আর গাছের মাঝ দিয়ে শেষ বিকেলে ঘুরে বেড়ালাম ঘন্টাখানেক সময়, যদিও আরো বেশী সময় থাকা গেলে ভালো হতো। এর মাঝে অনেকে নেমে পড়ল বিলের জলে জলকেলি করতে। সন্ধ্যের আগে আগে নৌকা ফিরে এলো তীরে।
এরপর সবাই ছড়িয়ে ছিটিয়ে চা-পাণ, আড্ডা-খুনসুটি চললো কিছুটা সময়। মাগরিবের নামাজের শেষে একে একে সবাই নিজেদের গন্তব্যের গাড়ীতে চড়ে বসলাম ফিরতি যাত্রায়। যান্ত্রিক শহুরে কর্মব্যস্ত জীবনের অবিরাম ছুটে চলার মাঝে এরকম ডে-ট্রিপ'গুলো টনিকের মত কাজ করে, মানসিক প্রশান্তির খোরাক যোগায়। রাত আটটায় পলাশী বাজারের কাছে আমাদের গাড়ী হতে নেমে রিকশা নিয়ে বাড়ির পথে যাত্রার মাধ্যমে শেষ হলো এদিনের এই হুট করে বেড়িয়ে পড়া ডে ট্রিপের। ইচ্ছে আছে খুব শীঘ্রই আবারো এরকম ডে-ট্রিপে যাওয়ার। ধন্যবাদ ভ্রমণ বাংলাদেশ টিম'কে।
মন্তব্যসমূহ