শাহপরীর দ্বীপ সমুদ্র সৈকত - বাংলাদেশের পর্যটনের এক লুকানো রত্ন
বাংলাদেশের আমার দেখা সবচেয়ে সিনিক বিউটি এবং ল্যাণ্ডস্কেপ ভিউ সম্পন্ন সমুদ্র সৈকত "শাহপরীর দ্বীপ সমুদ্র সৈকত"। কক্সবাজার আর ইনানি সৈকতের ভীড়, ঘোলাটে পানি আর অন্যদিকে সেন্টমার্টিনে যাতায়াতের সীমাবদ্ধ অনুমতি এবং দীর্ঘ সমুদ্রপথ যাত্রা'র বিপরীতে বিকল্প হতে পারে এই শাহপরীর দ্বীপ এর সমুদ্র সৈকত। নীল আকাশে শুভ্র মেঘদলের আচ্ছাদনের নীচে মায়ানমারের সবুজ পাহাড়ের দেয়াল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা নীল জলরাশির এই সৈকতের মনোমুগ্ধকর রূপ বিমোহিত করবে যে কাউকে।
শাহপরীর দ্বীপের এই সৈকতকে যদি “বাংলাদেশের লুকানো সমুদ্র-রূপ” বলা হয়, তাতে বিন্দুমাত্র অতিরঞ্জন নেই। ভীড়–ঝামেলা, কোলাহল, বাণিজ্যিকতার হাতছানি—এসব থেকে দূরে দাঁড়ানো এই সৈকত যেন একান্ত স্বচ্ছ নিঃশ্বাস নেওয়ার জায়গা। পর্যটনের প্রস্তাবনামূলক দৃষ্টিকোণ থেকে এখানে তিনটি জিনিস স্পষ্ট—প্রকৃতির বিশুদ্ধতা, ভৌগোলিক বৈচিত্র্য এবং পর্যটকদের জন্য তুলনাহীন প্রশান্তি। সাথে অষ্টগ্রাম মিঠামাইন এর মতো করে নির্মিত সড়ক যোগাযোগ টেকনাফ এর সাথে দ্বীপের মূল ভূখণ্ডের।
নীল আকাশের নিচে শুভ্র মেঘের ভেসে বেড়ানো ছায়া, তার নিচে গাঢ় নীল সমুদ্র—সবকিছুর পেছনে দাঁড়িয়ে আছে মিয়ানমারের সবুজ পাহাড়শ্রেণীর দীর্ঘ দেয়াল। ঠিক এমন ভিজ্যুয়াল কম্পোজিশন বাংলাদেশে একটাই—শাহপরীর দ্বীপ সমুদ্র সৈকত। ঢেউয়ের শব্দ এখানে গম্ভীর নয়, বরং সমান ছন্দে ধীরে ধীরে তীরে এসে থামে—এক ধরনের সম্মান প্রদর্শনের মতো। হাঁটতে হাঁটতে যতদূর চোখ যায়, তটে ভীড় নেই, অবাঞ্ছিত শব্দ নেই, শুধু বাতাসে নোনাজলের কোমলতা আর সমুদ্রের আদিম সৌন্দর্য।
যারা কক্সবাজারের অতিরিক্ত মানুষের ভিড়, ঘোলাটে জলরাশি এবং একঘেয়ে বাণিজ্যিকীকরণে ক্লান্ত—তাদের জন্য এটি এক নিঃশব্দ বিকল্প। আর যারা সেন্টমার্টিন যেতে চান কিন্তু যাতায়াতের সীমিত অনুমতি, দীর্ঘ সমুদ্রযাত্রা বা মৌসুমি ঝুঁকির জন্য দ্বিধায়—তাদের কাছে শাহপরীর দ্বীপ একটি বাস্তবসম্মত, সহজ এবং অনন্য সমুদ্রগন্তব্য।
এই সৈকতের সবচেয়ে বড় শক্তি হলো—এখানে দাঁড়ালে মনে হয় প্রকৃতি যেন সরাসরি দর্শনার্থীর সাথে কথা বলছে। দূরের পাহাড়, মাঝখানের সমুদ্র আর সামনে অবারিত তটরেখা—সব মিলিয়ে এটি এমন এক দৃশ্য যা শুধু দেখা যায় না, অনুভব করা যায়। বিকেলের মায়াময় আলো, সূর্যাস্তের কমলা আভা আর রাতের নিস্তব্ধতায় একমাত্র সঙ্গী ঢেউয়ের মৃদু শব্দ—শাহপরীর দ্বীপ এমনই এক অভিজ্ঞতা দেয়, যা পর্যটকের উপলব্ধিকে গভীর করে এবং স্মৃতিকে দীর্ঘস্থায়ী করে।
বাংলাদেশের পর্যটন মানচিত্রে এই সৈকতকে নতুনভাবে তুলে ধরা দরকার—কারণ এখানে রয়েছে দেশের সবচেয়ে শান্ত, সবচেয়ে সিনিক এবং সবচেয়ে ফোটোজেনিক সমুদ্রদৃশ্যগুলোর একটি। যে কেউ প্রকৃতির কাছে ফিরে যেতে চান, বিশুদ্ধ প্রশান্তি খুঁজছেন, বা শুধু নীরবে সমুদ্রকে অনুভব করতে চান—তাদের জন্য শাহপরীর দ্বীপই হতে পারে পরবর্তী যাত্রার ঠিকানা।
আসুন দুটো ট্য ট্যুর প্ল্যান–১

মন্তব্যসমূহ