আকাশের নীলে, সাগরের নীলে, হৃদয়ের তুলিতে ( এ ট্রিপ টু সেইন্টমার্টিন আইল্যান্ড উইথ ভ্রমণ বংলাদেশ) - শেষাংশ

#

গল্পের ছবিসকল

  • সেন্টমার্টিন
  • সেন্টমার্টিন
  • সেন্টমার্টিন
  • সেন্টমার্টিন
  • সেন্টমার্টিন
  • সেন্টমার্টিন
  • সেন্টমার্টিন
সেন্টমার্টিন পৌঁছেই হোটেলে লাগেজ রেখেই ছেলের দল গিয়েছিলাম জুম্মা নামাজ পড়তে পাশের মসজিদে। নামাজ শেষে লাঞ্চের পালা, গেলাম ‘প্যারাডাইস প্যালেস’ হোটেলের রেস্টুরেন্টে। খুবই মানসম্মত খাবার, আর স্বাদও ভালো। আমরা তিনদিন ছিলাম সেন্টমার্টিন এ, সেই তিনদিন প্রতিবেলাই ওখানে খাবার খেয়েছি। খাবার শেষে হুমায়ুন আহমেদ এর ‘সমুদ্র বিলাস’ সংলগ্ন সৈকতে হাঁটতে বের হলাম কয়েকজন, কয়েকজন গেল রেস্ট হাউজে রেস্ট নিতে। আমি আর বন্ধু মনা সস্ত্রীক সূর্যাস্ত পর্যন্ত হেঁটে বেড়ালাম সৈকতের বালুতটে। 
সেন্টমার্টিন এর সেই সূর্যাস্ত আজীবন মনে থাকবে। রাত সাড়ে সাতটা নাগাদ রেস্টহাউজে ফিরলাম। রাতের খাবার খেয়ে আবার হাঁটাহাঁটি করতে বের হলাম সমুদ্রপারে। কিন্তু ভালো লাগছিলো না, সেন্টমার্টিন এর যে রূপের কথা শুনে এসেছি, তা খুঁজে পাচ্ছিনা যে...। ডেরায় পৌঁছে ক্লান্তি ঝেড়ে ফেলতে ইয়া বিশাল সাইজের ডাবের শীতল মিষ্টি পানি পান করলাম। নাশতা সেরে রেস্টহাউজে ফিরলাম। কিছুক্ষনের মধ্যে ঢাকায় ফেলে আসা চারজনকে নিয়ে ক্লাব সভাপতি টুটু ভাই হাজির হলেন। বিশজনের দল দুপুরবেলা গেলাম সমুদ্রস্নানে। 
ঘণ্টা তিনেকের সমুদ্রস্নান শেষে ক্লান্ত দেহ নিয়ে লাঞ্চ শেষ করে রেস্টহাউজে ফিরে সবাই বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম। বিকেলে নৌকায় করে রওনা হলাম ছেঁড়া দ্বীপের দিকে। ঢেউয়ের দুলুনিতে ভয়-আনন্দ-শিহরন মিশ্রিত অনুভূতি নিয়ে প্রায় আধঘণ্টার বেশী সময় পাড়ি দিয়ে পৌঁছলাম ছেঁড়াদ্বিপে। সে জায়গাটায় ও দেখালাম বাঁশের ছাউনি দিয়ে টঙ্গের দোকান নিয়ে বসে আছে লোকজন, সাথে চিপস, জুস ইত্যাদির প্যাকেট। হায়রে বাণিজ্য। যাই হোক আমরা সেখানে সূর্যাস্ত পর্যন্ত ছিলাম। সূর্যাস্ত শেষে সাতজনের একটি দল হেঁটে হেঁটে রেস্টহাউজে ফেরার সিদ্ধান্ত নিলাম। 
পূর্ণিমা রাতে জোছনার আলোয় হাঁটতে ভালই লাগছিল। কিন্তু পা সারা দিতে চাইছিলো না, সারা দিনে মোট ২১ কিলোমিটার এর হাঁটা, তাও আমার মত হাল্কা-পাতলা মানুষের? রাতে আয়োজন ছিল বারবিকিউ পার্টির, সামুদ্রিক মাছ সাথে চিকেন। আগুনে ঝলসানো মাছ-মাংসের সাথে ছিল পরাটা, সালাদ, আচার, সস উইথ কোল্ডড্রিঙ্কস। জোছনায় স্নাত হয়ে খোলা আকাশের নীচে আলোআঁধারির মায়াময় পরিবেশে সেই বারবিকিউ ছিল অপূর্ব। 
পরদিন ভোরবেলা আমাদের পরিকল্পনা ছিল পুরো সেন্টমার্টিন দ্বীপটি সৈকত ধরে পায়ে হেঁটে ঘুরে দেখা। সকাল ছয়টায় ঘুম থেকে উঠে নয়জনের দল বের হয়ে পরলাম সাড়ে ছয়টা নাগাদ। দক্ষিণপার ধরে আমরা হাঁটতে আরম্ভ করলাম। আমাদের সাথে সাথেই যেন যাত্রা শুরু করলো রক্তিম সূর্য পুবাকাশে...। ধীরে ধীরে আমরা লোকালয় পার হয়ে গেলাম, সাথে সূর্য মামা তার রূপ পাল্টাতে লাগলো, তীব্র হতে লাগলো রোদের তেজ। কিন্তু ভালো লাগাও বাড়তে লাগলো, সমুদ্রের নীল গাঢ় থেকে গাঢ়তর হতে লাগল। কখনো ঝোপঝাড়, কখনো নুড়িবালি, কখনো কোরালের ঢিবি মাড়িয়ে আমরা হেঁটে হেঁটে এগিয়ে গিয়েছি তীর ধরে। সমুদ্রের নীল রূপ কিছু কিছু জায়গায় এতই মনোমুগ্ধকর ছিল যে, সেখান থেকে নড়তে মন সায় দিচ্ছিলো না। বাকহীণ হয়ে শুধু চেয়ে থাকা...! 
১২ কিলোমিটার পথ প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টায় মাড়িয়ে ঠিক যেখান থেকে শুরু করেছিলাম সেখানে এসে পৌঁছলাম...... সকালবেলার ১২ কিলোমিটার জার্নি আর এই বারবিকিউ এই ট্যুরকে করেছে স্মৃতিময়। যারা সেন্টমার্টিন গিয়েছেন অথচ সমুদ্র সৈকত ধরে পুরো দ্বীপ হেঁটে ঘুরে দেখেন নাই, তারা আসলে খুব বিশাল কিছু মিস করেছেন। খাওয়া শেষে রাত বারোটা নাগাদ জেটি সংলগ্ন ভেড়ানো মাছ ধরার নৌকায় বসে কিছুক্ষণ গল্প আর গানে মেতে থেকে ঢুকে পরলাম জেটি সৈকত সংলগ্ন আমাদের রেস্টহাউজে। 
শেষের দিন সকালে প্রথমেই সবাই নিজ নিজ লাগেজ গুছিয়ে নিলাম। সেদিন ছিল এই ইভেন্টের মূল আকর্ষণ স্নরকেলিং এবং স্কুবা ড্রাইভিং। মুজিব ভাইয়ের তত্ত্বাবধানে জনা চারেক ভ্রমণসাথী মেতে উঠল স্কুবা’র প্রাথমিক দীক্ষায়; আগামীতে স্কুবা ড্রাইভ দিবে দারুচিনি দ্বীপের নীল জলে। দুপুর নাগাদ সমুদ্রস্নান শেষে আমরা লাঞ্চ করে তিনটার দিকে উঠে বসলাম ফিরতি জাহাজে। পেছনে ফেলে আসা মায়াময় দ্বীপ বারেবারে কেমন করে যেন ডাকছিল আমায়। ফিসফিস করে বললাম আসছি আবার, খুব শীঘ্রই... 

ভ্রমণকালঃ ১৬ মার্চ, ২০১৪

আগের পর্ব

মন্তব্যসমূহ

Translate

বোকা পর্যটকের কথা

মানুষ যেমন হঠাৎ করেই কারো প্রেমে পড়ে, ঠিক তেমনই করে আমিও প্রেমে পড়েছি ভ্রমণের। আজব এক নেশায় নেশাগ্রস্থ, কবে থেকে জানি না। তবে নিজের আর্থ-সামাজিক অবস্থানে লড়াই করে টিকে থাকার পর ভ্রমণে মনঃসংযোগ করতে উদ্যত হই। সেই থেকে যখনই সময়-সুযোগ হয় বেড়িয়ে পড়ি ঘর হতে, ভ্রমণের তরে। মজার ব্যাপার হল, আমি সাইক্লিস্ট নই, সাঁতার কাটতে পারি না, না পারি ট্র্যাকিং, হাইকিং, ক্লাইম্বিং। কোন ধরণের এডভেঞ্চারধর্মী কোন গুণই আমার নেই, শুধু আছে ভ্রমণের শখ আর অদম্য ইচ্ছাটুকু। আর সেই ইচ্ছা থেকেই সময় সময় আমার ঘুরে বেড়ানো আর সেই গল্পগুলো লিপিবদ্ধ করে রাখা এই ডায়েরীতে। আমার এই লেখাগুলো বিভিন্ন সময়, বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে এবং ব্যক্তিগত ডায়েরীতে লেখা ছিল; সেগুলো সব একত্রে সংরক্ষণ করে রাখার নিমিত্তেই এই ব্লগ। যদি আপনাদের কারো এই লেখাগুলো কোন কাজে লাগে তবে আমার পরিশ্রম কিছুটা হলেও সার্থক হবে।

পোস্ট সংরক্ষণাগার

যোগাযোগ ফর্ম

প্রেরণ