কাশ্মীরি খানাপিনা

কাশ্মীর শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভূস্বর্গ নয়, খানাপিনায়’ও ভুবনখ্যাত। কাশ্মীরি নানান খাদ্যের পদ মুখে দিলে আপনি হারিয়ে যাবেন অন্য আরেক স্বর্গে, রসনাবিলাসের অপার সাগরে। আর যদি আমার মত পেটুক এবং ভোজনবিলাসী হন, তাহলে তো কোন কথাই নেই। আমার খুব ইচ্ছে ছিল কাশ্মীরে কাটানো এক সপ্তাহে চুটিয়ে ভোগ করব কাশ্মীরি খাবার এবং পানীয়। কিন্তু নানান পর্যটন কেন্দ্র ঘুরে দেখতে গিয়ে অনেকটা সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে। তারপরও জনপ্রিয় এবং নামকরা পদগুলো একবারের জন্য হলেও চেখে দেখছি
আমাদের খাবারে লিস্টে ছিলঃ

কাশ্মীরি খাদ্য (মেইন ডিশ)
১। ওয়াজওয়ান
২। গুস্তাবা
৩। রিশতা
৪। রোগানজোশ
৫। তাবাকমাজ
৬। কাশ্মীরি বিরিয়ানি
৭। কাশ্মীরি চিকেন
৮। কাশ্মীরি মাটন কারী
৯) কাশ্মীরি মিক্সড ভেজিটেবল
ডেজার্ট 
১। সুফতা

বেকারিজ আইটেম
১। নানখাতাই
২। কাকচা
৩। কুলচা
৪। ফ্রুটকেক
৫। কুকিজ


পানীয়
১। কাহওয়া
২। আপেল জুস





এবার নিশ্চয়ই মেনু দেখার ইচ্ছে রইবে? তবে আর দেরী কেন? আসুন দেখে নেই ইউটিউবে।

***কাশ্মীরি খাদ্য (মেইন ডিশ)*** 

(১) গুস্তাবাঃ গুস্তাবা মূলত খাসীর মাংসের কোপ্তা বা মিটবল যা দই এবং বিভিন্ন মশলার সমন্বয়ে তৈরি ঝোলের সাথে রান্না করে পরিবেশন করা হয়। এটি তৈরি করতে যে যে উপকরণ ব্যবহার করা হয়ঃ (১)ভেড়ার মাংস, (২) লবন, (৩) মৌরি গুঁড়ো, (৪) জিরা পাউডার, (৫) আস্ত জিরা, (৬) দারুচিনি পেস্ট, (৭) এলাচ গুঁড়ো, (৮) আস্ত এলাচ, (৯) লং গুঁড়ো, (১০) তেজপাতা, (১১) মাষ্টার্ড অয়েল, (১২) ঘি, (১৩) ধনে গুঁড়ো, (১৪) মেথি পেস্ট, (১৫) ডিম, (১৬) দই।



(২) রিশতাঃ রিশতা আর গুস্তাবা’র মধ্যে মৌলিক পার্থক্য হল, গুস্তাবায় যেখানে খাসীর মাংস দিয়ে তৈরি কোপ্তাগুলো রান্না করা হয় দই এবং মশলার ঝোলে, সেখানে রিশতা রান্না করা হয় লাল মরিচের ঝাল ঝোলে। রিশতা রান্নার জন্য যে যে উপকরণ ব্যবহৃত হয়ঃ (১) ভেড়ার মাংস, (২) মাষ্টার্ড অয়েল, (৩) কাশ্মীরি লাল মরিচ গুঁড়ো, (৪) আদা বাটা, (৫) রসুন বাটা, (৬) এলাচ গুঁড়ো, (৭) দারুচিনি গুঁড়ো, (৮) আস্ত দারুচিনি-এলাচ, (৯) জিরা, (১০) তেজপাতা, (১১) মেথি, (১২) পেয়াজ কুচি, (১৩) জাফরান, (১৪) ঘি।



(৩) রোগানজোশঃ রোগানজোশ আরেকটি ভেড়ার মাংসের কারি আইটেম যা মূলত পার্সিয়ান অরিজিন হতে আগত। পার্সিয়ান শব্দ রোগান অর্থ তেল এবং জোশ অর্থ তীব্র তাপ, যার অর্থ দাড়ায় তীব্র তাপে উত্তপ্ত তেলে রান্না করা মাংস। রোগানজোশ এর উপকরণগুলো হলঃ (১) ভেড়ার মাংস, (২) মাষ্টার্ড অয়েল, (৩) ঘি, (৪) দই, (৫) হিং, (৬) জিরা, (৭) লং, (৮) তেজপাতা, (৯) কাশ্মীরি লাল মরিচ পেস্ট, (১০) মৌরি, (১১) আদা, (১২) লবন, (১৩) দারুচিনি, (১৪) এলাচ।




(৪) তাবাকমাজঃ এটা মূলত একটি কাবাব জাতীয় পদ। কেউ কেউ এটা দুধ দিয়ে, কেউ বা দই দিয়েও রান্না করে থাকে। সকল মসলা মাখিয়ে মেরিনেট করে রেখে দেয়া হয় মাংসকে। পরে এটাকে প্যানে ফ্রাই করা হয়। তাবাকমাজ রান্না করতে যে যে উপকরণ প্রয়োজন তা হলঃ (১) মাংস (গরু, খাসী, ভেড়া) (চাপ হলে ভাল হয়), (২) দই, (৩) মৌরি, (৪) আদা, (৫) হলুদ, (৬) মরিচ, (৭) এলাচ, (৮) দারুচিনি, (৯) হিং, (১০) ধনেপাতা।



(৫) কাশ্মীরি বিরিয়ানিঃ কাশ্মীরি বিরিয়ানি আমাদের দেশে প্রচলিত বিরিয়ানির মতই, তবে এতে জাফরান, কাজুবাদাম এবং আরও কিছু বিশেষ মসলার ব্যবহার দেখা যায়। স্বাদে অতুলনীয় এই বিরিয়ানি কিছুটা শুকনো ভাঁজা ভাঁজা স্বাদের হয়। এই বিরিয়ানি তৈরিতে যে যে উপকরণ লাগেঃ (১) বাসমতি সুগন্ধি চাল, (২) যে মাংস দিয়ে রাঁধতে চান (ভেজিটেবল দিয়েও রান্না করা যায়), (৩) কাজু বাদাম, (৪) পেস্তা বাদাম, (৫) কাঁচামরিচ, (৬) লবন, (৭) গরম মসলা (স্বাদের উপর নির্ভর করে পদ ও পরিমাণ), (৮) লালমরিচ গুঁড়ো, (৯) দই, (১০) লেবুর রস, (১১) টমেটো কুচি, (১২) দুধ, (১৩) ঘি, (১৪) তেল।




(৬) কাশ্মীরি চিকেনঃ ঝাল-মিষ্টি-ক্রিমি স্বাদের “কাশ্মীরি চিকেন কারি” তথা “কাশ্মীরি মোরগ মাসালা” কাশ্মীরের অন্যতম বিখ্যাত একটি পদ। পেয়াজ-টমেটো এর সাথে বিখ্যাত কাশ্মীরি ড্রাইফ্রুট দিয়ে রান্না করা এই চিকেন কারি’র তুলনা সে নিজেই। যে যে উপকরণ সাধারণত ব্যবহার করা হয়ঃ (১) মুরগীর মাংস, (২) দুধ, (৩) দই, (৪) পেয়াজ, (৫) টমেটো, (৬) ঘি, (৭) আদা, (৮) রসুন, (৯) লালমরিচ গুঁড়ো, (১০) হলুদ, (১১) গরম মসলা, (১২) কাজু বাদাম, (১৩) পেস্তাবাদাম, (১৪) কিসমিস।




(৭) কাশ্মীরি মাটন কারীঃ দুধ, ক্রিম এবং নানান সুস্বাদু মশলা দিয়ে রান্না করা কাশ্মীরি মাটন কারি আপনার জিভে জল না এনে পারেই না। কাশ্মীরে বহুল প্রচলিত এবং জনপ্রিয় ডিশ হল এই মাটন কারি। এটি রান্নায় যে সকল উপাদান সাধারণত ব্যবহার করা হয়ঃ (১) মাটন, (২) কাঁচামরিচ কুচি, (৩) আদা কুচি, (৪) রসুন কুচি, (৫) মৌরি, (৬) এলাচ, (৭) দারুচিনি, (৮) দুধ, (৯) দই, (১০) মধু, (১১) মাখন, (১২) তাজা ক্রিম, (১৩) লবন, (১৪) বিশেষ কিছু মশলা।



(৮) ওয়াজওয়ানঃ কাশ্মীর বেড়াতে যাবেন, অথচ ওয়াজওয়ান চেখে দেখবেন না, এটা কোন কথা হল। জনপ্রিয় এই ডিশ মূলত অনেকগুলো সুস্বাদু, মজাদার এবং জনপ্রিয় আইটেমের সঙ্কলন বলা যেতে পারে। ‘ওয়াজওয়ান’ মূলত একটা কমপ্লিট মিল প্যাকেজ, রাইস-ফ্রাই-কারি সব কাশ্মীরি আইটেম। রাইস, লাব্বি কাবাব (শিককাবাব বিশেষ), তাবাকমাজ (খাসীর চাপ এর ফ্রাই), ওয়াযা চিকেন (বিশেষ চিকেন ফ্রাই), রিশতা (কোপ্তা বিশেষের কারি), গোশ্ততাব (এটা হল কোপ্তা জাতীয় কোরমা কারি), রোগান জোশ প্রভৃতি আইটেম নিয়ে এই ওয়াজওয়ান ডিশ তৈরি হয়।



***আসুন দেখে নেই কিছু ডেজার্ট এর রেসিপির ভিডিও সেই ইউটিউব থেকেই***

(১) সুফতাঃ


(২) কাশ্মীরি ফিরনিঃ



***আসুন দেখে নেই কিছু বেকারিজ আইটেম এর রেসিপির ভিডিও সেই ইউটিউব থেকে***

(১) নানখাতাইঃ


(২) কুলচাঃ


(৩) কুকিজঃ


*** এবার রইল পানীয়'র রেসিপি দেখা বাকী***

(১) কাশ্মীরি শের চায়ে অথবা নুন চায়েঃ


(২) কাহওয়াঃ

Translate

বোকা পর্যটকের কথা

মানুষ যেমন হঠাৎ করেই কারো প্রেমে পড়ে, ঠিক তেমনই করে আমিও প্রেমে পড়েছি ভ্রমণের। আজব এক নেশায় নেশাগ্রস্থ, কবে থেকে জানি না। তবে নিজের আর্থ-সামাজিক অবস্থানে লড়াই করে টিকে থাকার পর ভ্রমণে মনঃসংযোগ করতে উদ্যত হই। সেই থেকে যখনই সময়-সুযোগ হয় বেড়িয়ে পড়ি ঘর হতে, ভ্রমণের তরে। মজার ব্যাপার হল, আমি সাইক্লিস্ট নই, সাঁতার কাটতে পারি না, না পারি ট্র্যাকিং, হাইকিং, ক্লাইম্বিং। কোন ধরণের এডভেঞ্চারধর্মী কোন গুণই আমার নেই, শুধু আছে ভ্রমণের শখ আর অদম্য ইচ্ছাটুকু। আর সেই ইচ্ছা থেকেই সময় সময় আমার ঘুরে বেড়ানো আর সেই গল্পগুলো লিপিবদ্ধ করে রাখা এই ডায়েরীতে। আমার এই লেখাগুলো বিভিন্ন সময়, বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে এবং ব্যক্তিগত ডায়েরীতে লেখা ছিল; সেগুলো সব একত্রে সংরক্ষণ করে রাখার নিমিত্তেই এই ব্লগ। যদি আপনাদের কারো এই লেখাগুলো কোন কাজে লাগে তবে আমার পরিশ্রম কিছুটা হলেও সার্থক হবে।

পোস্ট সংরক্ষণাগার

যোগাযোগ ফর্ম

প্রেরণ