লাল কাঁকড়ার দেশে


বেশ কয়েক বছর আগে কোন অনলাইন নিউজে প্রথম দেখেছিলাম সমুদ্রসৈকতে ছেয়ে থাকা লাল কাঁকড়ার বিছানা। পটুয়াখালীর সমুদ্রবেষ্টিত সোনার চর, কুয়াকাটার কিছু নির্দিষ্ট সৈকতে দেখা মেলে এই কাঁকড়ার বিছানার। কিন্তু একেবারে হাতের কাছে অতি পরিচিত কক্সবাজার সৈকতে প্রায় ১০ কিলোমিটার সৈকত জুড়ে যে ছড়িয়ে আছে লাল কাঁকড়ার বিছানা তা কি আর জানা ছিল? বাড়ীর পাশে আরশি নগর, সেথা পড়শি বসত করে... আমি একদিনও না দেখিলাম তারে... 





গত ডিসেম্বরে ভ্রমণ বাংলাদেশের সাথে “স্বপ্নের সৈকতে এঁকে যাই পদচিহ্ন” ইভেন্টের দ্বিতীয় দিন দেখা মেলে এই লাল কাঁকড়ার দেশের। আগে থেকেই আবু বকর ভাই বলে রেখেছিলেন যে ভাই আর যাই করেন দ্বিতীয় দিনের পুরোটা পথ হাঁটা মিস করবেন না, কেননা এই দিনের আমাদের পথ জুড়ে থাকবে যে ন্যাচারাল ভিউ তা এই সৈকতের সবচেয়ে সুন্দর ভিউ। তাই দ্বিতীয় দিন খুব আগ্রহ নিয়ে হাঁটা শুরু করলাম। 






আমরা শিলখালি থেকে শাপলাপুর সৈকত পেরুনোর কিছুক্ষণ পর থেকে শুরু হলে লাল লাল ফুলের ন্যায় কাঁকড়ার দেখা পাওয়া। যত এগুতে থাকলাম ততই যেন প্রবেশ করছিলাম লাল কাঁকড়ার দেশে। ঝাঁকে ঝাঁকে লাল কাঁকরা পুরো সৈকত জুড়ে ছড়িয়ে আছে। আমাদের হাঁটার ফলে যে মৃদু কম্পন সৈকতের বালুকাবেলায় তৈরি হচ্ছিল, তাতে করেই তারা টের পাচ্ছিল আমাদের উপস্থিতি। ফলে হুট করে মাথা ঢুকিয়ে লুকিয়ে পড়ছিল তাদের বাসার ভেতর। 






পুরোটা সময় মনে হচ্ছিল কোন স্বপ্নের জগতে আছি। আমাদের হাঁটার জায়গা করে দিতেই যেন লাল কাঁকড়ার বিছানা গুটিয়ে নিয়ে পথ করে দিচ্ছিল সৈকত জুড়ে ছড়িয়ে থাকা কাঁকড়ার দল। সৈকতের পুরোটা অংশ, সমুদ্রের পানি থেকে শুরু করে সৈকতে লাগানো ঝাউবনের প্রান্ত পর্যন্ত ছড়িয়ে ছিল লাল কাঁকড়াদের রাজত্ব। এই রূপ দেখতে দেখতে প্রায় দুই ঘণ্টারও বেশী সময় ঘোরের মাঝে কাটিয়ে একসময় শেষ হল এই লাল কাঁকড়ার দেশের সীমানা। 






ডিসেম্বর মাসে এই লাল কাঁকড়ার প্রজনন মৌসুম বলে সৈকতে এদের আধিক্য দেখা যায়। তবে হাঁটার সময় বারবার মনে হচ্ছিল আমরা এদের নির্বিঘ্ন জীবনে উৎপাত হয়ে হেঁটে যাচ্ছি। আমরা বেশীরভাগ সময় চেষ্টা করেছি সৈকতের একেবারে পানির প্রান্ত ঘেঁষে হেঁটে যেতে, যাতে করে কোন কাঁকড়ার বাসা বা কাঁকড়া ক্ষতিগ্রস্থ না হয়। তাই লাল কাঁকড়া দেখতে চাইলে কষ্ট করে কোন দুর্গম চর অথবা সৈকতে যাওয়ার দরকার নেই। আমাদের চির পরিচিত কক্সবাজারের সৈকতেই পাওয়া যাবে এদের দেখা। 








আপনি কক্সবাজারে ইনানি হতে যে কোন অটোরিক্সা করে সহজেই চলে আসুন শাপলাপুর সৈকতে। সেখান থেকে হাঁটা শুরু করুন যতক্ষণ মন চায়। পরিশ্রান্ত হয়ে গেলে সৈকতের লাগোয়া জেলে পাড়ার যে কোন রাস্তা ধরে উঠে আসুন পিচ ঢালা পথে। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলেই পেয়ে যাবেন অটোরিকশার দেখা। তো কবে যাচ্ছেন লাল কাঁকড়ার দেশে? 









Translate

বোকা পর্যটকের কথা

মানুষ যেমন হঠাৎ করেই কারো প্রেমে পড়ে, ঠিক তেমনই করে আমিও প্রেমে পড়েছি ভ্রমণের। আজব এক নেশায় নেশাগ্রস্থ, কবে থেকে জানি না। তবে নিজের আর্থ-সামাজিক অবস্থানে লড়াই করে টিকে থাকার পর ভ্রমণে মনঃসংযোগ করতে উদ্যত হই। সেই থেকে যখনই সময়-সুযোগ হয় বেড়িয়ে পড়ি ঘর হতে, ভ্রমণের তরে। মজার ব্যাপার হল, আমি সাইক্লিস্ট নই, সাঁতার কাটতে পারি না, না পারি ট্র্যাকিং, হাইকিং, ক্লাইম্বিং। কোন ধরণের এডভেঞ্চারধর্মী কোন গুণই আমার নেই, শুধু আছে ভ্রমণের শখ আর অদম্য ইচ্ছাটুকু। আর সেই ইচ্ছা থেকেই সময় সময় আমার ঘুরে বেড়ানো আর সেই গল্পগুলো লিপিবদ্ধ করে রাখা এই ডায়েরীতে। আমার এই লেখাগুলো বিভিন্ন সময়, বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে এবং ব্যক্তিগত ডায়েরীতে লেখা ছিল; সেগুলো সব একত্রে সংরক্ষণ করে রাখার নিমিত্তেই এই ব্লগ। যদি আপনাদের কারো এই লেখাগুলো কোন কাজে লাগে তবে আমার পরিশ্রম কিছুটা হলেও সার্থক হবে।

পোস্ট সংরক্ষণাগার

যোগাযোগ ফর্ম

প্রেরণ