চাঁদের পাহাড় - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
স্বপ্ন সবাই দেখে, কজনা’র সত্যি হয় কি করে বলি? আর সেই কজনা যদি হয় নিম্ন মধ্যবিত্ত সংসারের ছেলে, তবে তো স্বপ্ন দেখাটাই ঘোরতর অন্যায়, তাই না? কিন্তু তারপরও কিছু মানুষ স্বপ্ন দেখে বলেই স্বপ্ন বাস্তবে ধরা দেয়। আর এরকম এক স্বপ্নাতুর যুবা’র গল্প নিয়ে গড়ে উঠেছে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত “চাঁদের পাহাড়”। ১৯৩৭ সালে লিখিত এই ভ্রমণ অভিযান আজও রোমাঞ্চপ্রেমী, ভ্রমণপ্রিয় পাঠকের মনে দোলা দিয়ে যায়। তবে মজার ব্যাপার হল, এটি কিন্তু কোন সত্যিকারের ভ্রমণ কাহিনী বা অভিযান কাহিনী নয়। এর গল্পের প্রেক্ষাপট সম্পর্কে স্বয়ং বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় কি বলেছিলেন আসুন দেখে নেই... “চাঁদের পাহাড় কোনও ইংরিজি উপন্যাসের অনুবাদ নয়, বা ঐ শ্রেণীর কোনও বিদেশী গল্পের ছায়াবলম্বনে লিখিত নয়। এই বই-এর গল্প ও চরিত্র আমার কল্পনাপ্রসূত। তবে আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলের ভৌগলিক সংস্থান ও প্রাকৃতিক দৃশ্যের বর্ণনাকে প্রকৃত অবস্থান অনুযায়ী করবার জন্য আমি স্যার এইচ্. এইচ্. জনস্টন (Sir Harry Johnston) Rosita Forbes প্রভৃতি কয়েকজন বিখ্যাত ভ্রমণকারীর গ্রন্থের সাহায্য গ্রহণ করেছি। প্রসঙ্গক্রমে বলতে পারি যে, এই গল্পে উল্লিখিত রিখটারস্ভেল্ড পর্বতমালা মধ্য-আফ্রিকার অতি প্রসিদ্ধ পর্বতশ্রেণী, এবং ডিঙ্গোনেক (Rhodestan monter) ও বুনিপের প্রবাদ জুলুল্যাণ্ডের বহু আরণ্য-অঞ্চলে আজও প্রচলিত।” সময়কাল ১৯০৯, কাহিনী যাকে ঘিরে আবর্তিত হয়েছে, সে অজ পাড়াগাঁয়ের ছেলে শঙ্কর সদ্য এফ.এ. পাশ করে গ্রামে এসেছে। বাবা’র শরীর খারাপ, সামনে পড়ালেখা’র খরচ কোথা হতে জুটবে তা জানা নেই। এমতাবস্থায়, চাকুরী’র সন্ধান এবং সৌভাগ্যক্রমে সেই চাকুরী জোটে সরাসরি প্রবাসে, আফ্রিকার মোম্বাসায়! সাঁতার, বক্সিং, ঘোড়ায় চড়া থেকে শুরু করে সকল ধরণের শারীরিক কসরতে সিদ্ধহস্ত শঙ্কর যোগ দিল সেই স্বপ্নের দেশ, রহস্যের দেশ, এডভেঞ্চার আর রোমাঞ্চের দেশ আফ্রিকার ইউগাণ্ডা’র রেলওয়েতে। আর সেই চাকুরী জীবনে দিন দিন ঘটে যেতে শুরু করে যতসব লোমহর্ষক অভিজ্ঞতা।
গল্পের শুরু হয় আফ্রিকার অদম্য সিংহের নরমাংস ভক্ষণের ভীতিকর উপাখ্যান দিয়ে। শঙ্করের কর্মস্থল হতে এক এক করে প্রতিদিন মানুষ ধরে নিয়ে যেতে থাকে নরমাংস খেকো আফ্রিকান সিংহ। এরপর বদলি হয়ে যখন শঙ্কর একটা ছোট্ট ষ্টেশনের ষ্টেশন মাস্টার হিসেবে যোগ দিল সেখানে সিংহের সাথে যোগ হল সর্পের উপদ্রব। তাও যেনতেন সর্প নয়, আফ্রিকান ব্ল্যাক মাম্বা! হ্যাঁ, এই ব্ল্যাক মাম্বা পৃথিবীর বিষাক্ততম সাপের একটি, যা প্রতি ছোবলে ১৫০০ মিলিগ্রাম বিষ ঢুকিয়ে দেয় শিকারের শরীরে। ঘরের মধ্যে আপনার বিছানার পাশে একটা ব্ল্যাক মাম্বা... ভাবতে পারেন?
এমনই প্রবাস জীবনে শঙ্করের সাথে পরিচয় হয় এক ইউরোপিয়ান ভদ্রলোকের সাথে। একমুখ লাল দাঁড়ি, বড় বড় চোখ, মুখের গড়ন বেশ সুশ্রী, দেহ একসময় বেশ বলিষ্ঠ ছিল একসময় তা তাকে দেখলেই বোঝা যায়। লোকটার নাম ছিল ডিয়েগো আলভারেজ। ১৮৮৮/৮৯ সালের দিকে এই ভদ্রলোক কেপ কলোনির উত্তর পাহাড়ের জঙ্গলে খুঁজে বেড়িয়েছেন সোনার খনি। এভাবে ঘুরতে ঘুরতে একসময় পেয়ে যান হীরার খনির সন্ধান। রিখটারসভেল্ড পর্বত সংলগ্ন সেই হীরার খনি শেষ পর্যন্ত তিনি আর জয় করতে পারেন নাই। শঙ্করকে সেই খনির ম্যাপ দিয়ে বলেন, যদি পার যাও, জয় কর সেই হীরার খনি।
গল্পের মূল কাহিনী এখান থেকেই শুরু হয়। আলভারেজ আর শঙ্কর শুরু করে তাদের দুঃসাহসিক অভিযান। এই অভিযানে তারা বন্যপ্রাণীর আক্রমণ থেকে শুরু করে আগ্নেয়গিরি’র অগ্ন্যুৎপাত সবই মোকাবেলা করে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের ভাগ্যে কি ঘটে? তারা কি বেঁচে ফিরতে পেরেছিল? পেয়েছিল কি সেই হীরের খনির সন্ধান? নাকি ঘটেছিল অন্যকিছু? জানতে হলে এখনি পড়তে বসুন এই দারুন বইটি। ও হ্যাঁ, এই গল্প নিয়ে সিনেমা তৈরি হয়েছে, যার লিংক দিয়ে দিলাম নীচে। দেখতে পারেন, ভালই নির্মাণ করেছে ছবিটি। আর সাথে বইটির পিডিএফ লিঙ্কও দিয়ে দিলাম।