বারবিকিউ নাইট উইথ ভ্রমণ বাংলাদেশ - দ্বিতীয় পত্র

পলাশ ভাই ইভেন্টের গ্রুপ মেসেজে জানালো যে, গত সপ্তাহে উনি উনার মৎস্য খামারে রাত কাটিয়েছেন। ওখানকার শীত নাকি সাইবেরিয়ার শীতের মত!!! তাই এবারের শীতের প্রথম ইভেন্টে ব্যাগ ভর্তি শীতের কাপড় নিয়ে বের হয়েছিলাম। এবার একসাথে দুইদিনে তিনটি প্রোগ্রাম ছিল। শুক্রবার সকাল হতে “ভ্রমণ বাংলাদেশ” অফিসে স্বেচ্ছায় রক্তদান করার লক্ষ্যে রক্তদাতা উদ্বুদ্ধকরণ কার্যক্রম “রক্তযোদ্ধা তৈরি” যা চলেছে শেষ বিকেল পর্যন্ত। সন্ধ্যায় আমরা রওনা হই কেরানীগঞ্জের আব্দুল্লাহপুরস্থ পলাশ ভাইয়ের মৎস্য খামারে। ঠিক ধরেছেন, গত বছর যেখানে বড়দিনে’র ছুটিতে বারবিকিউ নাইট প্রোগ্রাম করেছিলাম (বারবিকিউ নাইট উইথ ভ্রমণ বাংলাদেশ)। এবারো একই প্রোগ্রাম একই স্থানে, কিন্তু কিছুটা আগে। কারণ পরেরদিন শনিবার মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানে “লালন মেলা” ছিল আমাদের তৃতীয় প্রোগ্রাম। তাই এবার বড়দিনে না গিয়ে গত ৫ই ডিসেম্বর রাতে আয়োজিত হল বারবিকিউ নাইট। এবার মুরগীর সাথে পোড়ানো হল পলাশ ভাইয়ের পুকুরের টাটকা মাছ। দলের সদস্যসংখ্যাও এবার প্রায় দ্বিগুণ, চল্লিশের কাছাকাছি ছিল। 


সারাদিনে শতাধিক মানুষের ব্লাডগ্রুপ সনাক্তকরণ এবং স্বেচ্ছায় রক্তদাতা হিসেবে কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করার পর সন্ধ্যায় একএক করে রওনা হলাম আব্দুল্লাহপুর। সবার শেষে আমি আর বন্ধু মনা যখন সেখানে পৌঁছলাম তখন সাত-আটজনের একটা দল রাস্তায় হাঁটছে, উদ্দেশ্য শীতের রাতের শুরুতে গরম গরম চা পান করে উষ্ণতা বাড়িয়ে নেয়া। পৌঁছেই তাদের সাথে যোগ দিলাম, চা পান শেষে পলাশ ভাইয়ের বাসায় গিয়েই হামলে পড়লাম পুকুর পাড়ে পলাশ ভাইয়ের নিজ হাতে তৈরি হ্যামক নিয়ে কাড়াকাড়ি’তে। 


খোলা আকাশের নীচে পুকুর পাড়ে হ্যামকে দোল খেতে খেতে বাকী সবার আড্ডা, ব্যস্ততা দেখতে অন্যরকম মজা। কেউ কেউ নেমে পড়ল আঁধার রাতের আঁধার পুকুরে নৌকা নিয়ে ঘুরতে। 



আড্ডা-গল্প-খুনসুটির ফাঁকে আমাদের অফিসিয়াল বাবুর্চি টুলু সব কাজ গুছিয়ে আনলে সবাই বসে পড়লাম বারবিকিউ এর আয়োজনে। প্রথমে পড়ানো হল মুরগী; পরাটা আর ভেজিটেবল-ফ্রুট মিক্সড সালাদ সাথে সস আর আচার। আর কি চাই। এরই মাঝে চলে আসল মাছের বারবিকিউ। মাছের বারবিকিউ ছিল অসাম। কোন কোন ভাবী’কে দেখলাম একাই দুইটা মাছের বারবিকিউ শেষ করে ফেলতে। পলাশ ভাইয়ের নিজের পুকুরের মাছ ছিল বলে মাছের পর্যাপ্ত যোগান ছিল। রাতের আঁধার পুকুরেই সব মাছ ধরা হয়েছেল। টাটকা মাছের স্বাদই আলাদা। 



খাওায়া শেষে শুরু হল ম্যারাথন আড্ডা। ভ্রমণ বাংলাদেশের এরকম আয়োজনগুলোয় প্রচুর আড্ডাবাজি হয়। কিন্তু পরের দিন সকালে আমরা যেহেতু সিরাজদিখানের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়ব ‘লালন মেলা’র উদ্দেশ্যে, তাই কেউ কেউ দোটানায় পড়ে গিয়েছেল। টীমের একটা অংশ পরের দিন ঢাকায় ফিরে আসবে আর বাকীরা চলে যাবে লালন মেলায়। গল্প করতে করতে রাত দেড়টার দিকে অন্য একটা গ্রুপ থেকে খবর পেলাম লালান মেলায় গান স্থগিত করা হয়েছে। আয়োজক একজন সিনিয়র বাউল গান চলাকালীন মারা গেছে। তাই অনুষ্ঠান স্থগিত করা হয়েছে। কি করা যায়? রাত দুটোর দিকে বজলুর মোটর সাইকেল নিয়ে বজলু আর মনা রওনা হল সিরাজদিখান। আমাদের টেনশনে ফেলে ভোররাত সাড়ে চারটায় এসে জানালো অনুষ্ঠান সত্যি সত্যি ক্যান্সেল করা হয়েছে। 

এরপর কেউ কেউ ঘুমোতে গেল ঘরে, কেউ পুকুর পাড়ে টেণ্টে আর আমার মত কিছু বাচালের দল সারারাত গল্প করতে করতে একসময় ধীরে ধীরে আকাশ পরিস্কার হতে দেখলাম। কুয়াশা ভেদ করে কিছুটা আলো ফুটতেই বেড়িয়ে পড়লাম 



গ্রাম্য পথ দিয়ে হেঁটে বেড়াতে। শীতের সকালে এই হাঁটা’র কোন তুলনা হয় না। হাঁটতে হাঁটতে একটা চায়ের দোকান পেয়ে সকালের প্রথম চা পান করে নিলাম শীতের গ্রাম্য পথে। একএক করে সবাই ঘুম থেকে উঠলে নাস্তা শেষ করে তোড়জোড় শুরু হল মাছ ধরার। আগে থেকেই পলাশ ভাইকে বলে রেখেছিলাম ছিপ দিয়ে কখনো মাছ ধরা হয় নাই, তাই যেন ছিপ যোগাড় করে রাখলাম। একটা পুকুরে আমি, মনির, হাসিব, সুমন দল বেঁধে ছিপ নিয়ে বসে পড়লাম। মাছ ধরা যে এতো বিরক্তিকর একটা কাজ আগে কি জানতাম। আধঘণ্টা বসে থেকে বিরক্ত হয়ে উঠে পড়লাম। কিন্তু দুপুরে যে মাছই খেতে হবে! জাল দিয়ে মাছ ধরতে চাই না। এদিকে পলাশ ভাই অন্য আরেকটা পাশের পুকুরে ছিপ নিয়ে বসলেন। অবাক করে দিয়ে উনি প্রতি পাঁচ মিনিটে একটা করে মাছ ছিপ দিয়ে ধরতে লাগলেন। আমার মনে হচ্ছিল টিভি’তে প্রচারিত ফেভিকল আঠার সেই বিজ্ঞাপনটি দেখছি, যেখানে ফেভিকল আঠা লাগিয়ে লাঠি ডুবিয়ে দিলেই মাছ উঠে আসছে। 


আমাদের বাবুর্চিদ্বয় রান্নায় যখন ব্যস্ত তখন আমাদের কেউ কেউ পুকুরে নেমে পড়ল জলকেলিতে। বাকীরা এখানে ওখানে ঘোরাঘুরি, আড্ডা চলতে লাগলো। দুপুরে খাবার রেডি হল, আলুভর্তা, মাছের তরকারি, ডাল, সালাদ। আলুভর্তাটা সেইরকম ছিল, অনেকদিন মনে থাকবে। তবে গতবারের মত এবার কামরাঙা’র ভাজিটা ছিল না... খুব মিস করেছি। হাজার হলেও আমি পেটুক মানুষ! মাছ যার যত খুশী খাও, আহ... 


শেষে বিকেল বেলা চা পান করে সেদিনের মত সেই খামার বাড়ী’কে বিদায় জানিয়ে আমরা ঢাকার পথ ধরি। আর এই ভ্রমণের মাঝ দিয়েই দীর্ঘ চার মাসের বিরতি শেষে আমার আবার ভ্রমণ শুরু হল। এরই মাঝে আরও একটা সেইরকম ট্যুর শেষ করে আগামী সপ্তাহে বড়দিনের ছুটিতে যাচ্ছি ভ্রমণ বাংলাদেশের সিগ্নেচার ইভেন্ট “স্বপ্নের সৈকতে এঁকে যাই পদচিহ্ন – ৫” এ যেখানে টেকনাফ হতে সমুদ্র সৈকত ধরে প্রায় ১০০ কিলোমিটার পথ তিনদিনে হেঁটে পৌঁছব কক্সবাজার। আগের চার বারে কখনোই যাওয়া হয় নাই, এবার সময় সুযোগ সব কিছু মিলে যাওয়ায় আর মিস দিচ্ছি না। এখন দেখা যাক কতটুকু হাঁটতে পারি!!! 

Translate

বোকা পর্যটকের কথা

মানুষ যেমন হঠাৎ করেই কারো প্রেমে পড়ে, ঠিক তেমনই করে আমিও প্রেমে পড়েছি ভ্রমণের। আজব এক নেশায় নেশাগ্রস্থ, কবে থেকে জানি না। তবে নিজের আর্থ-সামাজিক অবস্থানে লড়াই করে টিকে থাকার পর ভ্রমণে মনঃসংযোগ করতে উদ্যত হই। সেই থেকে যখনই সময়-সুযোগ হয় বেড়িয়ে পড়ি ঘর হতে, ভ্রমণের তরে। মজার ব্যাপার হল, আমি সাইক্লিস্ট নই, সাঁতার কাটতে পারি না, না পারি ট্র্যাকিং, হাইকিং, ক্লাইম্বিং। কোন ধরণের এডভেঞ্চারধর্মী কোন গুণই আমার নেই, শুধু আছে ভ্রমণের শখ আর অদম্য ইচ্ছাটুকু। আর সেই ইচ্ছা থেকেই সময় সময় আমার ঘুরে বেড়ানো আর সেই গল্পগুলো লিপিবদ্ধ করে রাখা এই ডায়েরীতে। আমার এই লেখাগুলো বিভিন্ন সময়, বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে এবং ব্যক্তিগত ডায়েরীতে লেখা ছিল; সেগুলো সব একত্রে সংরক্ষণ করে রাখার নিমিত্তেই এই ব্লগ। যদি আপনাদের কারো এই লেখাগুলো কোন কাজে লাগে তবে আমার পরিশ্রম কিছুটা হলেও সার্থক হবে।

পোস্ট সংরক্ষণাগার

যোগাযোগ ফর্ম

প্রেরণ