পুষ্পময় পুষ্পরাজ্যে পর্যটন

আমাদের দেশে পর্যটন মানেই সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য, নানান আনন্দ আয়োজন, আরামদায়ক হোটেল-মোটেল-কটেজ এর একটি ভারসম্যপূর্ণ সংমিশ্রন। আবার যারা এক্সট্রিম লেভেলের এডভেঞ্চারাস, তাদের জন্য পাহাড়ে ট্রেকিং, হাইকিং, অথবা গহীন অরণ্যে হারিয়ে যাওয়া মানেই পর্যটন। কিন্তু অতি সাধারণ মানুষের জন্য অতি সাধারণ কিছু বিষয়কে পুঁজি করে বিশ্বে বহু জায়গায় গড়ে উঠেছে নানান পর্যটন শিল্প। দরকার কিছুটা ভাবনা, কিছুটা ইচ্ছে আর কিছুটা উদ্দ্যোগ। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে এক তীর্থধাম দর্শন নিয়ে গড়ে উঠেছে এক বিশাল পর্যটন শিল্প। নিজস্ব পর্যটন ভাবনা এবং পর্যটন নিয়ে ব্যতিক্রম উদ্যোগ ভাবনা নিয়ে শুরু করেছি নতুন একটা সিরিজঃ “পর্যটন ভাবনায় বৈচিত্র এবং সম্ভাবনা”। গত পর্বে লিখেছিলাম ফলের হাঁট নিয়েঃ  

এবার আলোচনা করা যাক, পুষ্প তথা ফুল কেন্দ্রিক পর্যটন এর সম্পর্কে। দেশের নানান প্রান্তে গোলাপ, শাপলা, সর্ষেফুল ছাড়াও বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা ফুলের বাগান বা ক্ষেত কেন্দ্রিক পর্যটন বিগত কয়েকবছর যাবত জনপ্রিয় হচ্ছে। কাশ্মীর এ টিউলিপ ফুলকে কেন্দ্র করে মার্চ-এপ্রিল এর দিকে লাখো পর্যটকের সমাগম ঘটে। তাই আজ আলোকপাত করবো এমন কয়েকটি পর্যটন কেন্দ্র'র যেগুলোকে ঢেলে সাজালে, সুপরিকল্পনার মাধ্যমে চিত্তাকর্ষক পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব।


গোলাপগ্রাম, সাদুল্লাপুরঃ ঢাকার অদূরে তুরাগ নদীর পাড়ে অবস্থিত সাদুল্লাপুর গ্রাম। গত কয়েকবছর ধরে যার নাম ভ্রমণ প্রিয় মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়েছে। ঢাকার মিরপুরের দিয়াবাড়ি থেকে যেতে হবে বটতলা নৌকা ঘাট, সেখান থেকে সোজা সাদুল্লাপুর চলে যেতে পারবেন। আবার গাবতলী পেড়িয়ে তুরাগের বুক চিরে নৌপথে পৌঁছে যেতে পারেন এই গোলাপ গ্রামে। উত্তরার দিক থেকে বিরুলিয়া’র আকরাম বাজার হতেও সহজেই আসা যায় এই সাদুল্লাপুর গ্রামে। মূলত এই শীতকালেই বেশী পর্যটকের ভীড় পরিলক্ষিত হয় এই গোলাপ গ্রামে। খুব ভোরে রওনা দিয়ে সূর্য ওঠা সকালে শিশির ভেজা ঘাসে পা ভিজিয়ে যখন আপনি চারিদিকে সুবুজের বুকে লাল হয়ে ফুটে থাকা গোলাপ বাগানের মাঝ দিয়ে হেঁটে যাবেন, তখন এক অদ্ভুত ভাল লাগায় ছেয়ে যাবে আপনার হৃদয়-মন। পুরো সাদুল্লাপুর জুড়ে রয়েছে ফুলের বাগান, শুধু গোলাপ নয়; জারভারা, গ্লাডিওলাস, অর্কিড, রজনীগন্ধা সহ আরও নানান জনপ্রিয় ফুলের চাষ হচ্ছে এই সাদুল্লাপুর এবং বিরুলিয়া’র আশেপাশের গ্রামসমূহে। আর এই সকল ফুল সরবরাহ করা হয় ঢাকার শাহবাগ, খামারবাড়ি, আগারগাঁও সহ নানান ফুলের পাইকারী বাজারে। আর এই জন্য এই সাদুল্লাপুরেই রয়েছে একটি গোলাপ ফুলের বাজার। চাইলে ঢুঁ মারতে পারেন সেখানটায়ও। তো? কবে যাচ্ছেন গোলাপগ্রাম?  


লাল শাপলা’র সাতলা বিল, বরিশালঃ বরিশাল সদর থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরের উপজেলা উজিরপুর। এখানকারই এক সবুজে ছেয়ে থাকা গ্রাম সাতলা। ছোট নদী, হাওর আর বিলবেষ্টিত এই সাতলা গ্রামের সবুজের মাঝে লালে লালে ছেয়ে থাকা জলাশয়ে চোখ যেতেই আপনি হবেন বিমোহিত। জলের মাঝে সবুজ পাতার বুকে মুখ উঁচিয়ে জানান দিচ্ছে লাল শাপলার দল। সাতলা গ্রামের মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে একটি পাকা সড়ক, এই সড়কে বাস থেকে নেমে পড়লে দুদিকে চোখে পড়বে সবুজের সমারোহ সাথে সুবিশাল সাতলা বিল। বরিশাল জেলার উজিরপুর উপজেলার সাতলা ইউনিয়ন এর উত্তর সাতলা গ্রাম, হারতার কালবিলা, এবং এর পার্শ্ববর্তী আগৈলঝাড়া উপজেলার বাগধা ইউনিয়নের বাগদা ও খাজুরিয়া গ্রামের প্রায় ১,৬০০ হেক্টর জমি জুড়ে বিস্তৃত সাতলা বিল। এই বিলের প্রায় পুরোটা জুড়েই রয়েছে শাপলার রাজ্য। তবে সবচেয়ে বেশী শাপলা দেখা যায় নয়াকান্দি এবং মুড়িবাড়ী এলাকায়। আর এই বিলে শুধু লাল শাপলা নয়; রয়েছে সাদা এবং বেগুনী রঙের শাপলাও; যদিওবা সংখ্যায় তুলনামূলক কম। প্রাকৃতিকভাবেই অনেককাল জুড়েই এই বিলজুড়ে জন্মে হাজারে হাজার শাপলা, যা মূলত এই এলাকার মানুষ রান্নার সবজি হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন। আগস্ট মাসের শেষ থেকে শুরু করে অক্টোবর পর্যন্ত থাকে এই শাপলার সমাহার। পর্যটকের দল মৌসুম এলেই বরিশালের সাতলা এসে নৌকা নিয়ে ঘুরে বেড়ান এই সাতলা বিলে। খুব ভোরবেলা সাতলা পৌঁছে সূর্যের তেজ বেড়ে ওঠার আগ পর্যন্ত ঘুরে বেড়ান এই সাতলা বিলের লাল শাপলার জলতরঙ্গ’র মাঝে। ঢাকা থেকে নৌপথে বরিশাল গেলে সেখান থেকে বাসে শিকারপুর হয়ে অটোরিকশা করে চলে যেতে পারেন সাতলা। সড়ক পথে বরিশাল গিয়ে নথুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ড নেমে সেখান হতে বাস পরিবর্তন করে চলে যেতে পারেন সাতলা। আগামী মৌসুমে আপনার ভ্রমণ তালিকায় রাখতে পারেন এই শাপলা বিলে ভ্রমণ। 


শিমুলবাগান, সুনামগঞ্জঃ গত দুই মৌসুম জুড়ে ট্রাভেল ক্রেজ হিসেবে বিপুল জনপ্রিয় হয়েছে একটি ব্যক্তি উদ্দ্যোগে গড়ে ওঠা শিমুল বাগান। হ্যাঁ, সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের জাদুকাটা নদীর তীরের শিমুলবাগানের কথাই বলছি। বছর পনের আগে স্থানীয় ব্যবসায়ী, জয়নাল আবেদীন, তার নিজস্ব প্রায় আড়াই হাজার শতক জমিতে রোপন করেন সারি সারি শিমুলের চারাগাছ। এত বছর পর পরিনত এই শিমুলগাছগুলোতে বসন্ত এলেই আগুন লাগা ফাল্গুনের সত্যতা প্রমান করতে গাছে গাছে ফুটে হাজারো শিমুল। ঢাকা থেকে সুনামগঞ্জ হয়ে তাহিরপুর পাড়ি দিয়ে পৌঁছে যান মেঘালয়ের কোলঘেঁষা টেকেরঘাটে। মেঘালয়ের পাহাড়ের পাদদেশের নীলজলের জাদুকাটা নদী পাড়ের বারিক্কা টিলা ঘুরে চলে আসতে পারেন এই শিমুল বাগানে। ঘুরে বেড়ান সারা বাগান জুড়ে। রাতে থাকতে হলে থাকতে পারেন তাহিরপুরের কোন হোটেলে বা টেকেরঘাটে থাকা একমাত্র হোটেলে। বোনাস হিসেবে দেখতে পারেন কয়লাখনির পরিত্যাক্ত অঞ্চলে গড়ে ওঠা, হালের ক্রেজ, “নীলাদ্রি লেক” খ্যাত লেকটিও। 


কাশবন, দিয়াবাড়ী, ঢাকাঃ ঢাকার অদূরে মিরপুর বেড়িবাঁধ পেড়িয়ে দিয়াবাড়ী। এই দিয়া বাড়ী’র প্রায় পুরোটা শরত এলেই ছেয়ে যায় শ্বেতশুভ্র কাশফুলের সাদা চাঁদরে। বিকেলের শুরুতে চলে আসে ঝাঁকে ঝাঁকে পর্যটকের দল, নাগরিক জীবনের যান্ত্রিকতা থেকে মুক্তি পেতে। পশ্চিমে হেলান দিয়ে নীলাকাশে দাঁড়িয়ে থাকা সূর্যের আলোতে শ্বেতশুভ্র কাশফুলের দল পায় এক অপার্থিব রূপ। দিয়াবাড়ী’তে যতদূর চোখ যায়, পুরো প্রান্তর জুড়ে দেখা মেলে কাশবন আর কাশফুলের মেলা। শরতের নীলাকাশে শেষবেলার সোনালী সূর্যের মায়াবী আলো, পবিত্রতার শুভ্র আবির মাখা কাশফুল এর সাথে বাড়তি হিসেবে একটু পরপরই মাথার উপর ডানা মেলে উড়ে যায় হাওয়াই জাহাজ, জানান দিয়ে যায় তার উপস্থিতি। ভেঙ্গে দিয়ে যায় পিনপতন নীরবতা, প্রকৃতির মাঝে ডুব দেয়া খেয়ালি পর্যটকের দলের মোহ ভঙ্গ করতেই হয়ত। ঢাকার উত্তরা আর মিরপুর হতে রিকশা, অটো করে অতি সহজেই পৌঁছে যেতে পারেন এই মায়াবী ভুবনে। ইদানীংকার নাটক, টেলিফিল্ম আর সিনেমার জনপ্রিয় শ্যুটিং লোকেশন এই দিয়াবাড়ীর কাশবাগান। এখনি যেতে মন চাচ্ছে? লাভ নেই, অপেক্ষা করতে হবে আগামী শরতের; কারণ কিছুদিন হল ঝরেছে সব কাশফুলের দল। তবে শুধু দিয়াবাড়ী নয়, সারা বাংলাদেশ জুড়েই রয়েছে শরতের প্রতীক এই কাশফুলের বাগান। ঢাকার আশেপাশে দিয়াবাড়ী ছাড়াও মোহাম্মদপুর বেড়ীবাঁধ, আফতাব নগর, আশুলিয়া, সাভার সহ নানান জায়গায় দেখা মেলে কাশফুলের নরম ছোঁয়ার। ;)


হলুদ সরিষা ফুলের রাজ্য, সারা বাংলাজুড়েঃ ঢাকা-সাভার হাইওয়ে ধরে হেমায়েতপুর হয়ে সিঙ্গাইর রোড ধরে এগিয়ে গেলে পড়বে ধলেশ্বরী ব্রীজ। আর সেই ব্রীজ পেড়িয়ে পড়বে একটি বাজার, নাম বিন্নাডিঙ্গি বাজার। এখান থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরের একটি ছোট্ট গ্রাম মানিকনগর। এই মানিকনগর থেকে সিঙ্গাইর যাওয়ার পুরোপথ জুড়েই দুই পাশে রয়েছে সারিসারি সরিষা ক্ষেত। এখান থেকে মানিকগঞ্জের হরিরামপুর অথবা ঝিটকা, সবখানেই হলুদের রাজত্ব। চাইলে অন্যদিকে চলে যান, মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর, সিরাজদিখান অথবা টঙ্গিবাড়ী। সবখানেই এই শীতে চোখে পড়বে সারিসারি হলুদ সরষে ফুলের সমারোহ। এরুপে সারা বাংলা জুড়েই ছড়িয়ে রয়েছে সরিষা ফুলের সাম্রাজ্য। আর সেই সাম্রাজ্যে হারাতে বেশী কিছুর প্রয়োজন নেই; শুধু একটু ইচ্ছে আর কষ্ট করে বেড়িয়ে পড়তে হবে। ব্যস, আর কি? এরপর চোখে সর্ষে ফুল দেখবেন, সত্যি বলছি। ;)


নানান জাতের ফুলের রাজ্য, গদখালী, যশোরঃ রজনীগন্ধা, গোলাপ, গাঁদা, গ্লাডিওলাস, জারবেরা, জিপসি, ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকাসহ নানা জাতের ফুল এর ডালি সাজিয়ে বসে আছে এক প্রত্যন্ত গ্রাম, নাম গদখালী। যশোর শহর থেকে ২৫-৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে দুটি থানা ঝিকরগাছা ও শার্শা; আর এখানকার প্রায় চার হাজার বিঘা জমি জুড়ে ফুলের চাষ করছে স্থানীয় কৃষকেরা। ফলের হাঁট (এই সিরিজের আগের পর্ব দ্রষ্টব্য) এ শুধু নয়, উত্তরবঙ্গে ফুলের রাজ্যও রয়েছে। পথের দু’পাশে লাল, নীল, হলুদ, বেগুনি আর সাদা রঙের এক বিস্তীর্ণ চাঁদর যেন বিছিয়ে রেখেছে চরাচরে। মাঠের পর মাঠ জুড়ে ফুলের ক্ষেত। ফুলই এখানে ফসল। বাতাসে ফুলের মিষ্টি সৌরভ, মৌমাছির গুঞ্জন, প্রজাপতির ডানার জৌলুশ আর রঙের অফুরান সৌরভের সমাহার। এক কথায় মাতিয়ে তোলার মতো পরিবেশ। যশোরগামী যে কোন বাসে করে যশোর-বেনাপোল রোড এর গদখালী বাজারে নেমে যেতে হবে। সেখান হতে রিকশা ভ্যানে করে পানিসারা যেতে হবে আপানকে। আর এই যাত্রাপথেই দুপাশে আপনার চোখে পড়বে নানান জাতের সব ফুলের সারি; যার রূপ আপনাকে করবে বিমুগ্ধ, আপনি কিছুটা সময়ের জন্য হলেও হারাবেন কল্পলোকের অলীক ভুবনে। 


আগুনলাগা কৃষ্ণচূড়া, নাটোরঃ বসন্ত এলেই জায়গায় জায়গায় লাগে আগুন, আর এজন্যই বলে আগুন লাগা ফাল্গুনে... প্রতি বসন্তে ঢাকার চন্দ্রিমা উদ্যানের দুই’পাশ ছেয়ে যায় লালরঙা আগুনে। তা দেখতে ভীড় জমায় নগরবাসী। কিন্তু উত্তরের জেলা শহর নাটোর কৃষ্ণচূড়ার সমাহার এর কথা আলাদা করে বলতেই হয়। এক সময় নাটোরের পরিচিতি ছিলো দুষ্প্রাপ্য ফুলের শহর হিসেবেও। নাটোরের সৌখিন রাজন্যবর্গ তাদের রাজবাড়ী চত্বরকে সাজাতে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে নিয়ে আসেন অসংখ্য ফুল গাছ। গড়ে তোলেন পুষ্প রাজত্ব। নাটোরের রাণী ভবানী রাজবাড়ী আর উত্তরা গণভবনে এখনো শোভা বর্ধন করছে নাগালিঙ্গম, ম্যাগনোলিয়া, হৈমন্তি সুরভিকা, এগপ্লান্ট, কর্পূর, পারিজাতের মত বিলুপ্ত প্রায় ফুলের গাছ। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায়, হারিয়েছে সেইসব ফুলের বাগান, হারিয়েছে নাগরিক যান্ত্রিকতার পদতলে। ২০০২ সালে “স্বজন সমাবেশ” নামক একটি সামাজিক সংগঠনের উদ্যোগে এবং নাটোর পৌরসভার সহযোগিতায় রাজপথের দুধারে লাগানো হয় প্রায় দুই হাজার ফুলের গাছে যার বেশীরভাগই কৃষ্ণচূড়া। এছাড়াও রয়েছে কাঞ্চন, সোনালু, কদম ইত্যাদি। কিন্তু সবগাছে টিকে থাকে নাই, টিকে গেছে কৃষ্ণচূড়া’র দল। প্রায় পুরো নাটোর শহরের রাজপথই বসন্তের লগনে এক আগুন রাঙ্গা লালিমায় ছেয়ে যায়। আসছে বসন্তে ঢুঁ মেরে আসতে পারেন নাটোর থেকে। অথবা, আপনার আশেপাশের কোন কৃষ্ণচূড়ার সমাহার থেকে। 


বোকা পর্যটকের পর্যটন ভাবনাঃ আসলে এরকম ফুলের বাগানগুলো নিয়ে আমাদের পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা উচিত। এক বোটানিক্যাল গার্ডেন ছিল ভরসা, তাও এখন অতীত। পার্শ্ববর্তী দেশসমূহে রয়েছে নানান ফুলের বাগান কেন্দ্রিক পর্যটন কেন্দ্র। ভারতের কাশ্মীরের টিউলিপ গার্ডেন মাত্র একমাস খোলা থাকে, মার্চ এর শেষ হতে এপ্রিল পর্যন্ত। আর সেই সময়কে ঘিরেই প্রচুর পর্যটক ভীড় জমায় সেখানে। এরকম ভারতের নানান জায়গাতেই রয়েছে। অথচ আমাদের দেশের লাল শাপলার সাতলা বিল অথবা গদখালী’র ফুলের বাগান বা সাদুল্লাপুরের গোলাপ বাগানগুলো একটু পরিকল্পনা আর সহযোগিতা পেলে ফুল চাষের পাশাপাশি অবদান রাখতে পারে পর্যটন শিল্প’র দিকেও। কিন্তু এসব দিকে নজর দেয়ার কি কেউ আছে? জানি না, জানা নেই। এখন পর্যটন হয়ে গেছে শুধু প্রচারণার অংশ। যে কোন পণ্যের প্রসারে প্রচারণা অবশ্যই দরকার; কিন্তু তার আগে দরকার কোয়ালিটি প্রোডাক্ট। তাই পর্যটন শিল্প বিকাশে আগে অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি গড়ে তুলতে হবে পরিকল্পিত পর্যটন কেন্দ্র, আনতে হবে নতুনত্ব, ভাবতে হবে ভিন্নভাবে। এক মালদ্বীপ তার দ্বীপসমূহ আর জলরাশি’কে কেন্দ্র করেই গড়ে তুলেছে বিশাল পর্যটন শিল্প; যা তাদের জাতীয় আয়ে বিশাল ভুমিকা রাখছে। তাই যথাযথ কর্তৃপক্ষের উচিত সভা-সেমিনার-র্যা লী আর মেলা কেন্দ্রিক প্রচারণায় মনোনিবেশ কম করে সঠিক পর্যটন পরিকল্পনা এবং এগুলোর সঠিক বাস্তবায়ন এ কাজ করা। তাহলেই হয়ত এগিয়ে যাবে এদেশের পর্যটন শিল্প। এক কক্সবাজার আর সুন্দরবন দিয়ে পর্যটন শিল্প কতদূর আগাবে তা প্রশ্ন সাপেক্ষ। স্বপ্ন দেখি সম্ভাবনাময় পর্যটন শিল্পের। 


ছবি কৃতজ্ঞতাঃ

(১) গোলাপগ্রাম, সাদুল্লাপুর - https://unb.com.bd/

(২) শাতলা বিল, বরিশাল - https://barishalbd.com/

(৩) শিমুল বাগান, সুনামগঞ্জ - https://ajker-comilla.com/

(৪) দিয়াবাড়ী, ঢাকা - https://ournewsbd.net/

(৫) সরিষা ফুলের রাজ্য - বোকা পর্যটক

(৬) গদাখালী, যশোর - https://shampratikdeshkal.com/

(৭) আগুনলাগা কৃষ্ণচূড়া, নাটোর - https://www.banglatribune.com/

মন্তব্যসমূহ

Translate

বোকা পর্যটকের কথা

মানুষ যেমন হঠাৎ করেই কারো প্রেমে পড়ে, ঠিক তেমনই করে আমিও প্রেমে পড়েছি ভ্রমণের। আজব এক নেশায় নেশাগ্রস্থ, কবে থেকে জানি না। তবে নিজের আর্থ-সামাজিক অবস্থানে লড়াই করে টিকে থাকার পর ভ্রমণে মনঃসংযোগ করতে উদ্যত হই। সেই থেকে যখনই সময়-সুযোগ হয় বেড়িয়ে পড়ি ঘর হতে, ভ্রমণের তরে। মজার ব্যাপার হল, আমি সাইক্লিস্ট নই, সাঁতার কাটতে পারি না, না পারি ট্র্যাকিং, হাইকিং, ক্লাইম্বিং। কোন ধরণের এডভেঞ্চারধর্মী কোন গুণই আমার নেই, শুধু আছে ভ্রমণের শখ আর অদম্য ইচ্ছাটুকু। আর সেই ইচ্ছা থেকেই সময় সময় আমার ঘুরে বেড়ানো আর সেই গল্পগুলো লিপিবদ্ধ করে রাখা এই ডায়েরীতে। আমার এই লেখাগুলো বিভিন্ন সময়, বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে এবং ব্যক্তিগত ডায়েরীতে লেখা ছিল; সেগুলো সব একত্রে সংরক্ষণ করে রাখার নিমিত্তেই এই ব্লগ। যদি আপনাদের কারো এই লেখাগুলো কোন কাজে লাগে তবে আমার পরিশ্রম কিছুটা হলেও সার্থক হবে।

পোস্ট সংরক্ষণাগার

যোগাযোগ ফর্ম

প্রেরণ