দিল্লী আগ্রা জয়পুর!!! কম খরচে ঘুরে আসুন গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেল

 


আগের পোস্টগুলোতে আমরা আলোচনা করেছি দিল্লী, সিমলা, মানালি, কাশ্মীর ভ্রমণের খুঁটিনাটি বিষয়, বাজেট এবং পরিকল্পনা নিয়ে। আজ না হয় চলুন ঘুরে আসি গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গাল খ্যাত দিল্লী-জয়পুর-আজমীর-আগ্রা হতে। মূলত গুগল ম্যাপে গিয়ে দিল্লী জয়পুর আগ্রা এই তিনটি জায়গা সিলেক্ট করলে একটা ত্রিভুজ আকৃতি ধারন করে, আর এই তিন জায়গায় রয়েছে ভারতের প্রায় তিন চতুর্থাংশ ঐতিহাসিক নিদর্শন, স্বর্ণালী সময়ের। আর এই দুইয়ের যোগসূত্রে এই তিন এলাকা ভ্রমণ’কে অভিহিত করা হয় Golden Triangle Tour of India। প্রথমেই আপনার একটি বৈধ পাসপোর্ট এবং উহাতে ভারত ভ্রমণের মেয়াদসহ ভিসা থাকা জরুরী। আসুন জেনে নেই এ ব্যাপারে করণীয় বিষয়গুলোঃ

পাসপোর্ট ও ভিসাঃ

প্রথমেই আলোচনা করা যাক পাসপোর্ট করা নিয়ে। পাসপোর্ট করার নিয়মকানুন সবাই কমবেশী জানেন। অনলাইনে পাসপোর্টের জন্য আবেদন ফর্ম এবং পাসপোর্ট সংক্রান্ত নির্দেশিকা পাওয়া যাবে এই ঠিকানায়ঃ http://www.passport.gov.bd/ যেখানে Online MRP Instruction নামে একটি মেনুবার আছে, এখানে ক্লিক করলে ১৪ পাতার একটি নির্দেশিকা পিডিএফ ফাইল আকারে পাবেন। এখান হতে পাসপোর্ট সংক্রান্ত যাবতীয় প্রয়োজনীয় তথ্য পেয়ে যাবেন। সাথে অনলাইন এপ্লিকেশন ফর্ম ফিলআপ করে নিতে পারবেন এখান হতেই। 

এবার পাসপোর্ট হাতে পাওয়ার পর, দরকার হবে ভারতীয় ভিসা। ভারতীয় ভিসা’র জন্য বর্তমানে “ষ্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া” পরিচালিত ভারতীয় ভিসা সেন্টারের ওয়েবসাইট এর মাধ্যমে অনলাইনে আবেদন জমা দিতে হয়। বর্তমানে ভারতীয় টুরিস্ট ভিসা প্রসেসিং আরও সহজ হয়েছে, ইটোকেন ডেট ছাড়াই এখন ঢাকার শ্যামলীস্থ ভারতীয় ভিসা প্রসেসিং সেন্টারে আবেদনপত্র জমা নিচ্ছে, তবে এক্ষেত্রে ভ্রমনের তারিখের (০৭-৩০ দিন মেয়াদ ব্যবধানে) বাস (শ্যামলী, সৌহার্দ, মৈত্রী), ট্রেন অথবা প্লেনের কনফার্ম টিকেট থাকতে হবে। খুব শীঘ্রই সারা দেশেই ইটোকেন তুলে দেয়া হবে বলে গতকালই ভারতীয় হাই কমিশনার জানিয়েছেন। 

যেহেতু এখানে টুরিস্ট ভিসার কথা আলোচনা করছি, তাই একটা কথা বলা প্রয়োজন। টুরিস্ট ভিসার জন্য সলভেন্সি প্রুভ হিসেবে আপনার কমপক্ষে ১৫০ ইউএস ডলার সমপরিমাণ অর্থ পাসপোর্টে এন্ডোর্স করতে হবে অথবা ব্যাংক স্টেটমেন্ট জমা দিতে হবে। তবে সবচেয়ে বেটার ডলার এন্ডোর্স করা। আমার এক বন্ধুর ব্যাংক স্টেটমেন্ট এর ট্রানজেকশন প্যাটার্ন এর কারণে ভিসা এপ্লিকেশন রিফিউজ হয়েছে। আপনি চাইলে আপনার ইন্টারন্যাশনাল ক্রেডিট কার্ড দিয়েও ডলার এন্ডোর্স করাতে পারেন। http://www.ivacbd.com/visas_and_document.php এই ঠিকানায় দেয়া নির্দেশিকা হতে সহজেই জেনে নিতে পারবেন আপনার ভিসা আবেদনের জন্য কি কি কাগজপত্র লাগতে পারে। 

সাধারণত টুরিস্ট ভিসা’র জন্য যা যা লাগেঃ

* ২”X২” সাইজের পাসপোর্ট সাইজের ছবি (দুই কপি)। (অনলাইন আবেদনপত্র জমা দেয়ার ক্ষেত্রে এই ছবিই স্ক্যান করে দেবেন) 

* জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি 

* কর্মজীবীদের জন্য অফিস হতে অনাপত্তিপত্র (NOC), ব্যবসায়ীদের জন্য আপডেট ট্রেড লাইসেন্সের ফটোকপি। অফিস পরিচয়পত্র (এমপ্লয়মেন্ট আইডি কার্ড) 

* ভিজিটিং কার্ড 

* কমিশনার সার্টিফিকেট (ক্ষেত্র বিশেষে) 

* বর্তমান ঠিকানার সাম্প্রতিক কোন ইউটিলিটি বিলের ফটোকপি।  

এখানে মনে রাখবেন, ইউটিলিটি বিলে ঠিকানা যেভাবে লেখা থাকবে, ঠিক সেইভাবে ভিসা এপ্লিকেশন ফর্মে দিতে হবে। উদাহরণ স্বরূপ, আপনি পাসপোর্ট করার সময় যে বাসায় ছিলেন, এখনো সেখানেই আছেন। ঠিকানা ১০০৪, বিষ্ণু চরন দাস স্ট্রীট, লালবাগ, ঢাকা। কিন্তু আপনার ইউটিলিটি বিলে লেখা আছে, ১০০৪, বি সি দাস স্ট্রীট, লালবাগ, ঢাকা। এক্ষেত্রে আপনি ইউটিলিটি বিলেরটাই আবেদনপত্রে দিবেন। 

উল্লেখ্য যে, ভিসা আবেদনে চারটি বিষয় বিবেচনা করা হয়ঃ (১) আপনি কোন দেশের নাগরিক (এর জন্য জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি), (২) আপনার স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা (ইউটিলিটি বিলের ফটোকপি এবং কমিশনার সার্টিফিকেট (ক্ষেত্র বিশেষে) এর জন্য প্রয়োজন), (৩) আপনার পেশার সত্যতা (এজন্য এনওসি, আইডি কার্ড, এবং ভিজিটিং কার্ড; ব্যবসায়ীদের জন্য আপডেট ট্রেড লাইসেন্স এবং ভিজিটিং কার্ড) এবং (৪) সলভেন্সি (এজন্য নুন্যতম ১৫০ ইউএস ডলার এন্ডোর্সমেণ্ট)।  

তো আর কি? এবার পাসপোর্ট এবং ভিসা পর্ব শেষ, আসুন শুরু করি আমাদের আজকের গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গাল যাত্রা।    


ভ্রমণ পরিকল্পনা 

আমাদের ভ্রমণ পরিকল্পনা তিনটি ধাপে আলোচনা করা হল। প্রথমে যাতায়াতের পথ, খরচ এবং সময়সূচী নিয়ে আলোচনা রইল। এরপর থাকা এবং খাওয়ার ব্যাপারগুলো আলোচনা করব। সবার শেষে কি কি দেখবেন এবং কিভাবে দেখলে সবচেয়ে ভাল হয়, সেই ব্যাপারে আলোকপাত করা হল। তো আর কি? দেরী না করে শুরু করা যাক আজকের কম খরচের ঘোরাঘুরির প্ল্যান। 

কিভাবে যাবেনঃ

যদি সময় এবং খরচের একটা সামঞ্জস্যপূর্ণ ব্যবহারের কথা চিন্তা করি তাহলে প্রথমেই বলব, আপনি ঢাকা থেকে শ্যামলী-বিআরটিসি (ডিরেক্ট ট্রানজিট) বাসে কলকাতা রওনা হবেন। কারন? একটাই, এই বাস ফেরিঘাটে লাইন না দিয়ে সরাসরি ফেরিতে উঠে যায়। ফলে কোন কারনে ফেরিঘাটে আটকে পড়লে পরেরদিনের “রাজধানী এক্সপ্রেস” মিস করবেন। ভোরবেলা বাস পৌঁছবে বর্ডার, দুইপ্রান্তে ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ করে একই বাসে কলকাতা পৌঁছতে পৌঁছতে বেলা বারোটা বেজে যাবে। নিউমার্কেট এলাকার কোন রেস্টুরেন্টে লাঞ্চ সেরে নিয়ে চলে যান হাওড়া রেল ষ্টেশন। আরও আগে যদি পৌঁছে যান সেই ক্ষেত্রেও সোজা হাওড়া চলে যান। এখানকার ক্লকরুমে লাগেজ রাখার ব্যবস্থা আছে, নামমাত্র ভাড়ার বিনিময়ে। এখানে ব্যাগ রেখে বিকেল চারটা পর্যন্ত ঘুরে বেড়ান কলকাতা, চাইলে দেখে আসুন ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল। বিকেল বেলা ০৪:৫০ এর “রাজধানী এক্সপ্রেসে” চেপে বসুন, খাওয়া আর আড্ডা, রাতের বেলা একটা আরামের ঘুম দিয়ে সকাল ১০:৩০ নাগাদ পৌঁছবেন দিল্লী। 

কলকাতা টু দিল্লী ট্রেন শিডিউল

এবার দিল্লী ষ্টেশন হতে বের হয়ে হাতের বাম দিকেই পাবেন মেট্রো ষ্টেশন। আপনি যে এলাকায় থাকতে ইচ্ছুক সেখানকার টিকেট কেটে চলে যান সেখানে। চাইলে ট্যাক্সি ভাড়া করেও যেতে পারেন। দিল্লী ভ্রমণের ইতিবৃত্ত পাবেন এই পোস্টেঃ দিল্লী হিল্লি (নিজে নিজে ঘুরে আসুন দিল্লীর আনাচে কানাচে) ও হ্যাঁ, যারা স্বল্প খরচে ভ্রমণে ইচ্ছুক, তাদের জন্য এই নোট মাস্ট, এখানে সব বিস্তারিত পাবেন। এখন দিল্লীর দর্শনীয় স্থানগুলো আপনি চাইলে একদিনে দেখতে পারেন, চাইলে দুই-তিন দিন সময় নিয়ে দেখতে পারেন। নির্ভর করে আপনার সময় এবং বাজেট এর উপর। উপরের নোট পড়ে দেখলেই আপনি আপনার প্ল্যান করে ফেলতে পারবেন। 

এবার দিল্লী হতে চলে আসুন আজমির শরিফ, ধর্মীয় তীর্থস্থান। এখানে আপনার ইচ্ছে মত সময় দিয়ে চাইলে ঐ দিনই চলে যেতে পারেন জয়পুর। অথবা অইদিন আজমির থেকে পরদিন জয়পুর। ইচ্ছেটা আপনার। আবার উল্টোটাও করতে পারেন, জয়পুর হয়ে আজমির। চাইলে আগ্রা-জয়পুর ভ্রমণ শেষে আজমির হয়ে কলকাতা। সবটাই আপনার ইচ্ছের উপর। তো আমাদের আলোচনায় আমরা দিল্লী হতে চলে আসলাম আজমির। ভাড়া ২০০ রুপী থেকে ২,০০০ রুপীর মধ্যে; ট্রেন এবং ট্রেনের আসনের ভিন্নতা অনুযায়ী। আজমির জংশন নামের রেল ষ্টেশন থেকে আজমির শরিফ মাত্র এক কিলোমিটার রাস্তা, পায়ে হেঁটে গেলে দশ/পনের মিনিট। এখানে ৫০০ রুপি থেকে ৫,০০০ রুপির মধ্যে হোটেল পাবেন। আপনার বাজেট অনুযায়ী একটাতে রাত্রি যাপন করতে পারেন। আর এখানে রাত্রি যাপন না করে রাতের ট্রেনে জয়পুর চলে যেতে পারেন। 

ঘণ্টা দুয়েকের যাত্রা মাত্র, তাই অনায়াসেই জয়পুর গিয়ে রাত্রি যাপন করা যায়।    এবার পরের দিন সকালের নাস্তা শেষে জয়পুর ভ্রমণে বের হয়ে পড়ুন। চাইলে চারজনের দল হলেও একটা রিজার্ভ ট্যাক্সি নিয়ে নিতে পারেন। অথবা নানান প্যাকেজ আছে, সেগুলোতে ঘুরে বেড়াতে পারেন। চাইলে বাসেও ঘুরে বেড়াতে পারেন। ২০০ রুপী থেকে ২,০০০ রুপি খরচ পড়বে এতে। আবার জয়পুর নাইট সিটি ট্যুর আছে, ২০০-৫০০ রুপি খরচের মধ্যে। এগুলো উপভোগ করে এদিনের মত জয়পুরেই থেকে যান। অথবা, বিকেল পাঁচটার ট্রেনে রওনা হয়ে যান আগ্রা, রাত দশটার আগে পৌঁছে যাবেন। আর রাত্রি জয়পুরে যাপন করলে পরদিন ভোর চারটা পনের অথবা বেলা এগারটা পঁয়তাল্লিশ এর ট্রেনে আগ্রা। তবে হয় রাতে নইলে ভোরের ট্রেনে চলে যাওয়া বেটার, এতে একদিন বাঁচবে। আর যাদের হাতে সময় আছে, তারা সুবিধামত ট্রেন ধরে চলে যান। 

আগ্রা পৌঁছে একদিনে ঘুরে দেখুন আগ্রা ফোর্ট, তাজমহল সহ আরও নানান গন্তব্য। যেহেতু আপনি এখানে এক রাত থাকবেন, তাই আমার পরামর্শ একদিন শুধু তাজমহল ঘুরে দেখুন মন ভরে। পরেরদিন বাকীগুলো। এরপরের দিন সকাল ছয়টা বিশের একটা ট্রেন ছেড়ে যায় কলকাতার উদ্দেশ্যে, সেটায় চেপে বসলে একদিন পর ভোর চারটায় আপনাকে নামিয়ে দিবে কলকাতায়। ফলে আপনি সেদিনের সকালের বাস ধরতে পারবেন ঢাকার উদ্দেশ্যে। ফলে সেদিন রাতের মধ্যেই ঢাকা।   

কি কি দেখবেন?

এই পোস্টেঃ দিল্লী হিল্লি (নিজে নিজে ঘুরে আসুন দিল্লীর আনাচে কানাচে) dill  দিল্লী ভ্রমণের পূর্ণাংগ পরিকল্পনা খুঁজে পাবেন। বিস্তারিত তথ্য সাথে দিল্লী মেট্রো রেল দিয়ে সহজে ঘুরে বেড়ানোর পরিপূর্ণ প্ল্যানিং।

আজমীরঃ আজমীর এসে মূলত মুসলিম পর্যটক মাত্রই ছুটে যান আজমীর শরিফ জিয়ারত করতে। এখানে শুধু মুসলিম নয়, সারা ভারত হতে নানান ধর্ম, বর্ণ আর পেশার মানুষ এসে ভিড় করেন প্রতিদিন। আজমীর জংশ্ন এ রেল হতে নেমে পায়ে হেঁটে মিনিট দশেকের মধ্যে পৌঁছে যেতে পারবেন সেখানে। এছাড়া আজমীর এর সামগ্রিক দর্শনীয় স্থান এর তালিকা দিতে গেলে যে যে স্পটগুলো এম্নিতেই চলে আসবে সেগুলো হলঃ   দরগাহ শরীফ, হযরত মিরা সাঈদ হুসেইন এর দরগাহ, আধাই-দ্বীন কা ঝনপাড়া মসজিদ, শাহজাহান এর মসজিদ, আকবরি মসজিদ, আকবর প্যালেস অ্যান্ড মিউজিয়াম, নাসিয়ান জৈন মন্দির, নারেলি জৈন মন্দির, রাঙ্গজি মন্দির, সাবিত্রী মন্দির, আনা সাগর লেক, ফয় সাগর লেক, বুলান্দ দারওয়াজা, ভগচন্দ এর কুঠি, দৌলতবাগ গার্ডেন, বিড়লা সিটি ওয়াটার পার্ক, সরকারী জাদুঘর, সিটি স্কয়ার মল ইত্যাদি। 

জয়পুরঃ জয়পুর’কে বলা হয় পিঙ্ক সিটি। নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত পাথর এর কল্যাণে এই নামকরণ হয়েছে। লালচে গোলাপী সকল স্থাপনায় ঠাসা জয়পুর শহর। এই শহরে এলে পরে আপনি ভেবে পাবেন না, কোনটা রেখে কোনটা দেখবেন। জয়পুরের দর্শনীয় স্থানের তালিকা হতে পারে এমনঃ  আম্বার ফোর্ট এন্ড প্যালেস, হাওয়া মহল, জল মহল, নাহারগড় ফোর্ট, ফোর্ট অফ জয়পুর, জয়গড় ফোর্ট, রাজস্থান ডেজার্ট সাফারি, রামবাগ প্যালেস, সিটি প্যালেস, জন্তর মন্তর, এলবার্ট হল মিউজিয়াম, গালতাজি (বানর) মন্দির, বিড়লা মন্দির, এলিফ্যান্ট সাফারী, পান্না মিনা’র কুণ্ড, গেটওয়ে অফ গনেশ পাল ইত্যাদি।

আগ্রাঃ সম্রাট শাহজাহানের ভালবাসার তাজমহল এর কারনে আগ্রা আজ বিশ্বব্যাপী পরিচিত, কে না জানে, চেনে এই ভালবাসার স্মৃতি চিহ্নকে। তাই আগ্রা দর্শনের প্রথমেই থাকবে তাজমহল আর তার সাথে অতি অবশ্যই আগ্রা ফোর্ট। পূর্ণাঙ্গ তালিকাটি হতে পারে এমনঃ    ফতেহপুর সিক্রি, ইতিমাদ-উদ-দৌলাহ এর মাজার, শীষ মহল, মেহতাব বাগ, জামে মসজিদ, শাহ বুর্জ, আঙ্গুরী বাগ, জাওয়াব মসজিদ, তাজ মিউজিয়াম, বিরবল ভবন, ওয়াইল্ড লাইফ অফ আগ্রা ইত্যাদি।


খরচপাতির হিসেবঃ

প্রথমেই যাতায়াতঃ ঢাকা থেকে কলকাতা আপনি যেতে পারেন ৭০০-২০০০ টাকায় স্থল পথে, আর আকাশ পথে গেলে নুন্যতম ৫,৫০০-৬,০০০ টাকা। কলকাতা থেকে ট্রেনে ৮০০ টাকা থেকে শুরু করে ৭,৫০০ টাকা পর্যন্ত ভাড়ায় যেতে পারেন ভিন্ন ভিন্ন ট্রেন এর ভিন্ন ভিন্ন ক্লাসে। এই ব্যাপারে বিস্তারিত পাবেন দিল্লী’র নোটে। এরপর দিল্লী থেকে আজমীর, আজমীর থেকে জয়পুর, জয়পুর থেকে আগ্রা এই জায়গাগুলো নুন্যতম ভাড়া ৩০০-৫০০ টাকার মধ্যে, তবে এটাই সর্বনিম্ন। কিন্তু দিল্লীর গরমের কথা মাথায় রেখে আপনি এসি ক্লাসে ভ্রমণ করলে সেটাই ভাল হবে। এসি ক্লাস ১২০০-১৫০০ টাকা থেকে শুরু। আর আগ্রা থেকে কলকাতা ফিরতে পারবেন সেই ৬০০-৬,০০০ টাকায়,  ভিন্ন ভিন্ন ট্রেন এর ভিন্ন ভিন্ন ক্লাসে। এখন নিজের পছন্দের টিকেটর ভাড়া জেনে নিন এই লিংক থেকেঃ http://www.indianrail.gov.in/

খাবার খরচঃ আমার এই হিসেব করতে একটু ঝামেলা হয়, কেননা আমি নিজে পেটুক মানুষ, শুদ্ধ ভাষায় যাকে ভোজন রসিক বলে। ভারতে গড়পরতা আপনি সকালের নাস্তায় ১০০ টাকা (৮০ রুপী হিসেবে ধরে) আর দুপুর এবং রাতের খাবারে ২৫০ টাকা করে ৫০০ টাকা, মোট ৬০০ টাকা প্রতিদিন ধরে রাখতে পারেন। এখন আপনি চাইলে এর চেয়ে কমেও চালিয়ে নিতে পারবেন, আবার এর চেয়ে বেশী টাকায় মনের মত করে খেতে পারবেন।

আবাসনঃ দিল্লী এবং আশেপাশের এলাকায় হোটেল ভাড়া মুসলিম অদ্ধুসিত এলাকায় একটু কম হয়, আর বাংলাদেশীদের হোটেল পেতেও ঝামেলা কম হয়। আসলে সকল হোটেলের বাংলাদেশী গেস্ট রাখার পারমিশান থাকে না এবং যাদের থাকে তাদের এতো বেশী ফরমালিটিস পূরণ করতে হয় যে, তারা নিরুৎসাহিত হয়। ভাল হয় যদি যাত্রার আগেই অনলাইনে বা কোন এজেন্টের মাধ্যমে বুকিং দিয়ে যান। ডবল নন-এসি রুমের নুন্যতম ভাড়া ১০০০-১২০০ টাকা, এসি ২,০০০-২,৫০০ নূন্যতম। এটা হল ষ্ট্যাণ্ডার্ড হিসেব। আপনি খুঁজে পেলে এবং থাকতে পারলে এর চেয়ে কম বা বেশী রেটে বহু হোটেল পাবেন।

সাইট সিয়িং এর টিকেট খরচঃ এর বাইরে মুখ্য খরচ থাকে এন্ট্রি ফি, এই জোনে এই খরচটা অনেক বেশী। দিল্লীর জন্য সকল তথ্য দিল্লীর নোটে পেয়ে যাবেন। জয়পুরে আম্বার ফোর্ট ১৫০ রুপী, হাওয়া মহল ৫০ রুপী, নাহারবাগ ফোর্ট ৫০ রুপী, জয়গড় ফোর্ট ৭৫ রুপী, সিটি প্যালেস ৩০০ রুপী... আগ্রাতে তাজমহল ১,০০০ রুপী, আগ্রা ফোর্ট ৫৫০ রুপী, ফতেহপুর সিক্রি ৫১০ রুপী, আকবর’স টম্ব ২১০ রুপী... এভাবে সকল স্পটের টিকেট খরচ দেয়া সম্ভব না। যে যে স্পট দেখবেন, সেগুলোর লিস্ট করে একটু নেটে খোঁজ করলেই সব পেয়ে যাবেন।

এখন এর সাথে টুকিটাকি খরচ যোগ করে বের করে ফেলুন আপনার হিসেব। আমার মতে ২৫,০০০-৩০,০০০ টাকায় ষ্ট্যাণ্ডার্ড মানে এই ট্যুর দেয়া সম্ভব। তবে ডিলাক্স বা লাক্সারি নয়। আর হ্যাঁ, গ্রুপে গেলে দিল্লী থেকে গাড়ী ভাড়া করে পুরো ট্রায়াঙ্গাল ঘুরে ফের দিল্লী এসে গাড়ী ছেড়ে দিতে পারেন। এতে ট্রিপ বেশ উপভোগ করতে পারবেন, তাড়া কম থাকবে, যেখানে ইচ্ছে সেখানে বেশী সময় দিতে পারবেন। এই তো? আর কি?

মন্তব্যসমূহ

Translate

বোকা পর্যটকের কথা

মানুষ যেমন হঠাৎ করেই কারো প্রেমে পড়ে, ঠিক তেমনই করে আমিও প্রেমে পড়েছি ভ্রমণের। আজব এক নেশায় নেশাগ্রস্থ, কবে থেকে জানি না। তবে নিজের আর্থ-সামাজিক অবস্থানে লড়াই করে টিকে থাকার পর ভ্রমণে মনঃসংযোগ করতে উদ্যত হই। সেই থেকে যখনই সময়-সুযোগ হয় বেড়িয়ে পড়ি ঘর হতে, ভ্রমণের তরে। মজার ব্যাপার হল, আমি সাইক্লিস্ট নই, সাঁতার কাটতে পারি না, না পারি ট্র্যাকিং, হাইকিং, ক্লাইম্বিং। কোন ধরণের এডভেঞ্চারধর্মী কোন গুণই আমার নেই, শুধু আছে ভ্রমণের শখ আর অদম্য ইচ্ছাটুকু। আর সেই ইচ্ছা থেকেই সময় সময় আমার ঘুরে বেড়ানো আর সেই গল্পগুলো লিপিবদ্ধ করে রাখা এই ডায়েরীতে। আমার এই লেখাগুলো বিভিন্ন সময়, বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে এবং ব্যক্তিগত ডায়েরীতে লেখা ছিল; সেগুলো সব একত্রে সংরক্ষণ করে রাখার নিমিত্তেই এই ব্লগ। যদি আপনাদের কারো এই লেখাগুলো কোন কাজে লাগে তবে আমার পরিশ্রম কিছুটা হলেও সার্থক হবে।

পোস্ট সংরক্ষণাগার

যোগাযোগ ফর্ম

প্রেরণ