মাত্র ৩,৫৫০ টাকায় ঘুরে আসুন হালের ক্রেজ ভারতের ক্রাংসুরি ফলস আর সোনাংপেডেং!!!

আজকের কম খরচে ভারত ভ্রমণের গল্পে থাকছে হালের ক্রেজ “সোনাংপেডেং” এবং “ক্রাংসুরি ফলস” ভ্রমণ পরিকল্পনা এবং বাজেট। তো এই ট্যুরের জন্য আপনার অতি অবশ্যই ভারতীয় ভিসা নেয়া থাকবে এবং তাতে ডাউকি বর্ডার এন্ট্রি এবং এক্সিট বর্ডার হিসেবে থাকতে হবে। আসুন এবার পরিকল্পনা’র আলোচনায় যাওয়া যাক। অতি অবশ্যই আমাদের এই পরিকল্পনায় দল হতে হবে নূন্যতম চারজনের। সেই হিসেবেই পুরো পরিকল্পনা সাজানো। এবার আসুন শুরু করা যাক। 

ঢাকা টু তামাবিল বর্ডারঃ

প্রথমেই আগের রাতে রওনা হতে হবে ঢাকা থেকে সিলেটের উদ্দেশ্যে। ইউনিক, শ্যামলী, হানিফ ইত্যাদি বাস যায় সিলেট। ভাড়া ৫০০-৫৫০ টাকার মধ্যে। এছাড়া সায়েদাবাদ থেকে আহমেদ পরিবহণের বাসে সরাসরি তামাবিল বর্ডার এর কাছে নামিয়ে দেবে; ভাড়া ৪০০ টাকা। সিলেট এর বাসে গেলে সিলেটে সকাল বেলা নেমে পাঁচভাই/পানসী/পাকশী’তে সকালের নাস্তা সেরে নিয়ে বাস/সিএনজি করে চলে যান তামাবিল বর্ডার। ভাড়া ৫০-১০০ টাকার মধ্যে। আমরা আমাদের এই প্ল্যানে আহমেদ পরিবহণই বেঁছে নিব। 

বর্ডার পারাপারঃ

তামাবিল নেমে সেখানেও ট্রাভেল ট্যাক্স দিতে পারেন; কিন্তু যাওয়ার আগে ঢাকা থেকে ট্রাভেল ট্যাক্স দিয়ে গেলে ভাল। যেহেতু নিজেরা নিজেরা ভ্রমণ করছি, তাই এটাই বেটার। এরপর বাংলাদেশ সাইডের ইমিগ্রেশন এবং কাস্টমস পার হয়ে প্রবেশ করুন ভারত ভূখন্ডে এবং সেখানকার ইমিগ্রেশন এবং কাস্টমস পার হওয়ার সাথে সাথে আপনার বর্ডার পারাপার শেষ। খুব একটা ভীড় না থাকলে ঘন্টাখানেকের কম সময়ে আপনি ভারতে প্রবেশ সম্পন্ন করতে পারবেন। এই বর্ডারে তেমন উৎকোচ এর প্রাকটিস নাই বলেই জানি, তারপরও একশত টাকা বাজেট ধরে রাখলাম।

বর্ডার টু সোনাংপেডেং ভায়া ক্রাংসুরি ফলসঃ

সব কাজ শেষ করে বর্ডার জীপ স্ট্যান্ড হতেই একটি চার আসনের প্রাইভেট গাড়ী ভাড়া করে নিন ১৫০০-২০০০ রুপী’তে যা আপনাকে ক্রাংসুরি ফলস দেখিয়ে বিকেলের মধ্যে সোনাংপেডেং ড্রপ করবে। ঘন্টাখানেকের একটু বেশী সময়ে আপনি পৌঁছে যাবেন ক্রাংসুরি ফলস। পার্কিং এরিয়ায় গাড়ী হতে নেমে আপনাকে প্রায় ৪০০ মিটারের মত নীচে নামতে হবে। পেয়ে যাবেন অপরূপ এক ঝর্ণা, নীলপানি’র ঝর্ণাকুন্ড যেখানে আয়েশ করে সাঁতরে আপনি অতি অবশ্যই বিমুগ্ধ হবেন। তবে আরও ভাল লাগবে ঝর্ণায় ভেজার আগে ঝর্ণামুখে, উপরিভাগে বোটিং করে নিলে। নীলাভ জলে লাল রঙের বোটে করে চারিপাশে সবুজের মাঝে নীল জলের লেকের ন্যায় জলাশয়ে ভেসে বেড়াতে দারুণ লাগবে নিশ্চয়ই। বোটিং এবং জলকেলি শেষে এখানে যে রেস্টুরেন্টটি আছে সেখানে ইন্ডিয়ান থালি অথবা চাউমিন/ফ্রাইড রাইস দিয়ে লাঞ্চ সেরে নিন, খরচ ১০০-২০০ রুপীর মধ্যে। আর এখানে বোটিং চার্জ নিবে ১০০ রুপী, লাইফ জ্যাকেট ভাড়া ৩০ রুপী। ও হ্যাঁ বলা হয় নাই, লাইফ জ্যাকেট ছাড়া পানিতে নামতে দিবে না আপনাকে নিরাপত্তারক্ষী। 

ক্রাংসুরি টু সোনাংপেডেং যাত্রাঃ

এরপর ক্রাংসুরি হতে যাত্রা শুরু করুন উমাংগট নদী তীরের শান্ত ছোট্ট গ্রাম সোনাংপেডেং এর উদ্দেশ্যে। প্রায় ঘন্টা দেড়েকের এই যাত্রাপথও আপনার পছন্দ হতে বাধ্য। বিকেল নাগাদ সেখানে পৌঁছে নদী তীরের তাবুবাসের জন্য তাবুর খোঁজ করুন। এক তাবুতে দুজন, ভাড়া ৭০০ রুপী। এছাড়া কটেজ রুম আছে, ভাড়া ১২০০-২৫০০ টাকা রুমভেদে। এখানে চেকইন করে নেমে পরুন কাঁচ স্বচ্ছ জলে। বরফ শীতল জলে ভিজে নিন। চাইলে জলের মাঝে স্থির দাঁড়িয়ে থাকা বড় বড় পাথরে বসে আড্ডা দিতে পারেন। রাতেরবেলা চাইলে ক্যাম্প ফায়ার, বারবিকিউ করতে পারেন। এখানে ১৩০ থেকে ১৫০ রুপীতে রাতের খাবার পাওয়া যাবে হোম মেইড। মেন্যু হবেঃ ভাত, মিক্সড ভেজিটেবল, ডাবল ডিমের কারী, ডাল। তো ডিনার সেরে অনেক রাত অবধি আড্ডা দিয়ে ঘুমিয়ে পরুন।

সকালে উঠে সাসপেনশন ব্রীজ হতে স্বচ্ছ নদীর বুকে ভেসে বেড়ানো নৌকার ছবি, মাছ ধরার ছবি, চাইলে ভাল ক্যামেরা দিয়ে জলের নীচের জগত, ঘুরে বেড়ানো মাছের ছবিও নীতে পারুন। এরপর আটটা নাগাদ গ্রামের রেস্টুরেন্টে আলু পরাটা দিয়ে নাস্তা সেরে নিন সাথে এককাপ চা। নাস্তার আরও ভ্যারাইটি আছে, চেখে দেখতে পারেন। দশটা থেকে বোটিং শুরু হয়। ঘন্টা খানেক বোটিং করে ব্যাগপত্তর নিয়ে রওনা হয়ে যান ফিরতি যাত্রায়। 

ব্যাক টু প্যাভিলিয়নঃ

সোনাংপেডেং থেকে ডাউকি বর্ডার গাড়ী ভাড়া নেবে ৩০০-৪০০ রুপী’র মধ্যে, চার সিটের গাড়ী। আগের রাতে বা সকাল সকাল গাড়ী ঠিক করে নিবেন। এরপর ডাউকি ফিরে উভয় পাশের ইমিগ্রেশন এবং কাস্টমস শেষ করে দুপুরের মধ্যে চলে আসুন তামাবিল। এবার এখান হতে বাসে করে চলে যান সিলেট শহরে। চাইলে সারাটা বিকেল এবং সন্ধ্যে সিলেটে কাটিয়ে রাতের খাবার খেয়ে রাতের বাস বা ট্রেনে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করতে পারেন। আমাদের প্ল্যানে আমরা দুপুরের মধ্যে সিলেট এসে লাঞ্চ করে ঢাকার বাস ধরবো যেন রাতের মধ্যে ঢাকায় থাকা যায়।

জনপ্রতি খরচের বৃত্তান্তঃ

ঢাকা-তামাবিল (আহমেদ পরিবহণ) ৪০০ টাকা

বর্ডার স্পিডমানী (স্ট্রিকটলি এভয়ড) ১০০ টাকা

১ম দিন সকালের নাস্তা ৫০ টাকা

ট্রাভেল ট্যাক্স ৫০০ টাকা

ডাউকি টু ক্রাংসুরি টু সোনাংপেডেং ৪০০ রুপী 

ক্রাংসুরি এন্ট্রি, লাইফ জ্যাকেট, বোটিং ১৫০ রুপী

১ম দিন দুপুরে খাবার ১২০ রুপী 

১ম দিন রাতের খাবার ১৩০ রুপী

রাত্রি যাপন তাঁবুতে ৩৫০ রুপী

২য় দিন সকালের নাস্তা ৫০ রুপী

উমাংগট নদীতে বোটিং ১০০ রুপী

সোনাংপেডেং টু ডাউকি ১০০ রুপী

বর্ডার স্পিডমানী (স্ট্রিকটলি এভয়ড) ১০০ রুপী

ডাউকি টু সিলেট ৮০ টাকা

২য় দিন দুপুরের খাবার ১০০ টাকা

সিলেট টু ঢাকা ৫৫০ টাকা 


মোট টাকায় খরচ = ১৭৮০ টাকা

মোট রুপীতে খরচ = ১৫০০ রুপী = ১৭৭০ টাকা (১ রুপী = ১.১৮০ টাকা হিসেবে)

সর্বমোট খরচ টাকায় ৩৫৫০ টাকা!!!

মন্তব্যসমূহ

Translate

বোকা পর্যটকের কথা

মানুষ যেমন হঠাৎ করেই কারো প্রেমে পড়ে, ঠিক তেমনই করে আমিও প্রেমে পড়েছি ভ্রমণের। আজব এক নেশায় নেশাগ্রস্থ, কবে থেকে জানি না। তবে নিজের আর্থ-সামাজিক অবস্থানে লড়াই করে টিকে থাকার পর ভ্রমণে মনঃসংযোগ করতে উদ্যত হই। সেই থেকে যখনই সময়-সুযোগ হয় বেড়িয়ে পড়ি ঘর হতে, ভ্রমণের তরে। মজার ব্যাপার হল, আমি সাইক্লিস্ট নই, সাঁতার কাটতে পারি না, না পারি ট্র্যাকিং, হাইকিং, ক্লাইম্বিং। কোন ধরণের এডভেঞ্চারধর্মী কোন গুণই আমার নেই, শুধু আছে ভ্রমণের শখ আর অদম্য ইচ্ছাটুকু। আর সেই ইচ্ছা থেকেই সময় সময় আমার ঘুরে বেড়ানো আর সেই গল্পগুলো লিপিবদ্ধ করে রাখা এই ডায়েরীতে। আমার এই লেখাগুলো বিভিন্ন সময়, বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে এবং ব্যক্তিগত ডায়েরীতে লেখা ছিল; সেগুলো সব একত্রে সংরক্ষণ করে রাখার নিমিত্তেই এই ব্লগ। যদি আপনাদের কারো এই লেখাগুলো কোন কাজে লাগে তবে আমার পরিশ্রম কিছুটা হলেও সার্থক হবে।

পোস্ট সংরক্ষণাগার

যোগাযোগ ফর্ম

প্রেরণ