২০ দিনে ৩২,০০০ টাকায় "India Dream Tour" দিবেন নাকি এবার? - দিল্লী-সিমলা-মানালি-লেহ-কাশ্মীর ভ্রমণ!!!!!!!

কোন একটি ট্রাভেল গ্রুপে একজন জিজ্ঞাসা করলেন ত্রিশ হাজার টাকায় দিল্লী, সিমলা-মানালি, কাশ্মীর ভ্রমণ করা যায় কি না। আমি মন্তব্য বললাম সম্ভব। একজন দেখলাম কমেন্ট করলেন, "যারা যারা সম্ভব বলছেন তাদের ফোন নাম্বার লিখে নিতে। অসম্ভব।" তো ভেবে দেখলাম আমার কম খরচে ভারত ভ্রমণের আরেকটি নোট লিখে ফেলা যাক। লেখা শেষে দেখলাম এটি হয়েছে সবচেয়ে সেই লেভেলের। ৩২ হাজার টাকায় দিল্লী-সিমলা-মানালি-লেহ-কাশ্মীর ভ্রমণ। থাকা, খাওয়া, ঘোরাঘুরি, রাইড, পনি রাইড, গন্ডোলা রাইড (ওয়ান ফেইজ), শিকারা রাইড, হাউজবোটে থাকা সব, সব সহ। 

হিসেব করা হয়েছে দৈনিক রুপীতে, দিনের মোট খরচ ১.২০ রেটে কনভার্ট করে টাকায় দিনের খরচ দেয়া হয়েছে। দলে চারজন থাকতে হবে, ট্যুর হবে জুলাই টু সেপ্টেম্বর এ যখন মানালি-লেহ-কারগিল-শ্রীনগর রুট খোলা থাকে। তো আরকি দেখা যাক সামারি প্ল্যান।   

আর হ্যাঁ, অতি অবশ্যই কিছু এপস মোবাইলে ডাউনলোড করে নিবেন। অফলাইন ম্যাপ সাইট, হোটেল বুকিং সাইট, বাস-ট্রেন টিকেট বুকিং সাইট।

বাজেট এবং পরিকল্পনা

দিন ০১ - ৩০০০ টাকাঃ ঢাকা টু কলকাতা আগের রাতে নাইট কোচে রওনা হয়ে যান। ঢাকা-বেনাপল বাসে গিয়ে বর্ডার ক্রস করে বনগাঁ লোকাল ট্রেনে কলকাতা। সেখান হতে সন্ধ্যা ০৬:৩০ এর নিউ দিল্লী দূরন্ত এক্সপ্রেস ট্রেনে দিল্লী অভিমুখে যাত্রা। বাস ভাড়া ৬০০ টাকা, ট্রাভেল ট্যাক্স-বর্ডার স্পিড মানি সব মিলে ৮০০ টাকা, বনগাঁ হয়ে শিয়ালদহ স্টেশন ২০০ টাকা। চারবেলার খাবার ৪০০ টাকা। দিল্লী দূরন্ত এক্সপ্রেস এর নন-এসি স্লিপার ক্লাস ট্রেন টিকেট ১০০০ টাকা। 

দিন ০২ - ১২০০ টাকাঃ সকাল বারোটা নাগাদ দিল্লী পৌঁছে যাবেন। পাহাড়গঞ্জ বা কেরলবাগ এলাকায় ৮০০-১০০০ রুপীতে রুম ভাড়া নিয়ে নেন। জনপ্রতি ৫০০-৬০০ টাকা। ঘুরে দেখুন লালকেল্লা, জামে মসজিদ, নিজামুদ্দিন আউলিয়ার দরগাহ, চাঁদনীচক এসব। ঘোরাঘুরি এবং খাবার মিলিয়ে আরও ৭০০-৮০০ টাকা। 

দিন ০৩ - ১৫০০ টাকাঃ সারাদিন দিল্লী ভ্রমণ। কুতুব মিনার, হুমায়ূন টম্ব, লোধি গার্ডেন, সফদারজং টম্ব, লোটাস টেম্পল ইত্যাদি ভ্রমণ। সকালেই হোটেল হতে চেকআউট করে নিতে হবে। হোটেল কাউন্টারে রিকোয়েস্ট করে লাগেজ রেখে যাবেন, প্রয়োজনে ১০০/২০০ রুপী পেমেন্ট করে দিবেন। রাতের বাসে সিমলা রওনা হয়ে যান। ঘোরাঘুরি ৫০০ টাকা, খাবার ৩০০ টাকা, বাস ভাড়া ৫০০ টাকা (নন-এসি)। রাতে বাস জার্নি।

দিন ০৪ - ১১০০ টাকাঃ সিমলা পৌঁছে মল এরিয়ায় ৮০০-১০০০ রুপীর মধ্যে হোটেল ভাড়া নিয়ে নেন। এরপর মল-রিজ-চার্চ এসব ঘুরে দেখুন। রাতে হোটেলে কাটান। হোটেল ভাড়া জনপ্রতি ৬০০ টাকা আর খাবার ও ঘোরাঘুরি ৫০০ টাকা। 

দিন ০৫ - ১১০০ টাকাঃ সকালবেলা হিমাচল টুরিস্ট বাসে করে কুফরি-ফাগু ঘুরতে বের হয়ে যান। চারজনের দল হলে প্রাইভেট গাড়ী নিয়ে নেন। খরচ ৫০০ রুপী জনপ্রতি। আর খাবার দাবার ৩০০ রুপী। আগের মতই সকালবেলা হোটেল হতে চেক আউট করে লাগেজ রিসিপশনে রেখে দিবেন। রাতের বাসে মানালি রওনা হয়ে যান।

দিন ০৬ - ১২০০ টাকাঃ মানালি পৌঁছে মল এরিয়ায় ৮০০-১০০০ রুপীর মধ্যে হোটেল ভাড়া নিয়ে নেন। এরপর মলরোড, হাদিম্বা দেবী টেম্পল, তিব্বতিয়ান চার্চ, বনবিহার ইত্যাদি ঘুরে দেখুন। খরচ ২০০ রুপী সর্বোচ্চ জনপ্রতি। খাওয়া বাবদ ২৫০ রুপী। রাতে মানালি থাকা। 

দিন ০৭ - ৩৫০০ টাকাঃ মানালি হতে রওনা হয়ে যান লেহ এর উদ্দেশ্যে। হিমাচল টুরিস্ট কর্পোরেশন এর বাস ভাড়া ২৭০০ রুপী, ছাড়ে সকাল নয়টায়। এর মাঝে রাতের থাকা, ডিনার এবং পরদিন সকালের নাস্তা সব অন্তর্ভূক্ত। সকালের নাস্তা আর দুপুরের খাবার ২০০ রুপী। 

দিন ০৮ - ১২০০ টাকাঃ লেহ পৌঁছে হোটেলে চেকইন। লেহ ঘুরে দেখা। হোটেল ভাড়া ৫০০ রুপী, ঘোরাঘুরি আর খাওয়া দাওয়া আরও ৫০০ রুপী।

দিন ০৯ - ১৫০০ টাকাঃ লেহ এর আশেপাশের সাইট সিয়িং। খরচ ৫০০ রুপী, খাওয়া ২৫০ রুপী, হোটেল ভাড়া ৫০০ রুপী।

দিন ১০ - ১৫০০ টাকাঃ দুপুর এর আগে আগে বাসে করে লেহ হতে শ্রীনগর এর উদ্দেশ্যে বাসে করে যাত্রা। সারারাত বাস জার্নি। বাস ভাড়া ৮০০ রুপী, খাবার ৪০০ রুপী।

দিন ১১ - ১২০০ টাকাঃ সকালবেলা শ্রীনগর পৌঁছে হাউজবোটে চেকইন করা। শিকারা রাইড, হাউজবোটে আড্ডা। হাউজবোট ভাড়া ৫০০ রুপী জনপ্রতি, খাবার এবং অন্যান্য ৫০০ রুপী।

দিন ১২ - ১৭০০ টাকাঃ সকাল থেকে শ্রীনগর সাইট সিয়িং। মুঘল গার্ডেন্স, চাশ্মেশাহী, হযরতবাল মসজিদ, শংকরাচার্য হিল ইত্যাদি ঘুরে দেখুন। রাতে হোটেলে থাকবেন বিধায় সকালেই হাউজবোট হতে চেকআউট করে হোটেলে চেকইন করে নিবেন সাইট সিয়িং এর আগে। সাইট সিয়িং ৩০০ রুপী জনপ্রতি, টিকেট ২০০ রুপী, খাওয়া ৪০০ রুপী, হোটেল ভাড়া ৫০০ রুপী। 

দিন ১৩ - ১৮০০ টাকাঃ সকালবেলা হোটেল হতে চেক আউট করে লোকাল বাসে করে শ্রীনগর হতে পাহেলগাও চলে যান। সেখানে হোটেলে চেকইন করে ঘুরে দেখুন বেতাবভ্যালী, চান্দানওয়ারি। রাতে হোটেলে থাকুন। খরচঃ বাস ভাড়া ২০০ রুপি। ঘোরাঘুরি ৩০০ রুপী, খাওয়া ৩০০ রুপী, হোটেল ভাড়া ৫০০ রুপী। প্রবেশ ফি ১৫০ রুপী।

দিন ১৪ - ২৫০০ টাকাঃ সকালবেলা গাড়ী ভাড়া করে বের হয়ে যান আরুভ্যালী, দুধপাতরি, বাইসারান ভ্রমণে। রাতে হোটেলে থাকুন। গাড়ী ভাড়া ৮০০ রুপী, খাওয়া ৩০০ রুপী, হোটেল ভাড়া ৫০০ রুপি, প্রবেশ ফি, পনি রাইড এবং অন্যান্য ৫০০ রুপী। 

দিন ১৫ - ২৭০০ টাকাঃ পাহেলগাও হতে গুলমার্গ চলে যান। হোটেলে চেকইন করুন। গন্ডোলা রাইড করুন, পনি রাইড করুন। ভাড়া ৩০০ রুপী, হোটেল ৫০০ রুপী, গন্ডোলা ৮০০ রুপী, পনি রাইড ৩০০ রুপী, খাবার ৩০০ রুপী। 

দিন ১৬ - ২০০০ টাকাঃ গুলমার্গ হতে শ্রীনগর চলে আসুন। ভাড়া ২০০ টাকা। এখান থেকে চলে যান সোনমার্গ। ভাড়া ২০০ রুপী। ঘোরাঘুরি করে রাতের মধ্যে চলে আসুন শ্রীনগর, ভাড়া ২০০ রুপী। হোটেল ভাড়া ৫০০ রুপী। খাবার ৩০০ রুপী। পনি রাইড ৩০০ রুপী। 

দিন ১৭ - ১৯০০ টাকাঃ সকালবেলা জম্মুর উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে যান বাসে, ভাড়া ৫০০ রুপী। খাওয়া ৩০০ রুপী। রাতের ট্রেন ধরুন কলকাতার উদ্দেশ্যে। ভাড়া ৭৫০ রুপী, রাত পৌনে এগারোটার হিমগিরি এক্সপ্রেসে করে রওনা হয়ে যান কলকাতার উদ্দেশ্যে। 

দিন ১৮ - ৩০০ টাকাঃ সারাদিন ট্রেনে। খাওয়া খরচ ৩০০ টাকা।

দিন ১৯ - ১৫০০ টাকাঃ সকাল সাড়ে এগারোটা নাগাদ কলকাতা পৌঁছে বেনাপল এর বাস ধরুন। অথবা ট্রেনে করে বনগাঁ চলে আসুন। সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে বর্ডার ক্রস করে বাংলাদেশে প্রবেশ করুন। রাতের বাসে ঢাকা বা আপনার নিজস্ব জেলার উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে যান।

দিন ২০ - ০০০০ টাকাঃ সকালবেলা পৌঁছে যাবেন আপনার নিজ বাসস্থানে।

বাজেট সামারিঃ

দিন ০১:    ৩০০০ টাকা

দিন ০২:    ১২০০ টাকা

দিন ০৩:    ১৫০০ টাকা

দিন ০৪:    ১১০০ টাকা

দিন ০৫:    ১১০০ টাকা

দিন ০৬:    ১২০০ টাকা

দিন ০৭:    ৩৫০০ টাকা

দিন ০৮:    ১২০০ টাকা

দিন ০৯:    ১৫০০ টাকা

দিন ১০:    ১৫০০ টাকা

দিন ১১:    ১২০০ টাকা

দিন ১২:    ১৭০০ টাকা 

দিন ১৩:    ১৮০০ টাকা

দিন ১৪:    ২৫০০ টাকা

দিন ১৫:    ২৭০০ টাকা

দিন ১৬:    ২০০০ টাকা

দিন ১৭:    ১৯০০ টাকা

দিন ১৮:     ৩০০ টাকা

দিন ১৯:    ১৫০০ টাকা

দিন ২০:   ০০০০ টাকা

সর্বমোট: ৩২৪০০ টাকা

মন্তব্যসমূহ

Translate

বোকা পর্যটকের কথা

মানুষ যেমন হঠাৎ করেই কারো প্রেমে পড়ে, ঠিক তেমনই করে আমিও প্রেমে পড়েছি ভ্রমণের। আজব এক নেশায় নেশাগ্রস্থ, কবে থেকে জানি না। তবে নিজের আর্থ-সামাজিক অবস্থানে লড়াই করে টিকে থাকার পর ভ্রমণে মনঃসংযোগ করতে উদ্যত হই। সেই থেকে যখনই সময়-সুযোগ হয় বেড়িয়ে পড়ি ঘর হতে, ভ্রমণের তরে। মজার ব্যাপার হল, আমি সাইক্লিস্ট নই, সাঁতার কাটতে পারি না, না পারি ট্র্যাকিং, হাইকিং, ক্লাইম্বিং। কোন ধরণের এডভেঞ্চারধর্মী কোন গুণই আমার নেই, শুধু আছে ভ্রমণের শখ আর অদম্য ইচ্ছাটুকু। আর সেই ইচ্ছা থেকেই সময় সময় আমার ঘুরে বেড়ানো আর সেই গল্পগুলো লিপিবদ্ধ করে রাখা এই ডায়েরীতে। আমার এই লেখাগুলো বিভিন্ন সময়, বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে এবং ব্যক্তিগত ডায়েরীতে লেখা ছিল; সেগুলো সব একত্রে সংরক্ষণ করে রাখার নিমিত্তেই এই ব্লগ। যদি আপনাদের কারো এই লেখাগুলো কোন কাজে লাগে তবে আমার পরিশ্রম কিছুটা হলেও সার্থক হবে।

পোস্ট সংরক্ষণাগার

যোগাযোগ ফর্ম

প্রেরণ