শুভ পর্যটন বর্ষ ২০১৬। - কিছু বাস্তবতা এবং ভাবনা-প্রস্তাবনা।

পর্যটন, বাংলাদেশ,বাংলাদেশের পর্যটন,পর্যটন বর্ষ, পর্যটন বর্ষ ২০১৬,বাংলাদেশের পর্যটন সম্ভাবনা,পর্যটনে বাংলাদেশ,পর্যটন সম্ভাবনা, বাংলাদেশের পর্যটন খাত


“এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি
সকল দেশের রানী সে যে আমার জন্মভূমি”

সুজলা সুফলা শস্য-শ্যামলা অপরূপা আমাদের মাতৃভূমি বাংলাদেশ, আমাদের গর্ব, আমাদের অহংকার। যার পরতে পরতে ছড়িয়ে আছে রূপের রাগিণী, অমিয়ধারা। চির-সবুজের দেশ, নদীমাতৃক আমাদের এই দেশ। কিন্তু রানীকে যেমন রানীর মত যত্নে রাখতে হয়, সজ্জিত করতে হয়ে রাজকীয় বেশভূষায়, তেমন করে আমরা আমাদের এই দেশকে সাজাতে পারিনি। তিলে তিলে ক্ষয়ে যাচ্ছে এই অপরূপার কোমল বদনখানি। গলা টিপে আমরা হত্যা করেছি নদীমাতৃক এই দেশের নদীগুলোকে, সাথে ছিল প্রতিবেশীর বৈরি আচরণ। ঐতিহ্যগুলোকে চরম অবহেলায় হারিয়ে যেতে দিয়েছি কালের অতল গহবরে। এতো অযত্ন আর অবহেলার পরেও এই অপরূপা দেশ আমার তার লাবণ্য ধরে রেখেছে প্রকৃতির অপার কৃপায়। সেই দেশকে বিশ্বাসীর কাছে নতুন করে তুলে ধরার নিমিত্তে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ২০১৬ সালকে ঘোষণা করেছে পর্যটন বছর হিসেবে।
২০১৪ সালের ০৭ অক্টোবর ঢাকায় অনুষ্ঠিত দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ ঐতিহ্য ও পর্যটন সম্মেলনের উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ঘোষণা দেন। ২০১৬ সালে ঘোষিত পর্যটন বর্ষ এর কার্যক্রম বর্ধিত থাকবে ২০১৮ সাল পর্যন্ত। এই তিন বছরে মোট ১০ লক্ষ্ বিদেশী পর্যটকের বাংলাদেশে ভ্রমন’কে লক্ষ্য ধরে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড। এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলে ৩০০ মিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা আয় হবে, সাথে তিন লাখ লোকের নতুন কর্মসংস্থান এর সুযোগ হবে বলে ধারনা করা হচ্ছে।

এবার আসুন দেখি এই পর্যটন বর্ষ উদযাপন উপলক্ষ্যে কি কি উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। ‘পর্যটন দিবস - ২০১৬’ উপলক্ষে পর্যটকদের নানাবিধ সুবিধা প্রদান করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন (বাপক)। বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে যে সুবিধাগুলো পাওয়া যাবে, সেগুলো নিম্নরূপঃ

১) প্যাকেজ ট্যুরের মাধ্যমে দেশী-বিদেশী এয়ারলাইন্সে আগত বিদেশী পর্যটকদের সকালের নাস্তাসহ বাপক-এর হোটেল/মোটেলসমূহে ৩০% রেয়াতে আবাসিক সুবিধা, ২০% রেয়াতে দুপুর এবং রাতের খাবার সরবরাহ করা হবে।

২) সভা, সেমিনার, ওয়ার্কশপে আগত বিদেশী অতিথিদের সকালের নির্ধারিত নাস্তাসহ বাপক-এর হোটেল/মোটেলসমূহে ৩৫% রেয়াতে আবাসিক সুবিধা, ২০% রেয়াতে দুপুরের ও রাতের খাবার সরবরাহ করা হবে।

৩) আভ্যুন্তরীণ বিমানে আগত পর্যটকগণ বাপকের প্রিভিলেজ কার্ড ব্যবহারের মাধ্যমে সকালের নির্ধারিত নাস্তা এবং ০২ (দুই) বোতল সুপেয় পানিসহ ২৫% রেয়াতে ০৩টি আবাসিক কক্ষ ব্যবহার করতে পারবেন।

৪) আভ্যন্তরীণ বিমানে আগত পর্যটকগণকে বিমানের টিকেটের সাথে বাপক-এর প্রিভিলেজ কার্ড নির্ধারিত মূল্যে বিক্রয় করা হবে।

৫) বাপক-এর সকল ইউনিটে বিনামূল্যে ওয়াইফাই সুবিধা প্রদান করা হবে।

৬) দেশী প্রতিষ্ঠানসমূহের সভা, সেমিনার, ওয়ার্কশপ আয়োজনে বাপক-এর কনফারেন্স হল ২০% রেয়োতে এবং রেস্তোরাঁয় ১৫% রেয়াতে দুপুর এবং রাতের খাবার প্রদান করা হবে।

৭) বিদেশী পর্যটকগণ বাংলাদেশী এয়ারলাইন্সে আগমন করলে ৩০ দিনের মধ্যে বোর্ডিং পাস প্রদর্শন করে পর্যটন করপোরেশনের হোটেল/মোটেলসমূহে সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।

৮) বাংলাদেশ বিমানের লয়্যালিটি কার্ড পর্যটনের প্রিভিলেজ কার্ড হিসেবে ব্যবহৃত হবে।

অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়,  পর্যটন কর্পোরেশনর সকল কর্মকাণ্ড হোটেল ব্যবসায় সীমাবদ্ধ। অথচ তাদের লক্ষ্য ও  উদ্দেশ্যের দিকে চোখ বুলালে দেখতে পাবেন তাদের সুবিশাল এক লিস্টি আছে। আগ্রহীদের জন্য তুলে ধরলামঃ

উদ্দেশ্যঃ
১. বাপক-কে একটি উন্নত উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ হিসাবে গড়ে তোলা যা বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের সুবিধাদি প্রনয়ণে নিয়ন্ত্রিত/সহজতর করবে।

২. আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন ও অন্যান্য সুবিধাদি গড়ে তোলা এবং তা রক্ষা করা।

৩. সহজ গমনাগমনের জন্য বাস্তব অবকাঠামো যেমন, সড়কপথ, রেলপথ, বিমানপথ ও নৌপথ তৈরীতে সরকারকে সম্পৃক্ত করা এবং বেসরকারী উদ্যোগকে উৎসাহিত করা।

৪. পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

৫. পর্যটনকদের জন্য ভিসা ও ইমিগ্রেশন পদ্ধতি সহজতর করার উদ্যোগ গ্রহণ।

৬. কার্যকর কমিউনিটি অংশগ্রহণের মাধ্যম দারিদ্র বান্ধব পর্যটন উৎসাহিত করা।

৭. আর্থিক স্বচ্ছলতা ও ক্ষমতায়ন করার জন্য নারী জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্তকরণ।

৮. প্রকৃতি ও নৃতাত্ত্বিক ভিত্তিক ইকো-ট্যুরিজমকে উনড়বয়ন করা।

৯. পর্যটন কার্যক্রমের মাধ্যমে পরিশোধন বিবরণী, নতুন কর্মক্ষেত্র সৃষ্টি, দারিদ্র দূরীকরণ ও সামাজিক সম্পৃতি বৃদ্ধিকরণ।

১০. দেশে-বিদেশে পর্যটন উপাদানসমূহের বিপণন বৃদ্ধি করণ।

১১. পর্যটন শিল্পে মানব সম্পদ উন্নয়ন করা।

১২. পর্যটন শিল্পে শক্তিশালী সরকারী-বেসরকারী যৌথ ব্যবস্থাপনা গঠন করা।

১৩. পর্যটন শিল্পে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠানের সাথে নিবিড় সম্পর্কের উনড়বয়ন ও তা রক্ষা করা।

১৪. পর্যটন খাতে বেসরকারি বিনিয়োগকে উৎসাহিত করার জন্য বাণিজ্যিক ইউনিটসমূহ বেসরকারিকরণ।

এখন প্রশ্ন রইল, এগুলোর কয়টা বাস্তবায়নে তাদের কার্যক্রম পরিলক্ষিত হয়, হয়েছে, হচ্ছে?

যাই হোক আপনাদের জ্ঞাতার্থে পর্যটন কর্পোরেশনের আওতাধীন সকল হোটেল, মোটেল রেস্টুরেন্টরে লিস্ট তুলে ধরলাম।

ঢাকাঃ হোটেল অবকাশ
সাভারঃ জয় রেস্তোরাঁ
গোপালগঞ্জঃ হোটেল মধুমিতা
চট্টগ্রামঃ মোটেল সৈকত
কক্সবাজারঃ হোটেল শৈবাল, মোটেল উপল, মোটেল প্রবাল, হোটেল লাবনী
টেকনাফঃ হোটেল নেটং
রাঙ্গামাটিঃ পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্স, নতুন মোটেল
বান্দরবানঃ পর্যটন মোটেল
খাগড়াছড়িঃ পর্যটন মোটেল
রাজশাহীঃ পর্যটন মোটেল
বগুড়াঃ পর্যটন মোটেল
রংপুরঃ পর্যটন মোটেল
দিনাজপুরঃ পর্যটন মোটেল
কুয়াকাটাঃ পর্যটন ইয়ুথ ইন, পর্যটন হলিডে হোমস
বেনাপোলঃ পর্যটন মোটেল
মংলাঃ হোটেল পশুর
মেহেরপুরঃ পর্যটন মোটেল
মাধবকুণ্ডঃ পর্যটন রেস্তোরাঁ
সিলেটঃ পর্যটন মোটেল, পর্যটন মোটেল জাফলং
চাঁপাইনবাবগঞ্জঃ পর্যটন মোটেল

তাদের ওয়েব সাইটে বেশ কিছু পর্যটন কেন্দ্র নিয়ে ‘পর্যটন আকর্ষণ’ শীর্ষক একটা ট্যাব আছে। সেখানে পাবেনঃ

প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনসমূহঃ লালবাগ কেল্লা, মুঘল ঈদগাহ, আহসান মঞ্জিল, সোনারগাঁও, উয়ারী বটেশ্বর, ময়নামতি, পাহাড়পুর, মহাস্থানগড়, কান্তজীউ মন্দির, ষাট গম্বুজ মসজিদ,

সমুদ্র সৈকতঃ পতেঙ্গা, পারকী, কক্সবাজার, টেকনাফ, সেন্ট মার্টিন দ্বীপ, কুয়াকাটা, কটকা

ধর্মীয় স্থানসমূহঃ মসজিদ, হিন্দু মন্দির, গীর্জা, বৌদ্ধ মন্দির

পাহাড় ও দ্বীপঃ রাঙামাটি - হ্রদ জেলা, কাপ্তাই - হ্রদ শহর, বান্দরবান - বাংলাদেশের ছাদ, খাগড়াছড়ি - পাহাড়ের শীর্ষের শহর, ময়মনসিংহ, সিলেট, মহেশখালী দ্বীপ, সোনাদিয়া দ্বীপ

ঐতিহাসিক স্থানসমূহঃ জাতির পিতার সমাধিসৌধ, জাতীয় স্মৃতিসৌধ, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ, জাতীয় কবির সমাধিসৌধ, কার্জন হল, বলধা গার্ডেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, পুরাতন হাইকোর্ট ভবন, বাহাদুর শাহ্ পার্ক, দীঘাপতিয়া রাজবাড়ি, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কবরস্থান, শিলাইদহ কুঠিবাড়ী, সাগরদাড়ি, মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ, ত্রিশাল, গান্ধী আশ্রম।

বন ও জলাবনঃ সুন্দরবন, রাতারগুল জলাবন

অন্যান্য আকর্ষনীয় স্থানসমূহঃ জাতীয় সংসদ ভবন, বঙ্গভবন, শাঁখারীবাজার, সদরঘাট, রমনা পার্ক, জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান, জাতীয় চিড়িয়াখানা, জাতীয় উদ্যান, বাটালী পাহাড়, জেলা প্রশাসকের পাহাড়, রাজশাহী, যমুনা ব্রীজ, মাধবকুন্ডু, জাফলং।

নাজুক অবস্থা দেখলাম ট্যুরিজম বোর্ডের ওয়েবসাইটে। তাদের ইভেন্ট ট্যাবে গিয়ে খোঁজ করলাম তারা বিগত বৎসরগুলোতে কি কি ইভেন্ট আয়োজন করেছে। তেমন কিছু খুঁজে পেলাম না, লিস্ট পেলাম তারা কোন কোন ইভেন্টে অংশগ্রহণ করেছে তার খতিয়ান। এই অংশগ্রহণ কিন্তু স্রেফ একটি স্টল নিয়ে বসে থাকার চেয়ে বেশী কিছু নয়।

এই যখন দেশের প্রধান দুটি পর্যটন সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের হালচিত্র, তখন এই ‘পর্যটন বর্ষ ২০১৬’ নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। আসলে মূল গলদ হল লক্ষ্যে, তিন বছরে ১০ লাখ পর্যটক সমাগম করানো। আর দেশীয় পর্যটকেরা? তারা কেন প্ল্যানিং এর মূল ফোকাসে নেই? বিগত পাঁচ বছরে দেশের ভেতরে যে সুবিশাল পর্যটক তৈরি হয়েছে তার পরিসংখ্যান কি তাদের কাছে নেই। প্রতি সপ্তাহান্তে প্রতিটি বাস-ট্রেন-লঞ্চ-প্লেন রুটে খোঁজ নিলে দেখতে পাবেন প্রতি সপ্তাহে কয়েক হাজার পর্যটক দেশের আনাচে কানাচে ঘুরে বেড়াচ্ছে। প্রতি বছর দশ লাখের চেয়ে অনেক বেশী দেশীয় পর্যটক ভ্রমণ করছে দেশ জুড়ে, সাথে কয়েক লাখ পর্যটক ভ্রমণ করছে দেশের বাইরে। শুধুমাত্র ভারতেই প্রতি বছর কয়েকলাখ বাংলাদেশী ভ্রমণ করে টুরিস্ট ভিসায়। এই যে সুবিশাল পর্যটকগোষ্ঠী দেশের অভ্যন্তরেই রয়ে গেছে তাদের জন্য কোন পরিকল্পনার কথা আজও শুনতে পাই নাই। কিন্তু কেন? কারণ যথাযথ এবং বাস্তবসম্মত পরিকল্পনার অভাব। অথচ সারা বছর জুড়ে এই পর্যটকদের  কারনেই টিকে থাকে পর্যটন সংশ্লিষ্ট সার্ভিস প্রোভাইডাররা। অথচ, এই পর্যটকেরাই রয়ে যায় চরম উপেক্ষিত।

দেশের পর্যটন বিকাশের জন্য দরকার ছিল সবার আগে প্রতিটি পর্যটন ডেসটিনেশনের সাথে বিভাগীয় শহরগুলোর যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নতর করা। অথচ প্রতিটি স্পটের (হাতে গোনা দুয়েকটি ব্যতীত) প্রান্তিক কয়েক কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে কি যে কষ্টে করতে হয় তা পর্যটক মাত্রই জানেন। তাই অবকাঠামোগত  উন্নয়ন প্রথমে প্রয়োজন। এর সাথে নিরাপত্তা। এই দুটোর পরেই চলে আসে ব্যাবস্থাপনা, সরকারী ব্যাবস্থাপনায় ট্যুর প্যাকেজ খুবই সীমিত, বলা যায় নগণ্য, এর সংখ্যা বৃদ্ধি করা উচিত। সরকারী তেমন কোন পর্যটন প্য্যাকেজের কথা খুব একটা শোনা যায় না; আর গেলেও তা যেন হাতে গোনা দু’চারটি গন্তব্যে আঁটকে আছে। তাই সবার আগে উচিত সুপরিকল্পিত একটি ভ্রমণ পরিকল্পনা এবং প্যাকেজ তৈরি। সেই প্যাকেজের আওতায় দেশ-বিদেশের পর্যটকের জন্য বিভিন্ন মুল্যে ভ্রমণের ব্যবস্থা করা। এই লক্ষ্যে কিছু প্রস্তাবনা করা হলঃ

প্রথমেই পর্যটন স্পটগুলোকে কেন্দ্র করে পৃথক প্যাকেজ ব্যবস্থাপনা। পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলার বিভিন্ন স্পট নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন প্যাকেজ হতে পারে। তিনদিন থেকে পনেরদিনের পর্যন্ত। সময় এবং ভ্রমণের ধরন অনুযায়ী স্পটগুলো নির্ধারিত হবে। যে সব দেশে পর্যটন উন্নত সেখানেন এমনটাই হয়; পাশের দেশ ভারতের রেল কর্তৃপক্ষের পর্যন্ত ভ্রমণ প্যাকেজ রয়েছে নানান রকমের। আমাদের সমুদ্র সৈকতগুলো নিয়ে একটা প্যাকেজ থাকবে। থাকবে বনাঞ্চল নিয়ে বিভিন্ন প্যাকেজ। থাকবে খাল-বিল, নদী পথে বোট ট্রিপ। হতে পারে উৎসব ভিত্তিক প্যাকেজ। যাই হোক, তারা না করুক, আমরা তো করতে পারি? আসুন আমাদের নিজেদের একটি তালিকা তৈরি করি কি কি দেখা যেতে পারে আমাদের দেশে, অথবা কি কি দেখাতে পারি আমাদের বিদেশী কোন বন্ধুকে এই দেশে এনেঃ

প্রত্নতত্ত্বঃ মহাস্থানগড়, পাহাড়পুর, ময়নামতি, উয়ারিবটেশ্বর, কান্তজীমন্দির, ষাটগুম্বজ মসজিদ, লালবাগ কেল্লা, আহসান মঞ্জিল, পানাম নগরী থেকে শুরু করে নানান জমিদার বাড়ী (বালিয়াটি, মহেরা, তাজহাট প্রভৃতি)। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সাইটে গেলে শতাধিক স্পটের নাম পাওয়া যাবে।

হাওড়-বিলঃ টাঙ্গুয়ার হাওড়, হাকালুকি হাওড়, চলনবিল, আড়িয়াল বিল প্রভৃতি।

বনাঞ্চলঃ সুন্দরবন, রেমা-কালেঙ্গা, সাতছরি, ইনানি, কাপ্তাই, লাউয়াছরা, খাদিমনগর, কুকরি-মুকরি, ফাতরার বন, রাতারগুল প্রভৃতি।

সমুদ্র সৈকতঃ কক্সবাজার, ইনানি, টেকনাফ, সেন্টমার্টিণ, কুয়াকাটা, পতেঙ্গা, পারকি, কাট্টলি, তারুয়া, কটকা-জামতলা প্রভৃতি।

পাহাড়ঃ সাকাহাফং, কেওকেড়াডং, তাজিংডং, চিম্বুক, নীলগিরি, আলুটিলা, প্রভৃতি।

পাহাড়ি লেকঃ রাঙ্গামাটি, কাপ্তাই, বগালেক, দেবতার পুকুর প্রভৃতি।

ঝর্নাঃ মাধবকুণ্ড, পরিকুন্ড, হামহাম, পান্তুমাই, শুভলং, রিসাং, খইয়াছরা, রিজুক, নাফাখুম, অমিয়াখুম প্রভৃতি।

দ্বীপাঞ্চলঃ নিঝুম দ্বীপ, হাতিয়া, সন্দ্বীপ, সোনাদিয়া, মহেশখালি, কুতুবদিয়া, মনপুরা, সোনার চর, গঙ্গামতি, ছেরাদ্বীপ প্রভৃতি

উৎসবঃ পহেলা বৈশাখ, সাকরাইন, দুর্গাপূজা, ঈদ উৎসব, বৈসাবি, রাসমেলা, নবান্ন উৎসব, নৌকা বাইচ, জব্বরের বলিখেলা প্রভৃতি।

এভাবে প্রতিটি শ্রেণীর জন্য নানান মূল্য এবং সময় নিয়ে প্যাকেজ থাকা উচিত; এবং তা দেশী-বিদেশী উভয় পর্যটকের জন্য, ভিন্ন ভিন্ন সুবিধা এবং মূল্য সম্বলিত। এর সাথে তদারকি করতে হবে বেসরকারি ট্যুর অপারেটর, হোটেল-মোটেল-কটেজ’গুলোকে, রেস্টুরেন্ট, পরিবহণসহ পর্যটন সংশ্লিষ্ট সকল বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে। এই সব সেক্টরে বিদ্যমান সকল সরকারী সংস্থাকে আরও বিস্তৃত করতে হবে তাদের কার্যক্রম। যেমন, বিটিআরসি চালু করতে পারে দেশের নানান প্রান্তে টুরিস্ট বাস সার্ভিস, বিডব্লিউটিএ চালু করতে পারে বিশেষ লঞ্চ সার্ভিস।

এর সাথে নিশ্চিত করতে হবে উন্নত ইন্টারনেট সেবা, যাতে করে অনলাইনভিত্তিক সেবা প্রদান সহজতর হয়। নিরাপত্তার খাতিরে টুরিস্ট পুলিশকে আধুনিকায়ন করা, সড়কপথে দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ এগুলোও অতি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটনের বিকাশে। এভাবে প্রতিটি ক্ষুদ্রতর থেকে শুরু করে বৃহত্তর পরিসরে ঢেলে সাজাতে হবে, পরিকল্পনা হতে হবে বাস্তবসম্মত এবং সুদূরপ্রসারী। নইলে শুধু ঘোষণার বেড়াজালে আঁটকে যাবে এই উদ্যোগ।

শেষে একটা ঘটনা বলি, গত অক্টোবর মাসে কাশ্মীর ভ্রমণের এক সপ্তাহ আগে এক বন্ধু জানালো, টিভি নিউজে দেখেছে কাশ্মীরে গণ্ডগোল চলছে, এখন যাওয়া কি ঠিক হবে? তখন সকল প্রস্তুতি শেষ, শুধু ফেরার বিমান টিকেট করা বাকী, ভ্রমণ সাথী সবাই চিন্তিত। আমি কি মনে করে, জম্মু এন্ড কাশ্মীর ট্যুরিজম বোর্ড’কে মেইল করলাম, সিকিউরিটি ইস্যু এবং আমাদের ভ্রমণ নিয়ে। সেদিন ছিল রবিবার, সাপ্তাহিক ছুটির দিন। আমি মেইলে মেনশন করেছিলাম আরজেন্সির ব্যাপারে। মেইল করার পর দশ মিনিটের মধ্যে রিপ্লাই চলে আসল। গ্রিন সিগ্ন্যাল পেয়ে চলে গেলাম কাশ্মীর; ‘বন্‌ধ’ এর মত রাজনৈতিক কর্মসূচী এবং গো-ভক্ষণ’কে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে কাশ্মীরে একসপ্তাহ কাঁটিয়ে এলাম কোন ঝামেলা ছাড়াই। কারণ? ভারত সরকার ট্যুরিজমকে অনেক বেশী প্রাধান্য দিয়েছে, যে কোন জায়গায় টুরিস্ট বিশেষ অগ্রাধিকার লাভ করে। আমাদের দেশেও যেন দেশী-বিদেশী সকল পর্যটক এমন অগ্রাধিকার পায়, পায় ন্যায্য সুযোগ-সুবিধা।

শুভ পর্যটন বর্ষ ২০১৬। শুভ হোক অপার সম্ভাবনার পর্যটন শিল্পের পথ চলা। বিকশিত হোক আমাদের পর্যটন শিল্প, আমাদের দেশের রূপে বিমোহিত হোক বিশ্ববাসী।

Translate

বোকা পর্যটকের কথা

মানুষ যেমন হঠাৎ করেই কারো প্রেমে পড়ে, ঠিক তেমনই করে আমিও প্রেমে পড়েছি ভ্রমণের। আজব এক নেশায় নেশাগ্রস্থ, কবে থেকে জানি না। তবে নিজের আর্থ-সামাজিক অবস্থানে লড়াই করে টিকে থাকার পর ভ্রমণে মনঃসংযোগ করতে উদ্যত হই। সেই থেকে যখনই সময়-সুযোগ হয় বেড়িয়ে পড়ি ঘর হতে, ভ্রমণের তরে। মজার ব্যাপার হল, আমি সাইক্লিস্ট নই, সাঁতার কাটতে পারি না, না পারি ট্র্যাকিং, হাইকিং, ক্লাইম্বিং। কোন ধরণের এডভেঞ্চারধর্মী কোন গুণই আমার নেই, শুধু আছে ভ্রমণের শখ আর অদম্য ইচ্ছাটুকু। আর সেই ইচ্ছা থেকেই সময় সময় আমার ঘুরে বেড়ানো আর সেই গল্পগুলো লিপিবদ্ধ করে রাখা এই ডায়েরীতে। আমার এই লেখাগুলো বিভিন্ন সময়, বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে এবং ব্যক্তিগত ডায়েরীতে লেখা ছিল; সেগুলো সব একত্রে সংরক্ষণ করে রাখার নিমিত্তেই এই ব্লগ। যদি আপনাদের কারো এই লেখাগুলো কোন কাজে লাগে তবে আমার পরিশ্রম কিছুটা হলেও সার্থক হবে।

পোস্ট সংরক্ষণাগার

যোগাযোগ ফর্ম

প্রেরণ