হুমায়ূন আহমেদের জমিদার বাড়ী - নুহাশ পল্লী'তে একদিন (হুমায়ূন আহমেদ মৃত্যু দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি)

হুমায়ূন আহমেদের জমিদার বাড়ী - নুহাশ পল্লী'তে একদিন (হুমায়ূন আহমেদ মৃত্যু দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি)

গল্পের ছবিসকল

  • নুহাশ পল্লী
  • নুহাশ পল্লী
  • নুহাশ পল্লী
  • নুহাশ পল্লী
  • নুহাশ পল্লী
  • নুহাশ পল্লী
  • নুহাশ পল্লী
  • নুহাশ পল্লী
  • নুহাশ পল্লী
  • নুহাশ পল্লী
  • নুহাশ পল্লী
  • নুহাশ পল্লী
  • নুহাশ পল্লী
  • নুহাশ পল্লী
  • নুহাশ পল্লী
  • নুহাশ পল্লী
  • নুহাশ পল্লী
  • নুহাশ পল্লী
  • নুহাশ পল্লী
  • নুহাশ পল্লী
  • নুহাশ পল্লী
  • নুহাশ পল্লী
  • নুহাশ পল্লী
  • নুহাশ পল্লী
কিংবদন্তী কথাসাহিত্যক হুমায়ুন আহমেদ ব্যক্তিগত উদ্যোগে নুহাশ পল্লী প্রতিষ্ঠা করেন। ঢাকার ধানমণ্ডিতে তার বাসস্থান হলেও তিনি সুযোগ পেলই নুহাশ পল্লীতে চলে আসতেন সময় কাটাতে। কখনো আসতেন সপরিবারে, কখনো আসতেন বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে রাতভর আড্ডা দিতে। প্রতি বছর ১লা বৈশাখে নুহাশ পল্লীতে বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হতো। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুর চান্দনা চৌরাস্তা থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে হোতাপাড়া বাজার। সেখান থেকে ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে পিরুজালী গ্রাম। ওই গ্রামেই ১৫ বছর আগে ৪০ বিঘা জায়গা নিয়ে নুহাশ পল্লী তৈরি করেন হুমায়ুন আহমেদ। 
রাজধানীর অদূরে গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে এক দুর্গম এলাকায় প্রয়াত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ নুহাশ পল্লী গড়ে তুলেছেন। সেখানকার নানা স্থাপনা আর অসংখ্য ফলজ, বনজ গাছের পাশাপাশি তিনি বানিয়েছেন ঔষধি গাছের বাগান। সব মিলিয়ে মনের মতো করেই ছেলের নামে রাখা নুহাশ পল্লীকে এক স্বপ্নজগত করে তুলেছেন হুমায়ূন আহমেদ। তাই আড়াইশ প্রজাতির সবুজ গাছের সেই নন্দন কাননে বারবারই ছুটে গেছেন তিনি। নুহাশ পল্লীতেই হুমায়ূন আহমেদ গড়ে তুলেছেন স্যুটিং স্পট, দিঘি আর তিনটি সুদৃশ্য বাংলো। একটিতে থাকতেন আর বাকি দুটি ছিল তার শৈল্পিক চিন্তাধারার আরেক রূপ। শানবাঁধানো ঘাটের দিঘির দিকে মুখ করে বানানো বাংলোর নাম দিয়েছেন ‘ভূত বিলাস’। দুর্লভসব ঔষধি গাছ নিয়ে যে বাগান তৈরি করা হয়েছে তার পেছনেই রূপকথার মৎস্যকন্যা আর রাক্ষস। আরো রয়েছে পদ্মপুকুর, অর্গানিক ফর্মে ডিজাইন করা অ্যাবড়োথেবড়ো সুইমিং পুল। 
গত বছর এই ঈদের পর পর আমি এবং আমার দুই কাজিন মিলে যাই ‘নুহাশ পল্লী’ ভ্রমনে। এক কাজিন আবার হুমায়ুন আহমেদ এর মহা ভক্ত, কলেজের বই কেনার টাকা দিয়ে হুমায়ুন আহমেদ এর উপন্যাস কেনে, বুঝেন অবস্থা। তো আমরা প্রথমে ভাওয়াল রাজবাড়ী এবং ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানে বেড়িয়ে নিয়েছিলাম। তারপর ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানের গেট হতে বের হয়ে রাস্তার ওপারে গিয়ে একটি হিউম্যান হলারে উঠলাম হোতাপাড়ার উদ্দেশে। তবে সরাসরি মনিপুর অথবা পিরুজালিগামী হিউম্যান হলারও পেতে পারেন, সেক্ষেত্রে নেমে পরবেন পিরুজালী সরকার বাড়ী চৌরাস্তায়, হিউম্যান হলারের ড্রাইভারকে বলবেন নুহাশ যাওয়ার রাস্তায় নামাতে। 
আমরা হোতাপাড়া এসে আরেকটি হিউম্যান হলারে করে পিরুজালী চৌরাস্তায় নেমে পরলাম। এখানে নেমে সরকার বাড়ী চৌরাস্তার জামে মসজিদে জুম্মার নামাজ আদায় করলাম। নামাজ শেষে পালা এখন দুপুরের খাবারের। হোতাপাড়া বা পিরুজালী চৌরাস্তায় কোন খাবারের হোটেল নাই। কিছু রিকশাচালক পরামর্শ দিলে পিরুজালি থেকে ভেতরে কয়েক কিলোমিটার দুরের কোন এক বাজারে যেয়ে খেয়ে আসতে, সেখানে নাকি অনেকগুলো খাবার হোটেল রয়েছে। আবার আরেক জায়গায় যাওয়ার ঝক্কি বাদ দিয়ে শুকনো খাবার দিয়ে কাজ সারার সিদ্ধান্ত নিলাম। কিন্তু বিধিবাম, আশেপাশের প্রতিটি ড্রাইফুড দেখলাম এক্সপায়ার ডেট পার করেছে, পাউরুটি জাতীয় কিছু খাবারে দেখলাম ছত্রাক আক্রমন করেছে কিন্তু তবুও তা দোকানের সামনে ঝুলিয়ে রেখেছে। শেষে এক কিশোর রিকশাচালক জানালো নুহাশপল্লীর গেটে তেহারি বিক্রি করে, সেখানে গিয়ে খেতে। পিরুজালী হতে ত্রিশটাকা ভাড়ায় ব্যাটারিচালিত রিকশায় রওনা হলাম নুহাশপল্লীর উদ্দেশে। মিনিট দশেকের এই জার্নি খুবই উপভোগ করলাম। রিকশাগুলো ব্যাতিক্রম। প্লাস্টিক বডির চওড়া সিটগুলোর হুড একেবারে পরে গিয়ে বডির পেছনে ঝুলে থাকে, ফলে সিটের চারিদিকে পুরোটাই খোলা। সাধারণ রিকশার তুলনায় একটু বেশী গতিতে ছুটে চলা সরু পথে, শরীর ছুয়ে যায় মৃদু বাতাস।
নুহাশের গেটে পৌঁছে তেহারি পেলাম না, তবে সাদা ভাত, ছোট মাছের চচ্চরি, আলু ভর্তা আর ডাল দিয়ে জম্পেশ খেলাম। দুইশত টাকা টিকেট কেটে ঢুকতে হয় নুহাশ পল্লীর ভেতর, যা আমার কাছে একটু বেশীই ভনে হয়েছে। যাই হোক টিকেট কেটে ভেতরে ঢুকলাম। ভেতরে ঢুকতেই হাতের ডানদিকে রয়েছে একটি মা ও বাচ্চার মূর্তি, তার পাশে একটি ছাউনি। সেখানে দেখলাম “অন্যপ্রকাশ” এর স্বত্বাধিকারী মাজহারুল ইসলাম পরিবার নিয়ে বসে আছে, হুমায়ূন ভক্ত আমার খালাত ভাই হুমায়ূন পুত্র নিনিদকেও দেখেছে। 
ছাউনির পাশেই রয়েছে একটি কঙ্কালের মূর্তি যার নিচের পাটির একটি দাঁত পড়ে গেছে, আর সেই দাঁতের আকারে মূর্তির নীচে রয়েছে একটি সুইমিংপুল। কঙ্কালের মুখ হতে সুইমিংপুলে পানি পড়ছে, সুইমিংপুলের সেই পানি কৃত্রিমউপায়ে নীলাভ করা হয়েছে। সুইমিংপুলের পাশেই রয়েছে ছোট একটা কটেজ টাইপের রুম, হুমায়ূন আহমেদ নুহাশ পল্লীতে এসে এখানেই থাকতেন। কটেজের অপর পাশেই রয়েছে দুটি নকশাদার টেবিল-চেয়ার পাতা, যার প্রথমটির পাশে রয়েছে একটি কৃষ্ণকায় নগ্নবক্ষা নারীমূর্তি। 
আরেকটু এগিয়ে গেলে পাবেন “বৃষ্টি বিলাস” নামক কটেজটি। এটির ছাদ টিনের তৈরি যেন বৃষ্টির সময় বৃষ্টির শব্দ উপভোগ করা যায়। সুন্দর নকশা, ফলস সিলিং দেয়া কটেজটির আউটলুক সুন্দর। একটু ভেতরে আরেকটি কটেজ রয়েছে যার নাম “ভূত বিলাস”। দুই রুমের আধুনিক এই কটেজটির পেছনে ছোট পুকুর রয়েছে যার চারিদিক সুন্দর ঘাসে মোড়া ঢাল দিয়ে ঘেরা, এই ঢালের চারিদিকে রয়েছে গাছ-গাছালী। 
“ভূত বিলাস”এর পাশ দিয়ে একটি নড়বড়ে কাঠের সাকো রয়েছে পুকুরের মাঝখানের ছোট্ট একটুকরো দ্বীপাকারের ভূখণ্ডে যাওয়ার। সেখানে পুকুরের মাঝখানে একটি গাছের তলায় দুটি কাঠের বেঞ্ছি রয়েছে। আমরা তিনজন সেখানে গান শুনলাম কিছুক্ষন বসে বসে। চমৎকার অনুভুতি। ভূত বিলাসকে একপাশে রেখে অন্য পাশে রয়েছে দুটি দোলনা, স্লিপার; বাচ্চাদের মনোরঞ্জনের জন্য। বাচ্চাদের মনোরঞ্জনের জন্য আরও রয়েছে কিছু ডাইনোসর, মানব ভূত, মারমেইড সহ বিভিন্ন ভাস্কর্য। এর পাশে পুকুরের কিনারে আরেকটি মাটির ঘর রয়েছে।
তার পাশেই রয়েছে বৃক্ষপ্রেমী হুমায়ূন আহমেদের সেই বিখ্যাত বাগান যেখানে তিনি জড়ো করেছিলেন নানান ধরনের বৃক্ষসমূহ। এপাশ দিয়ে প্রধান ফটকের দিকে এগিয়ে গেলে পাবেন হুমায়ূনের সলিল সমাধি। মূল ফটকের বাইরে দিয়ে সেখানে যাওয়ার জন্য পৃথক পথ রয়েছে। এছাড়া নুহাশ পল্লীর সবুজ ঘাসে মোড়া চত্বরের মাঝখানে রয়েছে একটি ছোট্ট বটগাছ সদৃশ গাছ যার কাণ্ডর চারিদিকে বাঁধানো চত্বর। আরেকটু সামনে একটি গাছের উপর দুটি ছোট্ট বাঁশের বেড়ার তৈরি ঘর, যা শৌখিন হুমায়ূনকে রেপ্রেজেণ্ট করে। সামনে রয়েছে আরেকটি ছাউনির নীচে বিশাল কাঠামোর দাবার কোর্ট যার ফুট দুয়েক উঁচু উঁচু ঘুটি। জমিদারী কারবার কাকে বলে। পুরো নুহাশ পল্লী ঘুরে দেখার পর আপনি বলতে বাধ্য হবেন, নুহাশ পল্লী আসলেই একটি আধুনিক জমিদার বাড়ী। আর তাইতো লেখার শিরোনামে বলেছি “হুমায়ূন আহমেদের জমিদার বাড়ী”। 
 বিকাল চারটা নাগাদ বের হয়ে এলাম নুহাশ পল্লী হতে। রিকশাযোগে পিরুজালী এসে একটি হিউম্যান হলারে সরাসরি চলে এলাম গাজীপুর চৌরাস্তায়। এখান হতে ঢাকাগামী বাসে করে নিজ ডেরায়। সাথে নিয়ে এলাম আনন্দময় একগুচ্ছ স্মৃতি। আজ এই দিনে মনে পড়ে গেল একটি গানের কথা, ‘মরিলে কান্দিস না আমার দায়...’।
   

Translate

বোকা পর্যটকের কথা

মানুষ যেমন হঠাৎ করেই কারো প্রেমে পড়ে, ঠিক তেমনই করে আমিও প্রেমে পড়েছি ভ্রমণের। আজব এক নেশায় নেশাগ্রস্থ, কবে থেকে জানি না। তবে নিজের আর্থ-সামাজিক অবস্থানে লড়াই করে টিকে থাকার পর ভ্রমণে মনঃসংযোগ করতে উদ্যত হই। সেই থেকে যখনই সময়-সুযোগ হয় বেড়িয়ে পড়ি ঘর হতে, ভ্রমণের তরে। মজার ব্যাপার হল, আমি সাইক্লিস্ট নই, সাঁতার কাটতে পারি না, না পারি ট্র্যাকিং, হাইকিং, ক্লাইম্বিং। কোন ধরণের এডভেঞ্চারধর্মী কোন গুণই আমার নেই, শুধু আছে ভ্রমণের শখ আর অদম্য ইচ্ছাটুকু। আর সেই ইচ্ছা থেকেই সময় সময় আমার ঘুরে বেড়ানো আর সেই গল্পগুলো লিপিবদ্ধ করে রাখা এই ডায়েরীতে। আমার এই লেখাগুলো বিভিন্ন সময়, বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে এবং ব্যক্তিগত ডায়েরীতে লেখা ছিল; সেগুলো সব একত্রে সংরক্ষণ করে রাখার নিমিত্তেই এই ব্লগ। যদি আপনাদের কারো এই লেখাগুলো কোন কাজে লাগে তবে আমার পরিশ্রম কিছুটা হলেও সার্থক হবে।

পোস্ট সংরক্ষণাগার

যোগাযোগ ফর্ম

প্রেরণ