জলের দিনে জলের দেশের গল্প

জলের দেশ বাংলাদেশ, আর এই বাংলাদেশের সবুজ প্রকৃতির রূপের মোহময়ী জাদুর ছোঁয়া লাগে বর্ষায়। বর্ষার বর্ষণের যে ভালবাসার চুম্বন জড়ায় প্রকৃতির সারা অঙ্গে, সেই অঙ্গেপাণে চেয়ে বিমোহিত হবে না, এমন মানুষ মেলা কঠিন। আর তাইতো প্রতি বর্ষায় প্রকৃতিপ্রেমী মানুষ ছুটে যায় হাওড় আর বিলে। প্রতি বছর বর্ষায় বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশী পর্যটকের সমাগম ঘটে এই জলাধারগুলোতে।(বি.দ্র. এই পোস্টের সকল ছবি নেত্রকোনা’র মোহনগঞ্জ থেকে মেঘালয় কোল ঘেঁষা টেকেরঘাট হয়ে সুনামগঞ্জ পর্যন্ত বিস্তৃত হাওড়গুলো হতে তোলা ছবি। অন্য কোন অঞ্চলের হাওড়, বাঁওড় বা বিলের কোন ছবি এই পোস্টে সংযুক্ত না করতে পারায় দুঃখিত)












আসুন দেখি প্রথমে হাওড়ের দিকে। উইকি বলছে, হাওর বা হাওড় হলো সাগরসদৃশ পানির বিস্তৃত প্রান্তর। প্রচলিত অর্থে হাওর হলো বন্যা প্রতিরোধের জন্য নদীতীরে নির্মিত মাটির বাঁধের মধ্যে প্রায় গোলাকৃতি নিচুভূমি বা জলাভূমি। তবে হাওর সব সময় নদী তীরবর্তী নির্মিত বাঁধের মধ্যে নাও থাকতে পারে। হাওরের সাধারণ বৈশিষ্ট্য হলো, প্রতি বছরই মৌসুমী বর্ষায় বা স্বাভাবিক বন্যায় হাওর প্লাবিত হয়, বছরের কয়েক মাস পানিতে নিমজ্জিত থাকে এবং বর্ষা শেষে হাওরের গভীরে পানিতে নিমজ্জিত কিছু স্থায়ী বিল জেগে উঠে। গ্রীষ্মকালে হাওরকে সাধারণত বিশাল মাঠের মতো মনে হয়, তবে মাঝে মাঝে বিলে পানি থাকে এবং তাতে মাছও আটকে থাকে। আসলে হাওড় একেক ঋতুতে একেক রূপ নিয়ে হাজির হয় প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে, সেই রূপের কোনটি কিন্তু কোনটি থেকে কম নয়। তবে বর্ষায় হাওড় অপরূপ।











বাংলাদেশে প্রায় ৪০০ হাওর রয়েছে যেগুলোকে ভূ-তাত্ত্বিক অবস্থান বা এলাকার বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে বাংলাদেশের হাওরকে ৩ ভাগে ভাগ করা হয়: (১) পাহাড়ের পাদদেশে বা পাহাড়ের কাছাকাছি অবস্থিত হাওর, (২) প্লাবিত এলাকার হাওর এবং (৩) গভীর পানিতে প্লাবিত এলাকার হাওর। এই তিন শ্রেণীর হাওর এলাকার মৎস্য সম্পদ, পানি সম্পদ, কৃষি এবং আর্থ-সামাজিক শর্তগুলো আলাদা আলাদাভাবে প্রতীয়মান হয়। বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি হাওর রয়েছে সিলেট বিভাগে। বাংলাদেশের হাওরগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:










টাঙ্গুয়ার হাওর বাংলাদেশের বৃহত্তর সিলেটের সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা ও তাহিরপুর উপজেলার মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত একটি হাওর। প্রায় ১০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এ হাওর বাংলাদেশর দ্বিতীয় বৃহত্তম মিঠা পানির জলাভূমি । স্থানীয় লোকজনের কাছে হাওরটি নয়কুড়ি কান্দার ছয়কুড়ি বিল নামেও পরিচিত। এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় রামসার স্থান, প্রথমটি সুন্দরবন।টাঙ্গুয়ার হাওর মেঘালয় পাহাড় থেকে ৩০টিরও বেশি ঝরা (ঝরণা) এসে মিশেছে এই হাওরে। দুই উপজেলার ১৮টি মৌজায় ৫১টি হাওরের সমন্বয়ে ৯,৭২৭ হেক্টর এলাকা নিয়ে টাঙ্গুয়ার হাওর জেলার সবচেয়ে বড় জলাভূমি। পানিবহুল মূল হাওর ২৮ বর্গকিলোমিটার এবং বাকি অংশ গ্রামগঞ্জ ও কৃষিজমি। একসময় গাছ-মাছ-পাখি আর প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্যের আধার ছিল এই হাওর।












হাকালুকি হাওর বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ হাওর। এর আয়তন ১৮,১১৫ হেক্টর, তন্মধ্যে শুধুমাত্র বিলের আয়তন ৪,৪০০ হেক্টর। এটি মৌলভীবাজার জেলার় বড়লেখা (৪০%), কুলাউড়া (৩০%), এবং সিলেট জেলার় ফেঞ্চুগঞ্জ (১৫%), গোলাপগঞ্জ (১০%) এবং বিয়ানীবাজার (৫%) জুড়ে বিস্তৃত। ভূতাত্ত্বিকভাবে এর অবস্থান, উত্তরে ভারতের মেঘালয় পাহাড় এবং পূর্বে ত্রিপুরা পাহাড়ের পাদদেশে। ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যের কারণে উজানে প্রচুর পাহাড় থাকায় হাকালুকি হাওরে প্রায় প্রতি বছরই আকষ্মিক বন্যা হয়। এই হাওরে ৮০-৯০টি ছোট, বড় ও মাঝারি বিল রয়েছে। শীতকালে এসব বিলকে ঘিরে পরিযায়ী পাখিদের বিচরণে মুখর হয়ে উঠে গোটা এলাকা। 












বাংলাদেশের প্রায় চারশত হাওড়ের মধ্যে কয়েকটির নাম উল্লেখ করা যেতে পারেঃ বারাম হাওড়, বাংকা হাওড়, হাবিবপুর হাওড়, ম্যাকার হাওড়, মাকালকান্দি হাওড়, ঘুলডুবা হাওড়, শনির হাওড়, মতিয়ান হাওড়, দেখার হাওড়, পাথর চালনি হাওড়, ঝিলকার হাওড়, ঝিনকার হাওড়, জামাইকাটা হাওড়, মাহাই হাওড়, পারুয়া হাওড়, চাতাল বার হাওড়, হাইলা হাওড়, কাউয়াদীঘি হাওড়, পাগলা হাওড়, হাইল হাওড়, ডিঙ্গাপোতা হাওড়, গনেশের হাওড়, তোলার হাওড়, অঙ্গনের হাওড়, বারা হাওড়, হুমাইপুর হাওড়, ইটনা হাওড়, শনিয়া হাওড়, খলিয়াগুরি হাওড়, অলিয়া হাওড়, ডুবুরিয়ার হাওড়, ছাইয়ের হাওড়, কাঙ্গালের হাওড়, মাইজিল হাওড়, দামড়ির হাওড়, পাঙ্গের হাওড়, কানা মিয়ার হাওড়, উবদাখালি হাওড়, বালাই হাওড়, বড় হাওড়, গুড়মার হাওড়, নলুয়া হাওড়, পচাশোল হাওড়, মাহমুদপুর হাওড়, রায়ের গাঁও হাওড়, সুরমা বাউলার হাওড়, হুমাইপুর হাওড় প্রভৃতি। 












বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গ ও আসামে বিস্তীর্ণ আবদ্ধ স্বাদুপানির জলাশয়কে বিল বলা হয়। বিল মূলত নিম্নভূমি যেখানে অতিরিক্ত পানি এসে জমা হয়। শুকনোর মৌসুমে অধিকাংশ বিলে কোন পানি থাকে না। তখন সেই এলাকা চাষাবাদ ও গবাদিপশুর চারণক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়। একটু বৃষ্টি হলে বা বর্ষা মৌসুমে এসব নিম্নভূমি পানিতে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। সাধারণত বিলের গভীরতা বেশি হয় না। বেশিরভাগ বিলই জলাভূমির মত। তবে বড় বড় বিলের গভীরতা অনেক বেশি এবং প্রায় সারা বছর এসব বিলের কোথাও না কোথাও পানি থাকে। বাংলাদেশের ঢাকা, কুমিল্লা, ফরিদপুর, নাটোর ও পাবনায় বিলের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। 












চলন বিল (Chalan Beel) বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিল এবং সমৃদ্ধতম জলাভূমিগুলির একটি। দেশের সর্ববৃহৎ এ বিল বিভিন্ন খাল বা জলখাত দ্বারা পরস্পর সংযুক্ত অনেকগুলি ছোট ছোট বিলের সমষ্টি। বর্ষাকালে এগুলি সব একসঙ্গে একাকার হয়ে প্রায় ৩৬৮ বর্গ কিমি এলাকার একটি জলরাশিতে পরিণত হয়। বিলটি সংলগ্ন তিনটি জেলা রাজশাহী, পাবনা ও সিরাজগঞ্জ-এর অংশবিশেষ জুড়ে অবস্থান করছে। চলন বিল সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ ও পাবনা জেলার চাটমোহর উপজেলা দুটির অধিকাংশ স্থান জুড়ে বিস্তৃত। এটি নাটোর জেলার সিংড়া উপজেলা ও গুমনী নদীর উত্তর পাড়ের মধ্যে অবস্থিত। বিলটির দক্ষিণপূর্ব প্রান্ত পাবনা জেলার নুননগরের কাছে অষ্টমনীষা পর্যন্ত বিস্তৃত। এ জেলায় চলন বিলের উত্তর সীমানা হচ্ছে সিংড়ার পূর্ব প্রান্ত থেকে ভদাই নদী পর্যন্ত টানা রেখাটি যা রাজশাহী, পাবনা ও বগুড়া জেলার মধ্যবর্তী সীমানা নির্দেশ করে। ভদাই নদীর পূর্ব পাড়ে অবস্থিত তাড়াস উপজেলা ও পাবনা জেলা বরাবর উত্তর-দক্ষিণমুখী একটি রেখা টানলে তা হবে বিলটির মোটামুটি পূর্ব সীমানা। বিলটির প্রশস্ততম অংশ উত্তর-পূর্ব কোণে তাড়াস থেকে গুমনী নদীর উত্তর পাড়ের নারায়ণপুর পর্যন্ত প্রায় ১৩ কিমি বিস্তৃত সিংড়া থেকে গুমনী পাড়ের কচিকাটা পর্যন্ত অংশে এটির দৈর্ঘ্য সবচেয়ে বেশি, ২৪ কিমি।








বিল ডাকাতিয়া (Beel Dakatia) খুলনা জেলার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত এই বিল গাঙ্গেয় জোয়ারভাটা বিধৌত বদ্বীপীয় সমভূমির অন্তর্গত। এই অঞ্চলের ভূরূপতাত্ত্বিক, জলতাত্ত্বিক ও ভূ-গাঠনিক শর্তসমূহ উপেক্ষা করে সমুদ্র থেকে ভূমি উদ্ধার করার (polder) ফলে বিগত ১৫ বছরের অধিককাল যাবৎ জলাবদ্ধতা ও জলনিষ্কাশন সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে এখানে ফসল উৎপাদনে যেমন বিঘ্ন ঘটছে, তেমনি পরিবেশ দূষণ ঘটছে। স্থায়ী পোল্ডারিংয়ের আগে অবক্ষেপণ ও ঐ এলাকার অবনমনের মধ্যে একটি সমতা ছিল। এই সমতা বর্তমানে সম্পূর্ণভাবে বিনষ্ট হয়ে যাওয়ায় জোয়ারভাটা খাতে অতি দ্রুত অবক্ষেপণ, আর জোয়ারভাটা সমভূমিতে অতিসীমিত অবক্ষেপণ ও দ্রুত অবনমন পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিল ডাকাতিয়া অঞ্চলের আবহাওয়ার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ভ্যাপসা গরম ও মৃদু শীত। উপরন্তু এই অঞ্চল ক্রান্তিমন্ডলীয় ঘূর্ণিঝড়, জোয়ারভাটা, জলমগ্নতা, ভারি বৃষ্টিপাত ও লবণাক্ততা দ্বারা পূর্ণ। সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা সাধারণত ২৯° সেলসিয়াস থেকে ৪০° সেলসিয়াস এবং ৭° সেলসিয়াস থেকে ২৫° সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করে। এই এলাকায় বাৎসরিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১,৭৫০ মিমি। শুকনা মৌসুমে গড় আপেক্ষিক আর্দ্রতার পরিমাণ ৭৫%। স্বাভাবিক অবস্থায় অঞ্চলটি সোলমারি, হামকুরা, হরি, সাল্টা, ভাদ্র ও ভৈরব নদীর পানিতে সিঞ্চিত। বিল ডাকাতিয়া ও এর সংলগ্ন অঞ্চলসমূহ জলাময় কাদা, পিট ও বদ্বীপীয় পলি অবক্ষেপ দ্বারা গঠিত। পিটময় কাদা, কাদাময় পিট ও পিট নিয়ে এখানকার অধিকাংশ অঞ্চল গঠিত। প্রকৃতপক্ষে সামান্য উঁচু এলাকাতেই এই পিটময় কাদা, কাদাময় পিট ও পিটের বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। অন্যত্র জৈব সমৃদ্ধ ও মিহি বুননবিশিষ্ট পদার্থেরই আধিক্য বেশি। 







বাইক্কা বিল ঢাকা থেকে ২০০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে মৌলভীবাজার জেলার প্রখ্যাত চা-সমৃদ্ধ শহর শ্রীমঙ্গলের হাইল হাওড়ের পূর্বদিকের প্রায় ১০০ হেক্টর আয়তন নিয়ে গঠিত। আইড়, কই, মেনি, ফলি, পাবদাসহ আরো অনেক প্রজাতির মাছ এখানে বংশবৃদ্ধি করে পুরো হাওড়ে ছড়িয়ে পড়ে। এই বিল মাছের জন্যেই শুধু নয়, পাখি এবং অন্যান্য অনেক প্রাণীর জন্যও একটি চমৎকার নিরাপদ আবাসস্থল। এটি একটি নয়নাভিরাম জলাভূমি যেখানে হাজারো শাপলা আর পদ্ম ফুল ফোটে। এছাড়া এই বিলের বুনো বাসিন্দা আর শীতে আগত পরিযায়ী পাখিদের ভালোভাবে দেখার জন্য তৈরি করা হয়েছে একটি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার। বাইক্কা বিলে প্রতি বছর শীত মৌসুমে প্রচুর পরিযায়ী পাখির সমাগম ঘটে। বাইক্কা বিলকে সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণা করায় পাখির সংখ্যা আগের বছরগুলোর তুলনায় এবার অনেক বেড়েছে। 







আড়িয়াল বিল ঢাকার দক্ষিণে পদ্মা ও ধলেশ্বরী নদীর মাঝখানে অবস্থিত প্রায় ১৩৬ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের একটি অবভূমি। প্রায় সমগ্র এলাকাই পুরু কাদা দিয়ে আবৃত। খুব কাছাকাছি দুটি বৃহৎ নদীপ্রবাহ থাকার পরও বৃষ্টির পানি জমে এখানে গভীর মৌসুমি প্লাবন সংঘটিত হয়ে থাকে। বর্ষা মৌসুমে নদীদুটিতে প্রবাহ পূর্ণমাত্রায় বিদ্যমান থাকে বিধায় এ বিল সঞ্চিত পানি নিষ্কাশন করতে ব্যর্থ হয়। আড়িয়াল বিল এলাকার বেশিরভাগই শুষ্ক ঋতুতে আর্দ্র থাকে এবং বিলে যথেষ্ট পরিমাণে পানি সঞ্চিত থাকে।






বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে বহুল পরিচিত বাঁওড় অনেকাংশেই বিল-এর সমার্থক। সাগরখালি, জালেশ্বর, ক্ষেদাপারা, রামপুর, পাঠানপাড়া, কাঠগড়া, যোগীনি ভাগীনি, ইছামতি, জয়দিয়া, মারজাত, হরিনা এবং আরিয়ল বাংলাদেশের প্রধান বাঁওড়গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। আয়তনের দিক দিয়ে এগুলো অর্ধ-বর্গ কিমি থেকে ১৩ বর্গ কিমি পর্যন্ত। তুলনামূলকভাবে বিল-এর চাইতে বাঁওড় অধিক স্থিতিশীল এবং সাধারণত সারা বৎসর এগুলোতে পানি থাকে। বাঁওড় উৎপত্তির সাধারণ চিত্র হলো - নদীর গতিপথ পরিবর্তিত হওয়ায় অথবা জলধারার কোন অংশের উৎসমুখ পলিকণা ইত্যাদি দিয়ে ভরাট হয়ে মূলধারা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় যে হ্রদ সৃষ্টি হয় তাকেই বাঁওড় বলে। মূল নদীতে যখন উঁচুমাত্রার বন্যা হয় কেবলমাত্র তখনই বাঁওড়গুলো বিপুল জলরাশি লাভ করে। তবে সাধারণভাবে বর্ষার সময় স্থানীয় বৃষ্টির পানি বাঁওড় এলাকায় এসে জমা হয় এবং এই সঞ্চিত জলরাশি কখনও কখনও আশেপাশের প্লাবনভূমিতে ছড়িয়ে পড়ে স্থানীয়ভাবে বন্যার সৃষ্টি করতে পারে। অসংখ্য জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণীর আবাসস্থল হিসেবে বাঁওড় বাংলাদেশের জলাভূমির এক গুরুত্বপূর্ণ অংশরূপে পরিগণিত হয়ে আসছে। বাঁওড়-এর প্রান্তীয় এলাকার তুলনামূলক উঁচু ভূমিগুলো সাধারণত ধান চাষ এবং গো-চারণের জন্য ব্যবহূত হয়ে থাকে।


হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচংয়ের “লক্ষ্মী বাঁওড়” শুধু একটি বাঁওড় নয়, এটি রাতারগুলের মত একটি জলাবনও বটে। প্রায়ই লক্ষ্মী বাঁওড় জলাবন দেখতে পর্যটকরা আসছেন। বিভিন্ন ধরনের গাছ-গাছালি, ফুল-ফল, পশু-পাখি, সাপ-বিচ্ছু দেখে মুগ্ধ হয়ে অনেকে ভ্রমণ কাহিনীও লিখছেন। এভাবেই দিন দিন পর্যটকদের আকৃষ্ট করছে লক্ষ্মী বাঁওড় জলাবন। বানিয়াচং উপজেলার গন্ধবপুর, লক্ষ্মী বাঁওড় ও খাকদার মৌজার প্রায় ৩০০ একর জমির ওপর লক্ষ্মী বাঁওড় জলাবন। স্থানীয় লোকজনের কাছে যা ‘খরতির জঙ্গল’ হিসেবে পরিচিত।







এতক্ষণ ধরে যে জ্ঞান বিতরন করলাম সব কিন্তু উইকি আর বাংলাপিডিয়া থেকে ধার করা। এগুলো একত্রিত করার একমাত্র কারণ, জলের দেশের মানুষ আমরা, এই বর্ষায় যেন বেড়িয়ে পড়তে পারি জলের জাদুতে হারিয়ে যেতে। আর তাইতো হাওড়, বাঁওড় আর বিলের এতো তথ্য একত্রিত করে পরিবেশন করলাম সামু ব্লগের বন্ধুদের সাথে। এর সাথে যোগ করে দিলাম সদ্য বেশ কিছু হাওড় ভ্রমণের সময় তোলা কিছু ছবি। নেত্রকোনা’র মোহনগঞ্জ থেকে মেঘালয় কোল ঘেঁষা টেকেরঘাট হয়ে সুনামগঞ্জ পর্যন্ত নৌভ্রমণে তোলা এই পোস্টের সকল ছবিগুলো। 

তথ্যসুত্র এবং লেখাঃ উইকিপিডিয়া বাংলা এবং বাংলাপিডিয়া

Translate

বোকা পর্যটকের কথা

মানুষ যেমন হঠাৎ করেই কারো প্রেমে পড়ে, ঠিক তেমনই করে আমিও প্রেমে পড়েছি ভ্রমণের। আজব এক নেশায় নেশাগ্রস্থ, কবে থেকে জানি না। তবে নিজের আর্থ-সামাজিক অবস্থানে লড়াই করে টিকে থাকার পর ভ্রমণে মনঃসংযোগ করতে উদ্যত হই। সেই থেকে যখনই সময়-সুযোগ হয় বেড়িয়ে পড়ি ঘর হতে, ভ্রমণের তরে। মজার ব্যাপার হল, আমি সাইক্লিস্ট নই, সাঁতার কাটতে পারি না, না পারি ট্র্যাকিং, হাইকিং, ক্লাইম্বিং। কোন ধরণের এডভেঞ্চারধর্মী কোন গুণই আমার নেই, শুধু আছে ভ্রমণের শখ আর অদম্য ইচ্ছাটুকু। আর সেই ইচ্ছা থেকেই সময় সময় আমার ঘুরে বেড়ানো আর সেই গল্পগুলো লিপিবদ্ধ করে রাখা এই ডায়েরীতে। আমার এই লেখাগুলো বিভিন্ন সময়, বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে এবং ব্যক্তিগত ডায়েরীতে লেখা ছিল; সেগুলো সব একত্রে সংরক্ষণ করে রাখার নিমিত্তেই এই ব্লগ। যদি আপনাদের কারো এই লেখাগুলো কোন কাজে লাগে তবে আমার পরিশ্রম কিছুটা হলেও সার্থক হবে।

পোস্ট সংরক্ষণাগার

যোগাযোগ ফর্ম

প্রেরণ