অবশেষে পৌঁছলুম কোচিন
ভিক্টোরিয়া মেমরিয়ালের প্রবেশ পথের সম্মুখের রাস্তা, যা queens way নামে পরিচিত, সেখানে অবস্থিত ভাস্কর্য।
ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হতে দেখা St. Paul's Cathedral এর ঊর্ধ্বাংশ।
রানী ভিক্টোরিয়ার আসনে বসা অবস্থায় ভাস্কর্য।
বোকা পর্যটকের ক্যামেরায় Victoria Memorial Museum এর বাহির হতে পুরো স্থাপনা।
ভিক্টোরিয়া মেমরিয়ালের প্রবেশ পথের সম্মুখের রাস্তা, যা queens way নামে পরিচিত, সেখানে অবস্থিত ভাস্কর্য। ভিন্ন এঙ্গেল থেকে নেয়া ভিউ।
যাই হোক, নাস্তা শেষ করে আজ দাদাকে নিয়ে রওনা হলাম কলকাতার পথে। চলে গেলাম বিখ্যাত ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল। এখানে ঘন্টাখানেক সময় কাটালাম, মিউজিয়াম দেখলাম, ছবি তোলা হল বেশকিছুই, এরপর দাদা এক প্রকার জোর করেই নিয়ে গেলেন আবার তার গড়িয়ার বাসায়, সেখানে দুপুরের লাঞ্চ শেষে একটি ট্যাক্সি ডেকে দিলেন আমাদের এয়ারপোর্টে পৌঁছে দেয়ার জন্য। দাদা-বৌদি’ থেকে বিদায় নিয়ে আমরা রওনা হলাম দমদমের পথে, আর পেছনে পড়ে রইল একরাশি আবেগী ক্ষণ আর সাথে নিয়ে গেলাম কিছু সুখস্মৃতি চিরদিনের জন্য।
এই ব্রোঞ্জ প্যানেলের স্থাপত্য শিল্পটি মূলত তৈরী করা হয়েছিল তৎকালীন ভাইসরয় এর ভাস্কর্যের জন্য। পরবর্তীতে এটা হস্তান্তর করা হয় রানী ভিক্টোরিয়া'র ভাস্কর্যের নীচের প্যানেলে সংযুক্ত হয়। এটির নির্মাতা ছিলেন SIR GOSCOMBE JOHN R. A.।
ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে প্রবেশমুখে স্থাপিত সিংহের ভাস্কর্য, যা মূলত ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রতীক ছিল।
মিউজিয়াম থেকে বের হলে বহির্গমন পথে দেখতে পাওয়া যায় এই অশ্মরোহী ভাস্কর্যটি। এটি সপ্তম এডওয়ার্ড এর মুর্তি।
ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল জাদুঘরে প্রবেশদ্বার হতে নেয়া গার্ডেন এর ভিউ।
বাসা হতে যাত্রা শুরু করার প্রায় ৭২ ঘন্টা পরে অবশেষে পৌঁছলুম কোচিন। এয়ারপোর্টে পৌঁছে বোর্ডিং পাস নিয়ে লাগেজ এর যন্ত্রণামুক্ত হয়ে আমরা অপেক্ষা করতে লাগলাম চেন্নাইগামী আমাদের স্পাইসজেট ডমেস্টিক বিমানের জন্য। প্রথম গন্তব্য কলকাতা থেকে চেন্নাই, তারপর সেখানে ঘন্টা দেড়েকের যাত্রা বিরতির পর চেন্নাই থেকে কোচিন। বিকেল ০৪:৪৫ নাগাদ কলকাতা থেকে যাত্রা করে রাত সাতটা নাগাদ পৌঁছে গেলাম চেন্নাই। এরপর টার্মিনালে বসে বসে জাবর কাটা, না থুক্কু, স্ন্যাক্স আর কফি গলধকরন, তার সাথে উচ্চমূল্য নিয়ে কিছুক্ষণ জ্ঞানগর্ভ আলোচনা :P নিজেদের মধ্যে ;) । এরপর ফের অন্য এক বিমানে করে রাত সাড়ে আটটা নাগাদ রওনা দিলাম চেন্নাই হতে কোচিন এর উদ্দেশ্যে। সাড়ে নয়টা নাগাদ ল্যান্ড করল বিমান, লাগেজ নিয়ে বের হতে হতে রাত দশটা। ততোক্ষণে আমাদের এই এক সপ্তাহের কেরালার ভ্রমণগাইড তথা সঙ্গী কাম ড্রাইভার, মিঃ বিনয় পি জোস, তার নিজের ২০১৩ মডেলের টয়োটা ইনোভা গাড়ী নিয়ে আমাদের জন্য বাইরে অপেক্ষা করছে।
আমি কলকাতা হতেই অল ইন্ডিয়া মোবাইল সিম কিনে নিয়েছিলাম, আর আমাদের কেরালা’র এজেন্ট আগে থেকেই আমাকে মিঃ বিনয় এর মোবাইল নাম্বার দিয়ে রেখেছিল। এয়ারপোর্ট হতে বের হয়ে তাকে ফোন দিতেই সে জানালো মিনিট দুইয়ের মধ্যে সে গাড়ী নিয়ে হাজির হচ্ছে টার্মিনাল গেটে, সে আছে পার্কিং লটে। ভদ্রলোককে দেখে পছন্দ হল, গাড়ীটিও প্রায় নতুন কন্ডিশনেই আছে। পরবর্তীতে জেনেছিলাম, সাত বছর আমেরিকায় থাকার পর দেশে এসে নিজের টাকায় এই গাড়ীটি কিনে সে এখন টুরিস্ট গাইড কাম ড্রাইভার হিসেবে কাজ করে, মাসে দশ থেকে বারো দিন। সারা ভারতের ভালমানের ছয়টি ট্রাভেল এজেন্সী’র সাথে তার চুক্তি আছে, ফলে প্রতি মাসে দশ বারোদিনের ক্লায়েন্ট সবসময় তার হাতে থাকে। সারা মাস কেন কাজ করে না, জিজ্ঞাসা করেছিলাম পরবর্তীতে একদিন। উত্তরে স্মিত হেসে বলেছিল, তার নিজের যা সম্পত্তি আছে আর আয় আছে, তাতে সপ্তাহখানেক গাড়ী চালালেই তার হয়ে যায়। সারা ট্রিপে এই ভদ্রলোকের কল্যাণে, আমার সবকয়টি ভারত ভ্রমণের মধ্যে এটি স্মরনীয় হয়ে আছে।
আমাদের প্রথম রাতের আবাসের হোটেল রুম (উপরে) আর হোটেলের আউট সাইড ভিউ (নীচে)।
আমাদের আজকের রাতের আবাসন "Hotel Castle Rock" এ, সেটা কোচিন এয়ারপোর্ট থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে। এয়ারপোর্ট থেকে যখন রওনা হলাম, ঘড়িতে তখন স্থানীয় সময় রাত সোয়া দশটা। হোটেল পৌঁছতে পৌঁছতে রাত এগারোটা বেজে যেতে পারে, এত রাতে হোটেলের রেস্টুরেন্ট বন্ধ হয়ে যাবে, এমনকি আশেপাশের সকল খাবার দোকানও হয়ত। এই অভিজ্ঞতা কেরালা ট্রিপের শেষের রাতে হয়েছিল, সেই গল্প যথাসময়ে শোনা যাবে। পথিমধ্য হতে মিঃ বিনয় এর পরামর্শে আন্তর্জাতিক চেইন ফুডশপ "Chicking" এ, মেনু চিকেন ললিপপ, চিকেন গ্রিল, চিকেন বার্গার, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, ট্রটিলা কিনে নিলাম। রাতের কেরালা দেখতে দেখতে চললাম, চারিধার প্রায় জনশূন্য, রাত নয়টা নাগাদই সব দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়, পরে দেখেছি। চলছে মেট্রোরেলের কাজ জোরেশোরে।
রাত এগারোটায় আমরা পৌঁছলাম আমাদের হোটেলে। এত রাতে এসে হাজির হওয়া সত্ত্বেও পেলাম স্বাভাবিক আতিথিয়তা। চারজন গেস্টের জন্য ম্যানেজার, রিসিপসনিস্ট সহ মোট ছয়জন কর্মচারী উপস্থিত, তাদের মধ্যে দুয়েকজন ঘুম থেকে উঠে এসেছে, চেহারা দেখে বোঝা যায়। আসলে একটা দেশে পর্যটনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে এরকম সার্ভিসই দরকার। ভাল লেগেছে, তাদের তৎপরতা দেখে। যদিও এই ট্রিপে প্রতিটি হোটেলে শুধুমাত্র রাত্রি যাপনই করা হয়েছে, তেমন করে হোটেলে থাকা বা হোটেল পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ হয় নাই। আট রাতের মধ্যে চাররাতেই ভোর পাঁচটার সময় আমরা হোটেল হতে চেক আউট করে ছুটেছি পরবর্তী গন্তব্যে।
এরপর আর কি? মিঃ বিনয় হতে পরের দিনের শিডিউল কনফার্ম হয়ে আমরা রুমে চলে গেলাম। ফ্রেশ হয়ে সাথে করে কিনে আনা খাবার খেয়ে ঘুমানোর আয়োজন। আগামীকাল হতেই মূলত আক্ষরিক অর্থে শুরু হবে আমাদের কেরালা ট্রিপ। ঢাকা থেকে রওনা দেয়ার তৃতীয় রাতে এসে পৌঁছলুম যাত্রা শুরুর স্থলে।
(চলবে...)
মন্তব্যসমূহ