মুন্নার টি মিজিয়াম ভ্রমণ

মুন্নার এর প্রথম দিনের সকালটা ছিলো খুবই মনোমুগ্ধকর। আগের রাতে অনেক রাত অবধি হোটেল রুমের লাগোয়া বারান্দায় বসে গল্প করা, এরপরও বিছানায় এসে অনেকটা সময় নিদ্রাহীন কাটানোয়, ঘুম তেমন ভাল হয় নাই। আর আগের রাতে ঘুমটা ভাল না হওয়ায়, সকালে ঘুম থেকে উঠতে বড্ড খারাপ লাগছিল। তারপরও ঘুম থেকে উঠে গোসল সেরে শরীরটাকে একটু চাঙ্গা করে নিলাম। রুম থেকে বের হয়ে পাহাড়ের ঢালে তৈরি হোটেলের প্রতিটি ফ্লোরে ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম। সকালের নাস্তার আয়োজন, হোটেলের নীচের দিকের দ্বিতীয়তলায়, অর্থাৎ মাইনাস ফার্স্টফ্লোরে। সেখানে রুমের ভেতরে এবং বাইরের দিকে ভ্যালীভিউ বারান্দায় টেবিল সাজানো রয়েছে। সেখানে ইতোমধ্যে অনেকেই নাস্তা নিয়ে বসে গেছে। কোনার এক টেবিলে দেখি আমাদের ভ্রমণ সাথীদের একজনা বসে বসে ফলের জুসে চুমুক দিয়ে পাহাড় ঘেরা ভ্যালীর পাণে উদাসী চোখে তাকিয়ে কি যেন ভাবছে। একে একে দলের বাকী তিনজনও বসে পড়লাম সেই টেবিলে, বেচারার ভাবনায় ব্যাঘাত ঘটিয়ে। সেবারের কেরালা ট্রিপে প্রতিদিনের সকালের হোটেল এর কমপ্লিমেন্টারী বুফে ব্রেকফাস্টগুলো খুব উপভোগ করেছি। যারা কেরালার মশলার অত্যাচারে দুপুরের খাবার খেতে কষ্টে ভুগছিলো; তারা সকালের নাস্তা হতে পছন্দের আইটেম আলাদা করে ব্যাগে ভরে নিয়ে হোটেল হতে বের হচ্ছিলো। প্রথমদিনের সকালের নাস্তার আয়োজন। 

বেলা সাড়ে আটটা নাগাদ নাস্তা শেষ করে আমরা বের হলাম মুন্নার দর্শনে। আজকের প্রথম গন্তব্য মুন্নার টি মিউজিয়াম। হোটেল থেকে বের হয়ে মিনিট পাঁচেক গাড়ী চলতেই শুরু হয়ে গেল সবুজের সমারোহ আর চা বাগানের মেলা। সারি সারি চিরহরিৎ সাজানো ছবি দেখে মনে হচ্ছিল যেন শিল্পীর তুলিতে অংকিত কোন ক্যানভাসের মোহনীয় ছবি। একটি কথা বলে রাখি, মুন্নার এর প্রায় সকল চা-বাগানই “টাটা টি কোম্পানি”র কিনে নেয়া। তাই এখানে যত চা বাগান দেখছিলাম, প্রায় সবকয়টিতেই টাটা’র সাইনবোর্ড চোখে পড়ছিল। আমাদের হোটেল থেকে প্রায় ১৩ কিলোমিটার দূরে বিখ্যাত “Munnar Tea Museum” অবস্থিত। পথে বেশ কয়েক জায়গায় গাড়ী থামালাম, চা-বাগানের ছবি তুলতে। আসলে, মুন্নার এমন একটা জায়গা, যার প্রতিটি ইঞ্চিরই ছবি ক্যামেরাবন্দী করতে মন চাইবে। আর এই করে করে আমরা প্রায় আধঘন্টা সময় পরে এসে পৌঁছলাম আমাদের প্রথম গন্তব্য মুন্নার চা-বাগানে। 
পৌঁছতেই দেখি প্রচুর দর্শনার্থী ইতোমধ্যে জড়ো হয়েছে, যার বেশীর ভাগই সাদা চামড়ার ইউরোপীয়। এই মিউজিয়ামটি Nallathanni Estate of Tata Tea এ অবস্থিত, কোচিন এয়ারপোর্ট হতে প্রায় পঁচাশি কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। সকাল নয়টা থেকে বিকেল চারটা অবধি খোলা থাকে এই মিউজিয়াম, সোমবার সাপ্তাহিক বন্ধ। টিকেট পঁচাত্তর/আশি রুপী’র মত, ক্যামেরার জন্য অতিরিক্ত ২০ রুপী ফি। 

 

 

 

 

ভেতরে রয়েছে ভিজুয়াল প্রদর্শনী, ভারত উপমহাদেশের চা-বাগান এবং এর ইতিহাসের উপর। প্রায় পঞ্চাশজনের মত ক্যাপাসিটি হলের, ফলে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় প্রায় সময়ই পরবর্তী শো এর জন্য। রয়েছে ফটো গ্যালারী, সেই শুরুর দিক হতে ব্যবহৃত নানান যন্ত্রপাতি, অফিস ইকুইপমেন্ট, আসবাবপত্র ইত্যাদির প্রদর্শনী, রয়েছে চা ম্যানুফ্যাকচারিং এর ডামি প্রদর্শনী। এখানে এক ভদ্রলোক প্রায় মিনিট পনের’র একটি বক্তৃতা দেন, যা উপভোগ্য এবং তথ্যবহুল; যদিও অনেকের সেই প্যাচাল ;) শোনার ধৈর্য থাকে না। এখানে রয়েছে দর্শনার্থীদের জন্য চা পানের ব্যবস্থা (মূল্য পরিশোধ করে), রয়েছে একটি বিক্রয় কেন্দ্র, চা এবং ভেষজ পণ্যের। আসুন ছবিতে দেখি মুন্নার টি মিউজিয়ামঃ

 

 

 

 

 

 



 

 

মন্তব্যসমূহ

Translate

বোকা পর্যটকের কথা

মানুষ যেমন হঠাৎ করেই কারো প্রেমে পড়ে, ঠিক তেমনই করে আমিও প্রেমে পড়েছি ভ্রমণের। আজব এক নেশায় নেশাগ্রস্থ, কবে থেকে জানি না। তবে নিজের আর্থ-সামাজিক অবস্থানে লড়াই করে টিকে থাকার পর ভ্রমণে মনঃসংযোগ করতে উদ্যত হই। সেই থেকে যখনই সময়-সুযোগ হয় বেড়িয়ে পড়ি ঘর হতে, ভ্রমণের তরে। মজার ব্যাপার হল, আমি সাইক্লিস্ট নই, সাঁতার কাটতে পারি না, না পারি ট্র্যাকিং, হাইকিং, ক্লাইম্বিং। কোন ধরণের এডভেঞ্চারধর্মী কোন গুণই আমার নেই, শুধু আছে ভ্রমণের শখ আর অদম্য ইচ্ছাটুকু। আর সেই ইচ্ছা থেকেই সময় সময় আমার ঘুরে বেড়ানো আর সেই গল্পগুলো লিপিবদ্ধ করে রাখা এই ডায়েরীতে। আমার এই লেখাগুলো বিভিন্ন সময়, বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে এবং ব্যক্তিগত ডায়েরীতে লেখা ছিল; সেগুলো সব একত্রে সংরক্ষণ করে রাখার নিমিত্তেই এই ব্লগ। যদি আপনাদের কারো এই লেখাগুলো কোন কাজে লাগে তবে আমার পরিশ্রম কিছুটা হলেও সার্থক হবে।

পোস্ট সংরক্ষণাগার

যোগাযোগ ফর্ম

প্রেরণ