কটকা হয়ে জামতলা সৈকত, সুন্দরবনে শেষবেলা
প্রভাতের গল্প
এর আগের সুন্দরবন ভ্রমণ এর অভিজ্ঞতার আলোকে প্ল্যান ছিল এদিন খুব ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠবো; আলো ফোটার আগে প্রমোদতরী’র তৃতীয় তলার করিডোরে বসে যাবো ক্যামেরা নিয়ে। কারন, সুন্দরবনের শরনখোলা রেঞ্জের কটকা অভয়ারণ্যে ভোরবেলা হরিণ এর দল এবং মাঝে মধ্যেই বাঘমামা পানি পাণ করতে হাজির হয়। আমাদের প্রমোদতরীটি গতকাল রাতেই রওনা হয়েছিলো হাড়বাড়িয়া হতে কটকা’র উদ্দেশ্যে। মধ্যরাতের পরে কোন একসময় পৌঁছেছে নিজ গন্তব্যে; আমরা তখন নিদ্রাদেবী’র কোলে। আমি আমার শখের পাওয়ার শট সিরিজের ক্যামেরা ফুল চার্জ করে রাতে ঘুমাতে গিয়েছিলাম। উদ্দেশ্য ভোরবেলা উঠে রেঞ্জের তীরে ভালো করে লক্ষ্য রাখা, যদি বাঘ মামা’র দেখা পাওয়া যায়! ক্যামেরা ভালো চালাতে না পারলে কি হবে, ক্যামেরার জুমখানি খুব কাজের। পাওয়ার শট সিরিজের ক্যামেরায় 80X জুম! তাই প্রায় এক কিলোমিটার দূরের অব্জেক্টও দৃষ্টিগোচর হয়। কিন্তু বিধিবাম, আগের দিন সারাদিন আরাম আয়েশ করে প্রমোদতরীতে কাটিয়ে দিলেও ঘুম একটু গভীর হয়ে গিয়েছিল; তাই পূর্বাকাশে ঊষার লালিমা যখন প্রায় ম্রিয়মাণ, তখন আমার ঘুম ভাঙ্গলো। কি আর করা, ফ্রেশ হয়ে সোজা তৃতীয় তলায় গিয়ে দ্রুত এককাপ রঙ চা নিয়ে করিডোর এর রেলিং এ গিয়ে বসলাম। তীরের দিকে কয়েকটি হরিণ দেখা যাচ্ছে, কেন জানি কোন ছবি না তুলে চা পাণ করতে করতে দেখছিলাম সুন্দরবনের এই সুন্দর প্রথম সকালবেলার নিস্তরঙ্গ নির্ভেজাল সৌন্দর্যটুকু। কিছুক্ষণ পর আমার ভ্রমণসঙ্গী আবু বকর ভাই তাড়া দিলেন তৈরী হয়ে নিতে; সকালের নাস্তার আগেই আমরা ঘুরে আসবো জামতলা সমুদ্র সৈকত যা কটকা সমুদ্র সৈকত নামেও পরিচিত। এই স্থানটি আমার খুব পছন্দের প্রায় বছর দশেক আগের সেই সুন্দরবন ট্যুর এ কাটানো এখানকার সময়গুলোর স্মৃতি রোমন্থন করে আবেগাপ্লুত হলাম। তৈরী হওয়ার তেমন কিছু ছিল না, শুধু কেবিন এ গিয়ে দুয়েকটি প্রয়োজনীয় জিনিষ নিয়ে সবার সাথে উঠে পড়লাম ইঞ্চিন নৌকায়।
সুন্দরবনের সবচেয়ে আকর্ষনীয় এবং জনপ্রিয় স্পট কটকা নির্দ্বিধায়; মায়া হরিণ এর পালের সাথে প্রায়শই দেখা মেলা রয়েল বেঙ্গল টাইগার; এ ছাড়াও রয়েছে বানর, বন শুকর সহ নানান জাতের পাখি, কখনো দেখা যায় পারের কাঁদার মাঝে অলস শুয়ে থাকা কুমির’কে। কটকা খালের পশ্চিম পাড়ের জেটি পেড়িয়ে এগিয়ে গেলে জামতলা সৈকতের পথ। আর বন বিভাগের কার্যালয়ের পেছন দিক থেকে সোজা পশ্চিমমূখী কাঠের তৈরী ট্রেইল ধরে এগিয়ে গেলে দেখা মেলে ম্যানগ্রোভ জাতীয় উদ্ভিদের ঘন শ্বাসমূল এর। বনের দক্ষিণে কিছুক্ষণ হাঁটলে চোখে পড়ে পরপর তিনটি টাইগার টিলে; যেখানে প্রায়শই বাঘের পায়ের ছাপ দেখা যায়। আর এই টাইগার টিলার সম্মুখে পশ্চিম দিকে রয়েছে বয়ার খাল।
পছন্দের জায়গায় ফেরা
সকাল ঠিক ছয়টায় আমরা রওনা হলাম আমাদের প্রমোদতরী হতে কটকা খাল এর দিকে। খাল এর পথ ধরে কিছুটা এগিয়ে গেলি একটা জেটি দেখা গেল, সেখানে ভেড়ানো হল আমাদের ইঞ্চিন নৌকা, সবাই একে একে নেমে এলাম। এরপর আধঘন্টার মত ট্রাকিং, এই পথটুকু আমার খুব পছন্দের। গতবারের সুন্দর ভ্রমণে জামতলা সৈকত থেকে ফেরার পরে আমাদের দল এখানে বিশাল এক হরিণের পালের মুখোমুখি হয়েছিল। সেই জায়গাটা অতিক্রম করতে করতে খুঁজছিলাম “ওয়াচ টাওয়ার”; কিন্তু চোখে পড়লো না। হয়তো ভেঙ্গে পড়েছে অথবা সরিয়ে নিয়েছে; এমনটাই জানা গেল বনরক্ষী ভাই এর নিকট হতে। পূর্ব দিগন্ত রেখা ধরে উদিত সূর্যের কুসুম লাল কিরণ চারিদিকে মাখামাখি হয়ে মায়াবী এক পরিবেশ তৈরী করলো। সবাই নিজের মত করে ছবি তুলতে তুলতে এগুতে লাগলাম জামতলা সৈকতের দিকে।
প্রায় আধঘন্টার কিছু বেশী সময় পর পৌঁছলাম জামতলা সৈকতে। পূর্বপ্রান্ত হতে সূ্য্যিমামা তার সোনালী কিরণ ঢেলে দিয়েছে পুরো সৈকতের বুকে। সৈকতে নেমে কেউ কেউ সমুদ্রজলে পা ভিজাতে উদ্যত হল তো কেউ ফুটবল নিয়ে বহুদিন পর এলোপাথাড়ি কিক করে বালখিল্যতায় মেতে উঠলো। আর কোন ফাঁকে যেন তিনজন এর একটা দল পূর্বদিকে হাঁটা শুরু করলো। প্রথমে সবাই ভেবেছিল, কিছুদূর গিয়ে হয়তো তারা ব্যাক করবে; কিন্তু মিনিট দশেক পরেও যখন তারা পেছন ফিরে চায় নাই; তখন তাদের সমস্বরে ডাকাডাকি; বাশির হুইসেল কোন কিছুই কাজ করছিলো না। এই পথ ধরে সোজা পূবদিকে গেলে “কচিখালী” ক্যানেল এ গিয়ে মিশেছে। তবে কি তারা দলছুট হয়ে কচিখালী গিয়ে পৌঁছবেন? নাহ, কপাল ভালো; প্রায় বিশ মিনিট পর উনারা ফিরতি যাত্রা শুরু করেছিলেন। এদিকে দলের সবাই এদিক সেদিক ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে গল্প খুনসুটি’তে মসগুল হয়ে পড়লো। প্রায় ঘন্টাখানেক এখানে কাটিয়ে আমরা ফিরতি পথে যাত্রা করলাম। বুনো পথদিয়ে হাঁটতে হাঁটতে যাদের প্রথম সুন্দরবন ভ্রমণ; তারা গোলপাতা, সুন্দরী গাছ, শ্বাসমূল এবং হরিণ এর ছাপ এর সাথে বাঘের ছাপেরও খোঁজ করছিলেন। যখন অনেকটা সময় হেঁটে দলের সবাই এগিয়ে গেছে অনেকটা পথ; গতবার দেখা সেই হরিণ এর পালের জায়গাটায়; যেখানে রয়েছে খোলা তৃণভূমি; সেখানে এবারো বড়সড় একটা হরিণ এর পালের দেখা পেয়েছে। আমি আমার ক্যামেরার সর্বোচ্চ জুম দিয়ে বেশ কিছু ছবি তোলার চেষ্টা করলাম; তেমন একটা ভালো রেজুলেশন বা ফোকাস কিছুই হল না। দৌড়ে গিয়ে ঐ স্থানে পৌঁছতেও আমার মিনিট দশেক সময় লেগে যাবে; হাজার হলেও ত্রি ডিজিটের ভরযুক্ত শরীরখানার মালিক আমি।
সকাল আটটা নাগাদ আমরা ফের জেটিঘাটে ফিরে এলে আয়োজক আবুবকর ভাই আমাদের সবাইকে সুন্দরবনের সুস্বাদু ডাব এর পানি দিয়ে আপ্যায়ন করলেন। এরপর আমরা রওনা হলাম কটকা ফরেস্ট স্টেশন এর দিকে। জামতলা সৈকত যাওয়ার সময়, কটকা খাল এর ডানদিকে জামতলা খাল ধরে কিছুদূর এগিয়ে গিয়ে আমরা উঠেছিলাম জেটিতে। এখন সেই জামতলা খাল হতে বের হয়ে কটকা খাল এ নোঙ্গর করা আমাদের প্রমোদতরী’কে অতিক্রম করে আমরা এবার কটকা খাল এর বাম পাশে থাকা ‘কটকা ফরেস্ট ষ্টেশন’ এর কটকা ঘাটে গিয়ে উঠলাম। এখানে উঠার আগে সবাইকে পরিবেশন করা হল ফলাহার হিসেবে ‘মালটা’, সেগুলো হাতে কিছুটা এগিয়ে যেতেই বানরের দল আমাদের পিছু নিল; আগ্রহী কয়েকজন দুয়েকটা মালটার খোসা ছুড়ে দিতেই কোথা হতে ঝাঁকে ঝাঁকে বানরের দলের আগমন হতে লাগলো। কয়েকজন ভয় পেয়ে গেলাম। যাই হোক বনরক্ষীদের পরামর্শে কিছু মালটার টুকরো তীরের দিকে একটা প্রান্তে ছুড়ে দিয়ে আমরা সোজা হাঁটা শুরু করে দিলাম। তারপরও কয়েকটা অবাধ্য বানরের দল বেশ কিছু সময় দূর থেকে আমাদের পেছন পেছন হেঁটে এক সময় ক্লান্ত হয়েই বুঝি হাল ছেড়ে দিল। এই কটকা ফরেস্ট ষ্টেশন এর পেছন দিকে রয়েছে কটকা রিজার্ভ ফরেস্ট; যেখানে দলে দলে হরিণ ঘুরে বেড়াচ্ছে। সবাই ছবি তুলতে ব্যস্ত হলে হরিণগুলো পিছু হটা শুরু করলো। এখানে বেশী সময় থাকা হয় নাই। মিনিট পনেরোর মত থেকে ফের ইঞ্জিন নৌকার উদ্দেশ্যে সবাই হাঁটা শুরু করলাম। এখানে সিডরে ক্ষতিগ্রস্থ কিছু গাছের ধ্বংসাবশেষ এর ভাস্কর্যরূপী অবয়ব এর সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তোলার হিড়িক পড়ল এক সময়। এভাবে প্রায় আধঘন্টা পর সবাই ইঞ্জিন নৌকায় করে ফিরে এলাম আমাদের প্রমোদতরীতে।
অলস সময়
সকাল নয়টা নাগাদ নাস্তা পরিবেশন করা হল। তিনঘন্টার ভ্রমণ শেষে জম্পেশ আয়োজন ছিল নাস্তার। ভুনা খিছুড়ি’র সাথে বেগুণ ভাঁজা, আচারের ভর্তা, ডিমের ঝোল, মুরগীর তরকারি, সালাদ… পুরোই জমে ক্ষীর! :P (তিন বছর হতে চললো ভারত বেড়াতে যাই না; দাদাদের কথা মনে পড়ে গেল…)। এরপর চা-কফি নিয়ে জম্পেশ আড্ডায় মেতে গেল সবাই। বেলা এগারোটা নাগাদ শুরু হল খেলাধুলার আয়োজন, ইনডোর গেম সব। ৫৫ বছর বয়সী তরুনের দল উৎফুল্লতার সাথে মেতে উঠলো সেই আয়োজনে। প্রায় ঘন্টাখানেক চলা সেই পর্বের আগে ছিল গানের আসর। আমাদের প্রমোদতরী’র সুপারভাইজার ছেলেটি’র গানের গলা দারুণ! সে বেশ কিছু গান গাইতেই আসর জমে গেল। একে একে সবাই সমস্বরে গান ধরলো, কেউ কেউ টেবিল কে তবলা হিসেবে বাজাচ্ছিল, একজন তো একটা গামলা পেটাচ্ছিল, চমৎকার রিদমে। পরে জেনেছিলাম উনি এক সময় তবলা বাজাতেন। গানের সাথে চলছিল মাঝে মাঝে হাততালি’র সাথে কোমর দোলানো। আমি অবাক হয়ে ভাবছিলাম, আসলেই সত্য, বয়স নিছক একটা সংখ্যা ছাড়া আর কিছুই নয়। সব হল মনের ব্যাপার। নির্দিষ্ট পরিবেশ, পরিস্থিতিতে মন নানান রূপ ধারণ করে। কখনো অবুঝ মন বড়ই ম্যাচিউর তো কখনো হয়ে যায় ছোট্ট শিশুটি। নিজের মনকে বুঝতে পারলে অনেক সমস্যারই সমাধান হয়ে যায়। এই দলটির সাথে ঘটনাক্রমে ভ্রমণে আমার জুড়ে যাওয়াটা আমার জন্য এক অনন্য প্রাপ্তি। কারন, এই বর্তমান সময়ে, নিয়মিত যোগাযোগ থাকা অনেক কাছের মানুষ নিয়ে ১০-১২ জনের দল করে বের হয়ে পড়াটাও খুব কঠিন ব্যাপার; সেখানে ত্রিশ জনের দল এই বয়সে এসে আবার এক সাথে সেই তারুণ্যের দিনগুলোর আমেজে ফিরে যেতে পেরেছেন কোন রকমের দ্বিধা ছাড়া… যা সত্যিই প্রশংসনীয়।
ভুলে যেতে চাওয়া কিছু কথা
এরপর বোধহয় ছিল খারাপ সময় এর শুরু। মাঝখানে বিশ্রাম আর দুপুরের খাবারের পর জানা গেল জাহাজের গতি কম থাকায় আমাদের পরবর্তী গন্তব্য স্কিপ করে মংলার পথে ধরতে হবে। বলাই বাহুল্য, সবার মন খারাপ হয়ে গেল। এই শিপ নিয়ে বলতে গেলে বলবো, ভালো ইনফ্রাস্ট্রাকচার থাকা সত্ত্বেও পরিকল্পনার অভাব আর খামখেয়ালীপনা এবং রক্ষণাবেক্ষণে চরম উদাসীনতার কারনে প্রতিটি গেস্ট অসন্তোষ নিয়ে এখান হতে ফিরেছিল। প্রথম দিন, আমি যখন একা ছিলাম, সেদিন রাতে কি মনে হতে আমি প্রতিটি কেবিন চেক করে দেখছিলাম, সব ঠিকঠাক আছে কি না, দেখা গেল চারটি এটাচড বাথরুম এ ইলেক্ট্রিসিটি কাজ করে না, একটার তো এডজাস্ট ফ্যান খুলে ঝুলে আছে কোন মত, আর উন্মুক্ত বৈদ্যুতিক তার ঠিক কমোড এর উপর পড়ে আছে। সেদিন আমি সেই সুপারভাইজার ছেলেকে ডেকে সব চেক করালে প্রথমে বললো হয়তো কোথায় কানেকশন ছিন্ন হয়েছে… ব্লা ব্লা ব্লা… অবশেষে রাত এগারোটা নাগাদ ইঞ্জিন নৌকা করে দূরের কোন গ্রাম হতে ইলেক্ট্রিশিয়ান নিয়ে এসে সেসব ছাড়া হয়েছে। প্রবেশমুখের অসামঞ্জস্যতার গল্প প্রথম পর্বে করেছিলাম। দোতলার কমন বেসিন ছিল দুটি, তারমধ্যে একটির পানির কল কাজ করে না। আর বেসিনগুলো পরিষ্কার করার জন্য কেউ ছিল না; অনেকবার বলার পর হয়তো স্টাফদের কেউ পরিষ্কার করে দিয়েছে। এরপর ছিল গোসলের পানি; সুন্দরবন এর সকল নৌযানে আলাদা ২০,০০০ থেকে ৪০,০০০ লিটার পর্যন্ত পরিস্কার মিষ্টি পানি নেয়া হয় পানীয় জল ছাড়া অন্য সকল কাজের জন্য। আমি প্রথম দিন থেকেই খেয়াল করেছিলাম পানি কেমন ঘোলা। আমি বললেও সেদিন আমার কথায় তারা কান দেয় নাই। পরেরদিন গেস্টরা সবাই এলে একে একে সবাই কমপ্লেইন করা শুরু করে। পরে নানান কাহিনী করে আধবেলা সময় নিয়ে পানির সমস্যার সমাধান করা হয়। সবচাইতে ভয়াবহ ঝামেলা ঘটায় রাতের বেলা, যখন আমরা রাতের খাবার খেয়ে মংলা নেমে যাব, ফিরতি যাত্রার জন্য। মংলা ঘাট পেড়িয়ে প্রায় আধঘন্টা চালিয়ে নিয়ে যায় তারা প্রমোদতরীটিকে। প্রথমে বনরক্ষীরা খেয়াল করে; আমি আর আবু বকর ভাই সবার শেষে তখন ডাইনিং এ রাতের খাবার খাচ্ছিলাম। এরপর এ নিয়ে বেশ কথা কাটাকাটি এবং এক সময় সেই ইঞ্চিন নৌকায় করে ব্যাগপত্তর সহ সবাইকে নিয়ে রাতের বেলা পশুর নদী পাড়ি দেয়া শুরু করে। এক সময় গেস্টরা উত্তেজিত হয়ে পড়লে লঞ্চের সেই সুপারভাইজার ছেলে চরম মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে সরাসরি আয়োজক আবু বকর ভাইকে দোষারোপ করে বসে। সে নাকি উনার কথাতেই এমনটা করেছে। হাতাহাতি হওয়ার বাকী ছিল… শুধু। এই প্রমোদতরী এর আগে আবু বকর ভাই কখনো রিজার্ভ করে নাই; এবারই প্রথম… আর প্রথমবারেই তাদের সার্ভিস দেখে আমি হতাশ। দয়া করে কেউ এই প্রমোদতরী করে সুন্দরবন ভ্রমণে না গেলেই ভালো হয়। আমার মনে হয় না মালিকপক্ষ কোন যথাযথ খোঁজ খবর রাখে। কারন প্রথমদিন দুপুর বেলা আমি যখন প্রমোদতরীতে এসে পৌঁছাই, তার কিছুক্ষণ পরে দেখি ইঞ্জিন নৌকায় করে দুজন লোক এসেছে; জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলাম এদের একজন এই প্রমোদতরী’র মালিক। উনি এসে সকল স্টাফকে সব ঠিকঠাক আছে কি না জানতে চেয়ে কিছু সময় থেকে চলে গেলেন। আর সেদিন রাতেই আমি দেখলাম কি অবস্থা!
ফিরতি যাত্রা
যাই হোক, এভাবেই শেষ হল বহুদিন পর শুরু করা প্রথম ভ্রমণ অভিযান। সেদিন রাতে আমরা মংলা থেকে চলে আসি খুলনা, সেই আগের হোটেল পার্ক এ রাত কাটিয়ে পরদিন সকালবেলা আমরা ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হই। খানজাহান আলী সেতু’র অপর প্রান্ত হতে মাওয়া-কেওড়াকান্দিগামী মাইক্রোবাসে করে সকাল সাড়ে সাতটায় রওনা দিয়ে বেলা এগারোটার কিছু আগে পৌঁছে যাই ঘাটে। এই যাত্রায় ফরিদপুরের ভাঙ্গা হতে শুরু করে ঘাট পর্যন্ত এবং মাওয়া ঘাট হতে মেয়র হানিফ ফ্লাই ওভারের কিছু আগ পর্যন্ত এক্সপ্রেস হাইওয়ের যাত্রাপথ খুব ভালো লেগেছে। আহারে, কবে যে আমাদের সকল হাইওয়ে এরকমটা হবে! এরপর স্পীডবোট সার্ভিস এর কল্যাণে মিনিট পনেরোর মধ্যে নদী পার হয়ে মাওয়া ঘাট। সেখান হতে ইলিশ পরিবহনের এসি বাসে করে যাত্রাবাড়ী নেমে আমি আমার বাসার দিকে পা বাড়াই আর আবু বকর ভাই তার ডেরার উদ্দেশ্যে।
মন্তব্যসমূহ