ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান ভ্রমণ ২০১৩

ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান ভ্রমণ ২০১৩
ভাওয়াল রাজবাড়ী থেকে রিকশাযোগে কালিবাড়ী বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছে লোকাল বাসে করে ৫ টাকা ভাড়ায় গেলাম গাজীপুর চৌরাস্তায়। সেখান থেকে হিউম্যান হলারে করে গেলাম ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান। ভাড়া নিল ১৫ টাকা। ভাওয়াল বনের তিন নাম্বার গেট বললে হলার চালক আপনাকে নামিয়ে দিবে। ঢুকতেই চোখে পরবে সুন্দর নকশা করা একটি প্রবেশদ্বার, বিশেষ করে হাতির নকশাটি আমার খুব ভাল লেগেছে। 
প্রায় দেড়যুগ পরে এলাম ন্যাশনাল পার্কে, আগে যা অতি বিখ্যাত ছিল পিকনিক স্পট হিসেবে। ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান বাংলাদেশের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় উদ্যান। এই উদ্যানটি রাজধানী ঢাকা থেকে উত্তরে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে গাজীপুর জেলার গাজীপুর সদর ও শ্রীপুর উপজেলায় অবস্থিত। বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন (১৯৭৪) অনুযায়ী ৫,০২২ হেক্টর জায়গা জুড়ে পৃথিবীর অন্যান্য উন্নত দেশের আদলে অভয়ারণ্যের ছাঁচে ভাওয়াল শালবনে এই উদ্যান গড়ে তোলে। ১৯৮২ সালের আগে এটি আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষিত। 
ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানে একসময় বাঘ, কালোচিতা, চিতাবাঘ, মেঘাবাঘ, হাতি, ময়ূর, মায়া হরিণ ও সম্বরহরিণ দেখা যেত। ১৯৮৫ সালে এ বনে খেঁকশিয়াল, বাগদাস, বেজী, কাঠবিড়ালী, গুঁইসাপ আর কয়েক প্রজাতির সাপ দেখা গেছে। একটি হিসাব অনুযায়ী, ভাওয়াল গড়ে ৬৪ প্রজাতির প্রাণী রয়েছে যার মধ্যে ৬ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৯ প্রজাতির সরীসৃপ, ১০ প্রজাতির উভচর ও ৩৯ প্রজাতির পাখি রয়েছে। বনবিভাগ এ বনে অজগর, ময়ূর, হরিণ ও মেছোবাঘ ছেড়েছে। এছাড়া ২০১২ সালে ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানে ১৬টি তক্ষক ছাড়া হয়। 
ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান মূলত ক্রান্তীয় পতনশীল পত্রযুক্ত বৃক্ষের বনভূমি। এ বনে ২২১ প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে যার মধ্যে ২৪ প্রজাতির লতা, ২৭ প্রজাতির তৃণ, ৩ প্রজাতির পামজাতীয় বৃক্ষ, ১০৫ প্রজাতির ঔষধি, ১৯ প্রজাতির গুল্ম, ৪৩ প্রজাতির বৃক্ষ। শাল (Shorea robusta) এ উদ্যানের প্রধান বৃক্ষ। অন্যান্য বৃক্ষের মধ্যে কাঁঠাল, আজুলি, কুম্ভী, গান্ধী গজারি ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এছাড়া এ বনে কৃত্রিমভাবে ইউক্যালিপটাস আর রাবারের বনায়ন করা হয়েছে। ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান বাংলাদেশের আকর্ষণীয় একটি পর্যটন কেন্দ্র। 
এখানে বেশ কয়েকটি পিকনিক স্পট রয়েছে। স্পটগুলোর হলো: আনন্দ, কাঞ্চন, সোনালু, অবকাশ, অবসর, বিনোদন। এখানকার কটেজগুলো হলো: বকুল, মালঞ্চ, মাধবি, চামেলী, বেলী, জুঁই ইত্যাদি। এখানে ১৩টি কটেজ ও ৬টি রেস্টহাউজ রয়েছে। রাত্রি যাপনের জন্য এখানে অনুমতি দেওয়া হয় না। পিকনিক স্পট কিংবা রেস্ট হাউস ব্যবহার করতে হলে বন বিভাগের মহাখালী কার্যালয় থেকে আগাম বুকিং দিতে হয়। ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানে প্রবেশ ফি ১০ টাকা।
এখানে রয়েছে চারিদিকে শালবন ইচ্ছে হলে হারিয়ে যেতে পারেন শালবনে। তবে সাবধান, এখানে প্রায়ই ছিনতাই, ডাকাতি হয়ে থাকে; এই ব্যাপারে কয়েক জায়গায় সতর্কতা সম্বলিত নোটিশবোর্ড রয়েছে। “বিপদজনক এলাকা, প্রবেশ নিষেধ” সাইনবোর্ড দেখে ভাবলাম বন্যপ্রাণীর কারণে এই সাবধান বানী। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানলাম এটা সেই ছিনতাই, ডাকাতি’র হাত থেকে পর্যটকদের বাঁচাতে দেয়া। মনে পড়ল দেড় যুগ আগে আসা পিকনিকের ঘটনা। বনে ঘুরতে ঘুরতে হারিয়ে গিয়েছিলাম। ঘণ্টাখানেক লেগেছিল দলের সবাইকে খুঁজে পেতে। 
যাই হোক, এখানে আপনি দেখতে পাবেন শালবনের সারি, প্রজাপতি পার্ক, মিনি জাদুঘর, অবজারভেশন টাওয়ার (২ টাকার টিকেট কাটতে হবে)। আমরা ঘণ্টা দেড়েক কাটিয়ে বের হয়ে এলাম ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান থেকে। এবারের গন্তব্য নুহাশ পল্লী।             

ভ্রমণকালঃ ০৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৩



আগের পর্ব পরের পর্ব

মন্তব্যসমূহ

Translate

বোকা পর্যটকের কথা

মানুষ যেমন হঠাৎ করেই কারো প্রেমে পড়ে, ঠিক তেমনই করে আমিও প্রেমে পড়েছি ভ্রমণের। আজব এক নেশায় নেশাগ্রস্থ, কবে থেকে জানি না। তবে নিজের আর্থ-সামাজিক অবস্থানে লড়াই করে টিকে থাকার পর ভ্রমণে মনঃসংযোগ করতে উদ্যত হই। সেই থেকে যখনই সময়-সুযোগ হয় বেড়িয়ে পড়ি ঘর হতে, ভ্রমণের তরে। মজার ব্যাপার হল, আমি সাইক্লিস্ট নই, সাঁতার কাটতে পারি না, না পারি ট্র্যাকিং, হাইকিং, ক্লাইম্বিং। কোন ধরণের এডভেঞ্চারধর্মী কোন গুণই আমার নেই, শুধু আছে ভ্রমণের শখ আর অদম্য ইচ্ছাটুকু। আর সেই ইচ্ছা থেকেই সময় সময় আমার ঘুরে বেড়ানো আর সেই গল্পগুলো লিপিবদ্ধ করে রাখা এই ডায়েরীতে। আমার এই লেখাগুলো বিভিন্ন সময়, বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে এবং ব্যক্তিগত ডায়েরীতে লেখা ছিল; সেগুলো সব একত্রে সংরক্ষণ করে রাখার নিমিত্তেই এই ব্লগ। যদি আপনাদের কারো এই লেখাগুলো কোন কাজে লাগে তবে আমার পরিশ্রম কিছুটা হলেও সার্থক হবে।

পোস্ট সংরক্ষণাগার

যোগাযোগ ফর্ম

প্রেরণ