সোনারগাঁও লোকশিল্প জাদুঘর ভ্রমণ ২০১৩

সোনারগাঁও লোকশিল্প জাদুঘর ভ্রমণ ২০১৩
এই ফিরতি পথে হাতের বাম দিকে পড়ল জাদুঘরের দুই নম্বর গেটটি। ১৫ টাকা দিয়ে টিকেট কেটে ঢুকে পড়লাম ভেতরে। হাতের ডানদিক দিয়ে এগিয়ে গেলাম মূল জাদুঘরের দিকে। আশেপাশে কিছুকপোত-কপোতীকে দেখলাম নিজেদের ভুবনে হারিয়ে যেতে। তাদের নির্জন ভুবনে ব্যঘাত না ঘটিয়ে চলে এলাম এক নাম্বার গেটের কাছে। 

পুরানো জাদুঘর বিল্ডিংয়ে দেখলাম সংস্কার কাজ চলছে। এক যুগ আগে এসেছিলাম এখানে, তখন এই ভবনে ছিল জাদুঘর। শিল্পাচার্য জয়নুল লোক ও কারুশিল্প জাদুঘর, বাংলাদেশের প্রাচীণ ঐতিহ্য রক্ষার্থে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে গঠিত একটি জাদুঘর, যা ঢাকার অদূরে সোনারগাঁও এ অবস্থিত। আবহমান গ্রাম বাংলার লোক সাংস্কৃতিক ধারাকে বিকশিত করার উদ্যোগে ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে ১২ মার্চ শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন সোনারগাঁয়ের ঐতিহাসিক পানাম নগরীর একটি পুরনো বাড়িতে প্রতিষ্ঠা করেন বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন। 

পরে ১৯৮১ খ্রিস্টাব্দে ১৫০ বিঘা আয়তনের কমপ্লেক্সে খোলা আকাশের নিচে বাংলার প্রকৃতি ও পরিবেশে গ্রামীণ রূপকেন্দ্রিক বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের শৈল্পিক কর্মকান্ডের পরিচয় তুলে ধরতে শিল্পী জয়নুল আবেদীন এই জাদুঘর উন্মুক্ত পরিবেশে গড়ে তোলার প্রয়াস নেন এবং বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন কমপ্লেক্সটি প্রায় ১০০ বছর পুরোন সর্দার বাড়িতে স্থানান্তরিত হয়। 

সোনারগাঁয়ে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন এলাকায় রয়েছে লোক ও কারুশিল্প জাদুঘরটি। এখানে স্থান পেয়েছে বাংলাদেশের অবহেলিত গ্রাম-বাংলার নিরক্ষর শিল্পীদের হস্তশিল্প, জনজীবনের নিত্য ব্যবহার্য পণ্যসামগ্রী। এসব শিল্প-সামগ্রীতে তৎকালীন প্রাচীন বাংলার ঐতিহ্যবাহী লোকশিল্পের রূপচিত্র প্রস্ফুটিত হয়। সর্দার বাড়িতে মোট ১০টি গ্যালারী রয়েছে। গ্যালারিগুলোতে কাঠ খোদাই, কারুশিল্প, পটচিত্র ও মুখোশ, আদিবাসী জীবনভিত্তিক নিদর্শন, গ্রামীণ লোকজীবনের পরিবেশ, লোকজ বাদ্যযন্ত্র ও পোড়ামাটির নিদর্শন, তামা-কাসা-পিতলের নিদর্শন, লোহার তৈরি নিদর্শন, লোকজ অলংকারসহ রয়েছে বহু কিছু। 

ভবনটির সামান্য পূবে রয়েছে লোকজ স্থাপত্যকলায় সমৃদ্ধ আধুনিক এক ইমারতে প্রতিষ্ঠিত জয়নুল আবেদীন স্মৃতি জাদুঘর। এই ভবনটিতে মাত্র দু'টি গ্যালারি। এই দুইটি গ্যালারির মধ্যে একটি গ্যালারি কাঠের তৈরি, যা প্রাচীন ও আধুনিক কালের নিদর্শনসমৃদ্ধ। তাছাড়া বাংলাদেশের প্রাকৃতিক, বৈশিষ্ট্য কাঠ এবং কাঠ থেকে বিভিন্ন কারুপণ্য তৈরি এবং সর্বশেষ বিক্রির সামগ্রিক প্রক্রিয়া, অত্যন্ত আকর্ষণীয়ভাবে সুন্দর মডেল দিয়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এই দুটি ভবনের বাইরে রয়েছে পাঠাগার, ডকুমেন্টেশন সেন্টার, সেমিনার হল, ক্যান্টিন, কারুমঞ্চ, গ্রামীণ উদ্যান ও বিভিন্ন রকমের বৃক্ষ, মনোরম লেক, লেকের মাঝে ঘুরে বেড়ানোর জন্য নৌ বিহার, মৎস্য শিকারের সুন্দর ব্যবস্থা ও পংখীরাজ নৌকা। 

হেঁটে হেঁটে এগিয়ে গেলাম জাদুঘরের দিকে, ভেতরে একতলা এবং দুইতলায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত হতে প্রাপ্ত সংগ্রহ সমূহ প্রদর্শিত হচ্ছে। আমার ভয়াবহ মোবাইলে ছবি তুলে নিলাম প্রতিটি আইটেমের। ভাল লাগলো মেইন গেটের বাইরের একটি মাটির কারুশিল্প। এরপর দুপুর ১২টা নাগাদ চলে এলাম মোগড়াপাড়া বাস স্ট্যান্ড। এবারের গন্তব্য হাজীগঞ্জ দুর্গ।

গল্পের ছবিসকল

ভ্রমণকালঃ ৩০ আগস্ট, ২০১৩



আগের পর্ব পরের পর্ব

মন্তব্যসমূহ

Translate

বোকা পর্যটকের কথা

মানুষ যেমন হঠাৎ করেই কারো প্রেমে পড়ে, ঠিক তেমনই করে আমিও প্রেমে পড়েছি ভ্রমণের। আজব এক নেশায় নেশাগ্রস্থ, কবে থেকে জানি না। তবে নিজের আর্থ-সামাজিক অবস্থানে লড়াই করে টিকে থাকার পর ভ্রমণে মনঃসংযোগ করতে উদ্যত হই। সেই থেকে যখনই সময়-সুযোগ হয় বেড়িয়ে পড়ি ঘর হতে, ভ্রমণের তরে। মজার ব্যাপার হল, আমি সাইক্লিস্ট নই, সাঁতার কাটতে পারি না, না পারি ট্র্যাকিং, হাইকিং, ক্লাইম্বিং। কোন ধরণের এডভেঞ্চারধর্মী কোন গুণই আমার নেই, শুধু আছে ভ্রমণের শখ আর অদম্য ইচ্ছাটুকু। আর সেই ইচ্ছা থেকেই সময় সময় আমার ঘুরে বেড়ানো আর সেই গল্পগুলো লিপিবদ্ধ করে রাখা এই ডায়েরীতে। আমার এই লেখাগুলো বিভিন্ন সময়, বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে এবং ব্যক্তিগত ডায়েরীতে লেখা ছিল; সেগুলো সব একত্রে সংরক্ষণ করে রাখার নিমিত্তেই এই ব্লগ। যদি আপনাদের কারো এই লেখাগুলো কোন কাজে লাগে তবে আমার পরিশ্রম কিছুটা হলেও সার্থক হবে।

পোস্ট সংরক্ষণাগার

যোগাযোগ ফর্ম

প্রেরণ