কাজীর শিমলা, লাউচাপড়া, গজনী আর মধুটিলা - এক ঢিলে চার পাখী (গজনী অবকাশ কেন্দ্র পর্ব)

গজনী অবকাশ কেন্দ্র

গল্পের ছবিসকল

  • গজনী অবকাশ কেন্দ্র
  • গজনী অবকাশ কেন্দ্র
  • গজনী অবকাশ কেন্দ্র
  • গজনী অবকাশ কেন্দ্র
ঘণ্টাখানেক এখানে বেড়ানোর পর আমরা রওনা হলাম “গজনী”র উদ্দেশ্যে। না ভাই ভারতীয় সিনেমা “গজনী” নয়, এটা বাংলাদেশের শেরপুরস্থ “গজনী অবকাশ কেন্দ্র”। শেরপুরের সাবেক জেলা প্রশাসক আতাউর রহমান মজুমদার ১৯৯৩ সালে জেলা সদর থেকে ৩১, ঝিনাইগাতী থেকে ৭ কিলোমিটার উত্তরে গারো, কোচ, হাজং, আদিবাসী অধু্যষিত গারো পাহাড়ে নির্মাণ করেন অবকাশ ভবন ও অবকাশ বনভোজন কেন্দ্র। তাঁর অল্প সময়েই অনেক কিছুই অসম্পূর্ণ রেখে তিনি চলে যান। 
পরবর্তী জেলা প্রশাসক মোঃ নওফেল মিয়া ও বর্তমান জেলা প্রশাসক মোঃ নাছিরম্নজ্জামান বনভোজন কেন্দ্রটি উন্নয়নের জন্য ধারাবাহিকতা বজায় রাখেন। বর্তমানে তিনি কৃত্রিম জলপ্রপাত তৈরি করছেন। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝেও কৃত্রিম সৌন্দর্যের অনেক সংযোজন রয়েছে এখানে। হ্রদের মাঝেও কৃত্রিম দ্বীপ। দ্বীপে যাতায়াতের জন্য স্টীলবোটের ওপর নির্মিত দোলনা সেতু। হ্রদের পানির ওপর দিয়ে বেসরকারী উদ্যোগে দৃষ্টিনন্দন রেস্তোরা ও বিলাশবহুল রেস্ট হাউজ নির্মাণ করে অবকাশ কেন্দ্রকে দেয়া হয়েছে তিলোত্তমার ছোঁয়া। 
একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠান বিদেশ থেকে আমদানি করেছে রংবেরঙের ৮টি প্যাডেল চালিত বোট। প্রতিবোটে একসঙ্গে ৪জন ভ্রমণ করতে পারেন অনায়াসে। প্রতিটি বোটে জনপ্রতি খরচ পড়ে ২৫ টাকা। হ্রদের প্রানত্মে রয়েছে সুবিন্যসত্ম কজওয়ে। পাহাড়ী ঝর্ণার পানি বাঁকে বাঁকে হ্রদে এসে মিশেছে। আর সে পানি ফুলেফেঁপে পাথরে বাঁধানো ঘাট দিয়ে জলপ্রপাত হয়ে আবার ঝর্ণাধারায় হারিয়ে গেছে অজানায়। 
পাহাড়ের চূড়ায় রয়েছে বৈদু্যতিক বাতি, পানি ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাসহ ছয় কক্ষবিশিষ্ট আধুনিক দোতলা রেস্ট হাউজ এবং মসজিদ। রেস্ট হাউজের প্রতিকক্ষের ভাড়া ৫শ' টাকা। রেস্ট হাউজ থেকে পাহাড়ের পাদদেশে নামার জন্য রয়েছে পদ্মসিঁড়ি। পদ্মসিঁড়ির পাশেই কাব্যপ্রেমীদের জন্য কবিতাঙ্গনের গাছে গাছে ঝোলানো আছে প্রকৃতিনির্ভর রচিত কবিতা। পাহাড়ের পাদদেশে বর্ষীয়ান বটবৃক্ষের ছায়াতলে শান বাঁধানো বেদিসহ বিশাল চত্বরে গাড়ি পার্কিংয়ের সুবিধা, পিকনিকে আসা দলগুলোর আড্ডা ও খেলাধুলায় মেতে ওঠার জন্য প্রচুর জায়গা । 
বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য রয়েছে প্রয়োজনীয়সংখ্যক নলকূপ। পাহাড়ের চূড়ায় নির্মিত হয়েছে ৬০ ফুট উচ্চতাসম্পন্ন 'সাইট ভিউ টাওয়ার'। টাওয়ারের চূড়ায় উঠে পাহাড়ের মনোরম দৃশ্য ও ভারতের মেঘালয় রাজ্যকে অবলোকন করা যায়। অবকাশ কেন্দ্রের প্রবেশপথে রাসত্মার দুই পাশে সৃষ্ট ঘোড়ার ক্ষুরের ক্রিসেন্ট লেক, লেকের তীর থেকে পশ্চিমে অবস্থিত আরেকটি লেকের তীরে যাওয়ার জন্য পাহাড় ও রাসত্মার তলদেশে খনন করা হয়েছে রোমাঞ্চকর সুড়ঙ্গপথ 'পাতালপুরী। ক্রিসেন্ট লেকের মাঝখানে নির্মিত হয়েছে জলপ্রপাত 'নির্ঝর'। এর পূর্ব পাশে রোপিত কৃত্রিম পদ্মপাতা ও পদ্মকলির অবয়বে 'পদ্মরানী'। 
সাইটভিউ টাওয়ারের পাশেই মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত ১১ নং সেক্টরের শহীদদের স্মরণে নির্মিত 'মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি ভাস্কর'। এছাড়াও অবকাশ কেন্দ্রের প্রাচীন বটবৃক্ষের চূড়ায় নির্মিত হয়েছে কাঠে তৈরি অবকাশ 'ইউটোপিয়া'। গাছের গোড়া থেকে লতানো সিঁড়ি দিয়ে এখানে ওঠা যায়। হ্রদ পেরিয়ে পশ্চিমে পাহাড়ে যেতে হবে বর্ণিল সংযোগ সেতু 'রংধনু'। 
ইকোপার্ক, অর্কিড হাউজসহ আরো কিছু নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে জেলা প্রশাসনের। গজনী অবকাশ কেন্দ্র বর্তমানে সিনেমা ও নাটকের শূটিং লোকেশন হিসেবেও পরিচিতি অর্জন করেছে। থাকা-খাওয়াসহ আইন-শৃঙ্খলার কোন সমস্যা নেই। পাশেই রয়েছে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডের (বিজিবি) ক্যাম্প। এই পাহাড়ী এলাকায় আরও একটি উলেস্নখযোগ্য দিক হচ্ছে গারো, কোচ, হাজং, বানাই, ঢালুসহ নানান সম্প্রদায় এর বসবাস। 
গজনী অবকাশ কেন্দ্রে রয়েছে পিছঢালা পথ। ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ হয়ে গজনী পৌঁছতে সময় লাগে ৫ ঘণ্টা। পথে কোন ফেরির বালাই নেই। একটানা চলে আসা যাবে গজনী অবকাশে। বন্ধুবান্ধব ও পরিবারপরিজন নিয়ে ঘুরে আসুন প্রকৃতির লীলাভূমি গারো পাহাড়ের গজনী অবকাশ কেন্দ্র। অবকাশ কেন্দ্র ছাড়াও আছে শেরপুর জেলা সদরের নামীদামী আবাসিক হোটেলের সুবিধা। সর্বনিম্ন ২০০ থেকে সর্বোচ্চ ১০০০ টাকা পর্যনত্ম শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হোটেলে রাত যাপন করা যায়। অবকাশ কেন্দ্রে যেতে হলে প্রতি গাড়ির জন্য ১৫০ টাকা এবং অবকাশ রেস্ট হাউজ ব্যবহারের জন্য প্রতিকক্ষ ৫০০ টাকার বিনিময়ে পাস সংগ্রহ করতে হবে। 
 চারিপাশে ঘুরে দেখা, নিজেদের মধ্যে খুনসুটি, হইহুল্লোড় করতে করতে ছবি তোলার মাঝে প্রায় ঘন্টা দুয়েক এখানে কাটিয়ে এবার রওনা হলাম শেষ গন্তব্য 'মধুটিলা ইকোপার্ক 'র দিকে।
 

ভ্রমণকালঃ ২৪ মে, ২০১৩

আগের পর্ব পরের পর্ব

মন্তব্যসমূহ

Translate

বোকা পর্যটকের কথা

মানুষ যেমন হঠাৎ করেই কারো প্রেমে পড়ে, ঠিক তেমনই করে আমিও প্রেমে পড়েছি ভ্রমণের। আজব এক নেশায় নেশাগ্রস্থ, কবে থেকে জানি না। তবে নিজের আর্থ-সামাজিক অবস্থানে লড়াই করে টিকে থাকার পর ভ্রমণে মনঃসংযোগ করতে উদ্যত হই। সেই থেকে যখনই সময়-সুযোগ হয় বেড়িয়ে পড়ি ঘর হতে, ভ্রমণের তরে। মজার ব্যাপার হল, আমি সাইক্লিস্ট নই, সাঁতার কাটতে পারি না, না পারি ট্র্যাকিং, হাইকিং, ক্লাইম্বিং। কোন ধরণের এডভেঞ্চারধর্মী কোন গুণই আমার নেই, শুধু আছে ভ্রমণের শখ আর অদম্য ইচ্ছাটুকু। আর সেই ইচ্ছা থেকেই সময় সময় আমার ঘুরে বেড়ানো আর সেই গল্পগুলো লিপিবদ্ধ করে রাখা এই ডায়েরীতে। আমার এই লেখাগুলো বিভিন্ন সময়, বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে এবং ব্যক্তিগত ডায়েরীতে লেখা ছিল; সেগুলো সব একত্রে সংরক্ষণ করে রাখার নিমিত্তেই এই ব্লগ। যদি আপনাদের কারো এই লেখাগুলো কোন কাজে লাগে তবে আমার পরিশ্রম কিছুটা হলেও সার্থক হবে।

পোস্ট সংরক্ষণাগার

যোগাযোগ ফর্ম

প্রেরণ