কাজীর শিমলা, লাউচাপড়া, গজনী আর মধুটিলা - এক ঢিলে চার পাখী (মধুটিলা ইকোপার্ক পর্ব)

মধুটিলা ইকোপার্ক

গল্পের ছবিসকল

  • মধুটিলা ইকোপার্ক
  • মধুটিলা ইকোপার্ক
  • মধুটিলা ইকোপার্ক
  • মধুটিলা ইকোপার্ক#
গজনী থেকে বেড়িয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম টাইম কাভার করতে লাঞ্চ পোস্টপণ্ড করে এখন চলে যাবো “মধুটিলা ইকোপার্ক”। সেখানে পৌঁছানোর পর পার্কের পাশের একটা লোকাল খাবারের রেস্টুরেন্টে আমাদের ১৯জনের দলের খাবারের অর্ডার দিয়ে ঢুকে পড়লাম ইকোপার্কের ভেতরে। প্রকৃতির ঘন সবুজে ছেয়ে থাকা সারি সারি গাছের হাতছানিতে প্রধান ফটক পেরিয়ে ভেতরে প্রবেশ। এরপর চারদিকে তাকিয়ে দেখার পথ দেখায় পথই। প্রবেশ পথের ডান পাশে খোলা প্রান্তর আর দু’পাশে রকমারি পণ্যের দোকান। সামনের ক্যান্টিন পার হলেই পাহাড়ী ঢালু রাস্তা। এর পরই অবাক করে হাতি, হরিণ, রয়েল বেঙ্গল টাইগার, সিংহ, বানর, কুমির, ক্যাঙ্গারু, মৎস্যকন্যা, মাছ ও পাখির ভাষ্কর্য। পাশের আঁকাবাঁকা পথে ঘন গাছের সারি লেকের দিকে চলে গেছে। তারপর স্টার ব্রিজ পেরিয়ে পাহাড়ের চূড়ায় পর্যবেক্ষণ টাওয়ারে আরোহণ করলেই নজর কেড়ে নেয় ভারতের উঁচু-নিচু পাহাড় আর সবুজের সমারোহ। শেরপুরের সীমান্তবর্তী নালিতাবাড়ী উপজেলার পাহাড়ী এলাকায় অবস্থিত এই মধুটিলা ইকোপার্ক এখন অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র এবং একটি আধুনিক পিকনিক স্পট হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। নালিতাবাড়ী উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার উত্তরে পোড়াগাঁও ইউনিয়নে ময়মনসিংহ বন বিভাগের ব্যবস্থাপনায় মধুটিলা ফরেস্ট রেঞ্জের সমশ্চূড়া বনবিটের আওতায় ৩৮০ একর বনভূমিতে গারো পাহাড়ের মনোরম পরিবেশে এলাকার সংসদ সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরীর উদ্যোগে সরকারীভাবে ২০০০ সালে নির্মিত হয় ‘মধুটিলা ইকোপার্ক’ তথা পিকনিক স্পট। স্থাপনকাল থেকেই শীত মৌসুমে এ পার্কে পর্যটকরা ভিড় করে। ইকোপার্কে ঢুকতে জনপ্রতি পাঁচ টাকায় টিকেট কাটার ব্যবস্থা রয়েছে। এখানে আলাদা আলাদা ফি দিয়ে প্যাডেল বোট চালানো, পর্যবেক্ষণ টাওয়ারে উঠা, শিশুপার্কে প্রবেশের সুযোগও রয়েছে। শুধু দিনের বেলায় ব্যবহারের জন্য ভ্যাটসহ ৪ হাজার ৭০২ টাকার বিনিময়ে পাহাড়ের চূড়ায় চার কক্ষ বিশিষ্ট শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) সুসজ্জিত ‘মহুয়া’ নামের রেস্ট হাউজ। এ রেস্ট হাউজ ব্যবহার করতে চাইলে মধুটিলা রেঞ্জ অফিস, ময়মনসিংহ অথবা শেরপুর বন বিভাগ অফিসে বুকিং দিতে হয়। এ ছাড়াও এখানে রয়েছে ডিসপ্লে মডেল, তথ্য কেন্দ্র, গাড়ি পার্কিং জোন, ক্যান্টিন, মিনি চিড়িয়াখানা, বন্য প্রাণীর বিরল প্রজাতি পশুপাখির ভাষ্কর্য। আরও আছে ঔষধি ও সৌন্দর্যবর্ধক প্রজাতির বৃক্ষ এবং ফুলসহ বিভিন্ন রঙের গোলাপের বাগান। ইকোপার্কটি সীমান্তবর্তী হওয়ায় এখান থেকে ভারতের দূরত্ব ১ কিলোমিটার। যুগ যুগ ধরে সীমান্তবর্তী এ পাহাড়ে গারো আদিবাসীরা বসবাস করে আসছেন। এখানে খুব সহজে আদিবাসী গারোদের জীবনধারা ও সংস্কৃতি খুব কাছে থেকে দেখারও সুযোগ রয়েছে। সরকার প্রতি বছর এ পার্ক থেকে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকার রাজস্ব আয় করলেও পার্কের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য সে অনুপাতে কোন প্রকার নতুন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়নি। তবে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এ পার্কের আরো সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য ঝুলন্ত ব্রিজ, লেক এক্সটেনসহ বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রায় ৩ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। রাজধানী ঢাকা থেকে মধুটিলা ইকোপার্কের দূরত্ব প্রায় ২শ’ কিলোমিটার। ঢাকা বাসস্ট্যান্ড থেকে ময়মনসিংহ হয়ে শেরপুর আসতে হবে। শেরপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে নালিতাবাড়ী উপজেলার নন্নী বাজার পর্যন্ত লোকাল বাস সার্ভিস রয়েছে। অথবা নিজস্ব গাড়িতে সরাসরি ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ হয়ে শেরপুর পৌঁছানোর আগে নকলা উপজেলা থেকে নালিতাবাড়ী সদর হয়ে ইকোপার্কে আসা সহজ হয়। তিনটা নাগাদ আমরা বেড়িয়ে এলাম পার্ক থেকে, হাত-মুখ ধুয়ে নিয়ে আগে অর্ডার করে যাওয়া ভাত-মুরগির মাংস-আলু ভর্তা-ডাল দিয়ে লাঞ্ছ সেরে নিলাম। জুবায়ের ভাই সবাইকে খাওয়ালেন ডাবের পানি। পাঁচটা নাগাদ গাড়ী ঢাকার উদ্দেশ্যে ছাড়ল, এই আশা ছিল যে দশটা-এগারোটা নাগাদ ঢাকায় পৌঁছব। কিন্তু বিধিবাম, পথে তিনবার গাড়ী নষ্ট হল, খারাপ রাস্তা সব মিলে ঢাকা পৌঁছলাম রাত একটায়! বাসায় এসে হিসেব করে দেখলাম মোট ৪২ ঘণ্টায় প্রায় ৬০০ কিলোমিটার জার্নি করেছি, তিন জেলা ময়মনসিংহ, শেরপুর আর জামালপুর ভ্রমণ করে দেখেছি ত্রিশালের কাজীর শিমলাস্থ “নজরুল স্মৃতি সংগ্রহশালা”, “লাউচাপড়া অবসর বিনোদন কেন্দ্র”, “গজনী অবকাশ কেন্দ্র” আর “মধুটিলা ইকোপার্ক”। সাথে বোনাস হিসেবে ছিল আড্ডা আর নাইটশোতে আধঘণ্টার জন্য “জটিল প্রেম” নামক বাংলা সিনেমা দেখার অভিজ্ঞতা।
 

ভ্রমণকালঃ ২৪ মে, ২০১৩

আগের পর্ব

মন্তব্যসমূহ

Translate

বোকা পর্যটকের কথা

মানুষ যেমন হঠাৎ করেই কারো প্রেমে পড়ে, ঠিক তেমনই করে আমিও প্রেমে পড়েছি ভ্রমণের। আজব এক নেশায় নেশাগ্রস্থ, কবে থেকে জানি না। তবে নিজের আর্থ-সামাজিক অবস্থানে লড়াই করে টিকে থাকার পর ভ্রমণে মনঃসংযোগ করতে উদ্যত হই। সেই থেকে যখনই সময়-সুযোগ হয় বেড়িয়ে পড়ি ঘর হতে, ভ্রমণের তরে। মজার ব্যাপার হল, আমি সাইক্লিস্ট নই, সাঁতার কাটতে পারি না, না পারি ট্র্যাকিং, হাইকিং, ক্লাইম্বিং। কোন ধরণের এডভেঞ্চারধর্মী কোন গুণই আমার নেই, শুধু আছে ভ্রমণের শখ আর অদম্য ইচ্ছাটুকু। আর সেই ইচ্ছা থেকেই সময় সময় আমার ঘুরে বেড়ানো আর সেই গল্পগুলো লিপিবদ্ধ করে রাখা এই ডায়েরীতে। আমার এই লেখাগুলো বিভিন্ন সময়, বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে এবং ব্যক্তিগত ডায়েরীতে লেখা ছিল; সেগুলো সব একত্রে সংরক্ষণ করে রাখার নিমিত্তেই এই ব্লগ। যদি আপনাদের কারো এই লেখাগুলো কোন কাজে লাগে তবে আমার পরিশ্রম কিছুটা হলেও সার্থক হবে।

পোস্ট সংরক্ষণাগার

যোগাযোগ ফর্ম

প্রেরণ