তিব্বতীয় মনেস্ট্রি মানালি (গাধান থেকচ্ছক্লিং গুম্পা) ভ্রমণ
দুদিন আগে দেখা কুলু তিব্বতীয় মনস্ট্রি’র তুলনায় ছোটখাট এই মনস্ট্রিও দেখতে মন্দ না। চারিদিকে পাহাড়ে ঘেরা ছোট্ট উপত্যকায় অনিন্দ্য সুন্দর মনেস্ট্রিটি দাঁড়িয়ে আছে। দুপুরের এই শুরুর তীক্ষ্ম সূর্যালোকে চারিদিক উজ্জ্বলতর ছিল; ফলে দেখতেও বেশ লাগছিল। আমরা চারিদিকে বিক্ষিপ্তভাবে নিজেদের মত করে ঘুরে দেখতে লাগলাম।
চারিদিকে ঘুরতে ঘুরতে দেখতে পেলাম আমাদের মত আরও পর্যটকের পদচারণায় বেশ মুখর চারিপাশ। এরকমই একটি দল এসেছে কলকাতা থেকে, সেই দলের দুই ভদ্রলোকের সাথে গল্প হল। আমরা বাংলাদেশ থেকে সিমলা-মানালি’তে বেড়াতে এসেছি শুনে একরাশ বিস্ময় নিয়ে আমাদের সাথে আলাপচারিতা জুড়ে দিলেন। বাংলাদেশ থেকে ভারতের এতো ভেতরের দিকে মানুষ বেড়াতে আসে এটা তাদের বিশ্বাস হচ্ছিল না। আমি বেশ মজা পেলাম, আমারতো মনে পশ্চিমবঙ্গের চেয়ে অনেক বেশী বাংলাদেশী পর্যটক ভারতের অন্যান্য রাজ্যে বেড়াতে যায়। উনাদের সাথে অনেক কিছু গল্প হল; গল্প হল বলতে তাদের আগ্রহের প্রশ্নবানে জর্জরিত হলাম। ভাবতে অবাক লাগে পাশের পাড়ার মত কাছের কলকাতার লোকদের আমাদের সম্পর্কে ধারণা বড়ই অদ্ভুত। হয়তো এর পেছনে আমাদেরই ব্যর্থতা রয়েছে কোথাও না কোথাও।
যাই হোক উনাদের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে আমরা মনস্ট্রি দেখায় মনোযোগ দিলাম। উনারা তখন খোঁজ করছিলেন এখানে নাকি দুপুরের লাঞ্চ বেশ সস্তায় পাওয়া যায়; রুটি, সবজি আর কি যেন অতি অল্পে দেয়া হয় আগত সকলের জন্যই। তাদের সবিনয়ে জানালাম আমাদের এখন লাঞ্চ করার কোন ইচ্ছেই নেই; আমরা আরও পরে মানালি মলের দিকে লাঞ্চ সেরে নিবো। তাদের থেকে সহাস্য বিদায় নিয়ে আমি আমার দলের সাথে এসে যোগ দিলাম।
মানালি'র এই তিব্বতীয় মনস্টি’র নাম “গাধান থেকচ্ছক্লিং গুম্পা” যা ১৯৬০ সালে নির্মিত হয়েছিল। মূলত পার্শ্ববর্তী তিব্বত থেকে আগত বিপুল পরিমান শরণার্থীদের আশ্রয় দিতে এটা নির্মিত হয়েছিল। প্যাগোডা’র মত দেখতে হলুদ রঙের ছাদটি দূর হতে এই মনস্ট্রি’র দিকে পর্যটকদের দৃষ্টি কেড়ে নেয়। এখানে বুদ্ধের মূর্তি এবং বৌদ্ধ ধর্মের নানান চিত্র রয়েছে। রয়েছে অতিথিশালা, ভোজনালয়, কিছু দোকান যেখানে তিব্বতীয় হ্যান্ডিক্রাফটস এবং কার্পেট বিক্রয় হয়। ছোট্ট এই পর্যটন কেন্দ্র ঘুরে দেখতে বেশী সময় লাগল না।
এদিন বিকেলে তেমন আর কোন কাজ ছিল না, বিক্ষিপ্তভাবে ঘোরাঘুরি করে সময় পার করলাম। রাতে দ্রুত খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়তে হবে, তার আগে ব্যাগপত্তর ভালমত গুছিয়ে নেয়া। কারন, পরেরদিন ভোর পাঁচটায় আমরা যাত্রা শুরু করব মানালি হতে দিল্লী’র উদ্দেশ্যে।
মন্তব্যসমূহ