ভ্রমন কখনো কখনো নেশা হয়ে ওঠে, যেমনটা আমার ক্ষেত্রে ইদানিং হচ্ছে। মাঝে
দুই-এক সপ্তাহের বিরতি গেলেই মনটা কেমন আকুপাকু করে ওঠে, টানতে থাকে ঘরের
বাহিরে। আর এই নেশার টানে এক সপ্তাহ আগে গত রবিবার ডিশিসান নিলাম কুমিল্লা
হান্টে যাব, ডেশটিনেশান ময়নামতি, লালমাই পাহাড়, কোটবাড়ি, ওয়ার সিমেট্রি,
বার্ড (বিএআরডি)। পার্টনারও দুজন ম্যানেজ হল।কিন্তু আমার কলিগ রুমি ভাই
ফেবু স্ট্যাটাস দেখে আমাকে ফোন দিল; বলল, “চলেন সিলেটের দিকে যাই”। ভেবে
দেখলাম মন্দ না। আরও দুই সহকর্মী যোগ দিল। চারজন মিলে প্ল্যান করলাম
বৃহস্পতিবার রাতের গাড়ীতে রওনা হব।
আমার বাল্য বন্ধু মনা ওভার দ্যা ফোনে বাসের টিকেট বুকিং করে দিল। হঠাৎ
রওনা হওয়ার ঘণ্টা তিনেক আগে রুমি ভাই ফোন করল এই মর্মে যে শনিবার বিএনপির
মহা সমাবেশ। কি করি? যা হয় হবে, আগেতো রওনা হই। রাত বারোটার গাড়ী ছাড়ল রাত
সোয়া একটায়।
গাড়ী দেরী করে ছাড়লেও ড্রাইভার ভাল গাড়ী চালিয়েছে। প্রতিবার ভ্রমণে
বাসের সময়টুকু খুব টেনশনে কাটে। হাইওয়ে ড্রাইভে যে কাজগুলো করা একেবারে
হারাম সেগুলোই করার যেন প্রতিযোগিতায় নামে প্রতি রাতে হাইওয়ে ড্রাইভারেরা।
কেউ দ্বিমত করলে তার জন্য বলব, সড়কের বাঁকে ওভারটেক করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ
হওয়া সত্ত্বেও সবসময় তারা বাঁকে এসেই তা করবে।
যাই হোক সকাল ৬টা নাগাদ পৌঁছে গেলাম সিলেট শহরে।
সারা রাত মাঝারী ধরণের বৃষ্টি ঝরেছে রাতের আকাশের কান্না হয়ে। সিলেট পৌঁছে আমাদের লক্ষ্য ছিল
একটা হোটেল রুম নিয়ে ব্যাগ এন্ড ব্যাগেজ হোটেলে রেখে জাফলং এর পথে বেরিয়ে
পরা। পথে দেখবো জৈন্তাপুর রাজবাড়ী, বিছানাকান্দির পাথুরে ঝিরি, পান্থুমুই
এর ঝর্ণা, লালাখাল। কিন্তু আমরা কয়েকটি হোটেলে রুমের খোঁজ করে কোন ফাঁকা
রুম পেলাম না। অগত্যা সময় নষ্ট না করে জাফলংগামী বাসে চড়ে বসলাম।
ঘণ্টাখানেকেরও কম সময়ে পৌঁছলাম সারিঘাঁট, এখান থেকে ডানে পথের পাশে
শুরু লালাখালের। ইঞ্জিনচালিত নৌকা রিজার্ভ করে ঘোরা যায়।
আমরা দুটি নৌকার
মাঝির সাথে কথা বললাম। ১৫০০ টাকা চাইল ঘণ্টা দুয়েকের ভ্রমণের জন্য। শেষে
সিএনজি অটোরিকশা করে ২৫০ টাকা ভাড়ায় লালাখাল ঘাটের উদ্দেশে যাত্রা। মিনিট
বিশেকের মধ্যে পৌঁছলাম গন্তব্যে। ওমা! এখান থেকে নৌকা ভাড়া আরও বেশী চাইল।
শেষে ১০০০ টাকা ভাড়ায় সেখান থেকে সারিঘাঁট পর্যন্ত নৌকা ভাড়া করলাম।
লালাখালের পথে ঘুরলাম ঘণ্টাখানেক; দেখলাম ভারতীয় বর্ডারের জিরো পয়েন্ট,
লালাখাল টি গার্ডেন।
বেলা এগারটা নাগাদ সারিঘাঁট পৌঁছে ঝটপট রাস্তার পাশের বেড়ার হোটেলে গরম
গরম পরাটা, ডিম ভাজি আর সবজি দিয়ে নাশতা করে শুরু করলাম বিছানাকান্দি আর
পান্থুমাই এর উদ্দেশে যাত্রা।
সারিঘাঁটের এক পাশে লালাখাল। তার উল্টো পাশের রাস্তা চলে গেছে
গোয়াইনঘাঁটের দিকে। সেই রাস্তা হতে জনপ্রতি ১৬-২০টাকা ভাড়ায় টেম্পু করে
গোয়াইনঘাঁট যাওয়া যায়। সেখান থেকে অটোরিকশা করে যেতে হবে বিছানাকান্দি।
আমরা ৫০০ টাকা ভাড়ায় সরাসরি বিছানাকান্দির জন্য অটোরিকশা ভাড়া করলাম। শেষে
জেনেছি ভাড়া ৩০০-৪০০ টাকার বেশী নয়।
এবারের পুরো ভ্রমণ জুড়েই সিএনজি
ড্রাইভারদের যন্ত্রণায় জ্বলেছি। যাই হোক প্রায় ঘণ্টা দুয়েকের ভ্রমণ শেষে
বেলা একটার পরে পৌঁছলাম বিছানাকান্দি টেম্পু স্ট্যান্ডে।
সেখানে জিজ্ঞাসা করে যা জানলাম (ভিন্ন ভিন্ন মতানুসারে) এক কিলোমিটারের
মত দূরতে বিছানাকান্দির পাথুরে ঝিরি তীর। মজার ব্যাপার হল পথটা প্রায় পাঁচ
কিলোমিটারের উপরে এবং সোয়া এক ঘণ্টা হাটতে হল। জায়গা মত পৌঁছে কি অনুভুতি
হল বলে বুঝাতে পারব না। আপনারা ছবি দেখে বুঝে নিন।
দুঃখের বিষয়
বিছানাকান্দি দেখতেই আমাদের সন্ধ্যা পার হয়ে গেল। কি আর করা, পান্থুমাই বাদ
দিলাম, বাদ দিলাম জাফলং পরিকল্পনা থেকে।
পান্থুমাই বাদ দিলাম সময়ে কাভার না হওয়ায়, আর জাফলং বাদ দিলাম এই কারণে যে বিছানাকান্দি দেখার পর আপনার আর জাফলং ভালো লাগবে না। যারা দুটাতেই গেছেন তারা এটা বুঝবেন। যে কোন জেলা হতে সিলেট এসে জাফলংগামী বাসে চড়ে বসুন, নেমে পড়ুন
সারীঘাট।
সেখান হতে টেম্পু করে গোয়াইনঘাট হয়ে চলে আসুন হাদারপাড়, সেখান থেকে
হাঁটাপথে অথবা নৌকাযোগে (পর্যাপ্ত পানি থাকা স্বাপেক্ষে) বিছানাকান্দি।
আপনি সারীঘাট হতে সরাসরি
অটোরিকশা করেও চলে আসতে পারেন। সবচেয়ে ভালো সিলেট থেকে অটোরিকশা করে চলে
আসা। দরদাম করতে পারলে ৫০০ টাকা ভাড়ায় আপনি সিলেট হতে বিছানাকান্দি চলে
আসতে পারবেন। ও হ্যাঁ, বর্ষায় নদীপথে আপনি আসতে পারবেন। আমরা যখন
বিছানাকান্দিতে জলকেলিতে মত্ত তখন বিমানবন্দর ঘাট হতে একটি ১৭ জনের দল
ইঞ্জিন চালিত নৌকা নিয়ে এসেছিল।
গল্পের ছবিসকল
পারাপার” - বিছানাকান্দির গ্রামের রাস্তা হতে দেখা দৃশ্য