কাপ্তাই লেকের জলে... কার ছায়া গো...? (তিন দিনে তিন পার্বত্যজেলা ভ্রমণ – পর্ব ০২)

#

গল্পের ছবিসকল

  • কাপ্তাই লেক
  • কাপ্তাই লেক
  • কাপ্তাই লেক
  • কাপ্তাই লেক
  • কাপ্তাই লেক
  • আমার সহকর্মী, যে ২০১৭ সালে সড়ক দূর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়ে এই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে
  • কাপ্তাই লেক
  • কাপ্তাই লেক
  • কাপ্তাই লেক এর শুভলং ঝর্ণার কাছে নির্মিত একটা ব্রীজে আমার দলের দুইজন
  • কাপ্তাই লেক
  • কাপ্তাই লেক
  • কাপ্তাই লেক
  • কাপ্তাই লেক
  • কাপ্তাই লেক
  • কাপ্তাই লেক
  • কাপ্তাই লেক
  • কাপ্তাই লেক
  • কাপ্তাই লেক
  • কাপ্তাই লেক
  • কাপ্তাই লেক
  • কাপ্তাই লেক
  • কাপ্তাই লেক
  • কাপ্তাই লেক
  • কাপ্তাই লেক
  • কাপ্তাই লেক
  • কাপ্তাই লেক
  • কাপ্তাই লেক
সাজেক পৌঁছে শুনি কোন এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আসবেন, তাই আমরা সাজেক ভ্যালীতে খুব বেশীক্ষণ অবস্থান করতে পারি নাই। তার সাথে আকাশেও ছিল মেঘ গুরগুর। তাই আমার বাকী তিন ভ্রমণসঙ্গী খুব দ্রুত সাজেক ভ্যালীর পেছনে পাহাড়ের চুড়ায় অবস্থিত উপজাতীয় পাড়া ঢুঁ মেরে এল। পাহাড়ের ঠিক পেছনেই সারি সারি ভারতীয় বাড়ীঘর চোখে পড়ে। সেখানে তারা সেই টপলেস উপজাতীয়দের দেখা পেয়েছে। কিন্তু তারা খুব অমায়িক ব্যাবহার করেছে। উপরে ওঠার সময় যখন নীচ থেকে তারা ইশারায় জিজ্ঞাসা করেছিল যে উপরে উঠা যাবে কি না। কয়েকটা উপজাতীয় তরুন এগিয়ে এসে তাদের উপরে নিয়ে গিয়েছে। তাদের সাথে কথা হয়েছে। সেই স্থান হতে প্রকৃতির অপরূপ সুধাপাণের সাথে চলেছে তাদের ক্যামেরার সাটারও। আকাশে কালো মেঘ জমাট বাঁধা দেখে আমরা দ্রুত ব্যাক করার সিদ্ধান্ত নিলাম। গতবছর রিজুক ফলস দেখতে গিয়ে বান্দারবান এর সেই ভয়াবহ স্মৃতি এখনো মনে আছে। (ভয়ঙ্কর সুন্দরীতমা!..বান্দরবান (পর্ব ০১) )। 
আমরা আমাদের সিএনজি অটোরিকশায় উঠে পড়তেই আমাদের ড্রাইভার কামাল গাড়ী স্টার্ট দিয়ে দিল। আবার সেই সর্পিল আঁকাবাঁকা পথ ধরে ছুটে চলা। এবার যেন কামালের গাড়ীর গতি আরও বেড়ে গেছে। পরে বুঝলাম আমরা এখন পাহাড় হতে নীচের দিকে যাচ্ছি। কামালের সুদক্ষ গাড়ী চালনা সত্ত্বেও আমরা একটু দেরীতেই খাগড়াছড়ি শহরে পৌঁছলাম। সেখানে পৌঁছে বিখ্যাত “সিস্টেম রেস্টুরেন্ট” এ ঢুঁকে পড়লাম লাঞ্ছ সেরে নিতে। কিন্তু ততক্ষণে তাদের বেশীরভাগ খাবারই শেষ। গত বৈশাখে ‘সাঙরাই’ উৎসবে এসেও খেতে পারি নাই তাদের বিখ্যাত ‘বেম্বো চিকেন’; এবারো পারলাম না। 
যাই হোক কয়েক পদের ভর্তা-ভাজি, ডিমভাজা ইত্যাদি দিয়ে খাবার শেষ করলাম। ও হ্যাঁ, খাওয়া শেষে তাদের স্পেশাল টক শরবত কিন্তু ছিল অসাধারণ। কেউ খাগড়াছড়ি শহরে আসলে পরে অবশ্যই “সিস্টেম রেস্টুরেন্ট” এ খাবার চাখতে ভুলবেন না। দ্রুত খাবার শেষ করে আমরা রাঙ্গামাটিগামী বাস ধরার জন্য বাস কাউণ্টার গিয়ে দেখি সেদিনের শেষ বাসটি আধঘণ্টা আগে ছেড়ে গেছে। কি আর করা। কামালকে জিজ্ঞাসা করলাম সে যাবে কি না আমাদের নিয়ে রাঙ্গামাটি। সে রাজী হল, কিন্তু ভাড়া গুণতে হবে দুই হাজার টাকা। যেখানে আমাদের চারজনের ভাড়া হবে বাসে গেলে শ’পাঁচেক; সেখানে দুই হাজার! কি আর করা, দরদাম করে কামালকে আঠারোশো টাকায় রাজী করালাম। 
তবে সেই জার্নিটা ছিল অসাধারণ, যাত্রা শুরুর আধঘণ্টার মধ্যে শুরু হল ঝড়ো হাওয়া। পেছনে চেয়ে দেখি কুচকুচে কালো মেঘের দল ধেয়ে আসছে। শুরু হল আমাদের অটোরিকশা আর মেঘের দলের একশত মিটার স্প্রিণ্ট। সাই সাই করে ছুটে চলল আমাদের অটোরিকশা আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ ধরে। উফ! এক জটিল অভিজ্ঞতা। আমি লিখে বুঝাতে পারবো না। তিন থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টার বাস জার্নির পথ এক ঘণ্টা পঞ্চাশ মিনিটে শেষ করে আমরা মাগরিবের কিছু আগে আগে পৌঁছলাম রাঙ্গামাটি শহরে। সোজা চলে এলাম রাঙ্গামাটি ঝুলন্ত সেতু সংলগ্ন পর্যটন মোটেলে।
রুমে উঠে একে একে সবাই ফ্রেশ হয়ে পরের দিনের প্ল্যান ঠিক করে নিলাম। রাতের খাবার খেতে আবার শহরে না গিয়ে মোটেলের রেস্টুরেন্টেই সেরে নেয়ার সিদ্ধান্ত হল। যদিও আমাদের জন্য একটু ব্যায়বহুল ছিল। কেননা আমারা চারজন হওয়াতে আজকের এক দিনেই সিএনজি ভাড়া গুণতে হয়েছে ছয় হাজারেরও বেশী। যাই হোক সেদিন পূর্ণিমার পরের দিন হওয়াতে কাপ্তাই লেকের বুকে ছিল এক বিশাল চাঁদের জোছনা বিহার। রাতে খাওয়া শেষে আমরা চারজন মেতে উঠলাম গল্প, টুয়েন্টি নাইন আর জোছনা বিলাসে। 
ভোর পাঁচটায় উঠে আমি চলে গেলাম কাপ্তাইয়ের জলে সূর্যোদয় দেখতে। বাকী তিনজন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। আর হওয়াটাই স্বাভাবিক। একদিনে প্রায় ছয়শত কিলোমিটার পথ জার্নি করে আবার মধ্যরাত অবধি আড্ডা আর টুয়েন্টি নাইন। আমি মোটেলে ফিরে এসে তাদের ডেকে তুললাম। সবাই রেডি হয়ে পর্যটন ঘাট হতে ইঞ্জিন নৌকা ভাড়া করে বের হলাম কাপ্তাই লেক ঘুরে বেড়াতে। এখানে এখন বিভিন্ন সাইজের নৌকায় বিভিন্ন প্যাকেজ এ ভ্রমণ করানো হয়, ভাড়া ১২০০ হতে ৩০০০ টাকা পর্যন্ত। স্পট, নৌকা ভেদে ভাড়ার তারতম্য। আমরা চারজন মোটে মানুষ, তারপরও ১২ জনের ধারন ক্ষমতার একটা নৌকা ভাড়া করে আমরা বের হয়ে গেলাম আটটা নাগাদ। 
কাপ্তাইয়ের সবুজাভ নীল জলরাশি চিরে আমাদের জলযান এগিয়ে চলল। দুইদিকের পাহাড়ের সারিকে কে যেন মাখনের মত চাকু দিয়ে কেটে এই লেকখানি বানিয়ে রেখেছে। দুই পাশের সবুজে ছাওয়া পাহাড়, তার মাঝে মাথার উপরে নীল আকাশ রেখে আমাদের জলের বুক চিরে এগিয়ে যাওয়া। শুধু বিপত্তি ছিল ইঞ্জিনের শব্দটুকু, যেটা না থাকলে অপার্থিব এক যাত্রা হত। শুভলং ঝর্না তখন শুকিয়ে কাঠ। আমি আগে শুভলং ঝর্না দেখেছি, ভিজেছি এর হিমশীতল জলে। আমার ঝর্না দেখার ভাগ্য বরাবার ভালো। আমি যে কয়টি ঝর্না এ পর্যন্ত গিয়েছি দেখতে সে সময়ই ছিল ঝুম বৃষ্টি। আর বৃষ্টির দিনে ঝর্নার রূপ অসাধারণ। যদিও আমার ঝর্না দেখার সংখ্যা এক হাতের অঙ্গুলির মধ্যেই রয়েছে এখনো। 
ফিজিক্যাল ফিটনেস একটু ভালো থাকলে বান্দরবানের ঝর্নাগুলো চষে বেড়াতাম। যাই হোক সারাবেলা লেকে ঘুরে আমরা দুপুরে ফিরে এলাম মোটেলে। আজ আর ভুল করলাম না। সকালে নাশতা করতে যখন শহরে গিয়েছিলাম তখন বাসের টিকেট করে নিয়ে এসেছি। তাই দ্রুত ফ্রেশ হয়ে ব্যাগ গুছিয়ে আমরা চলে আসলাম বাস স্ট্যান্ড এ। সেখানে দুপুরের লাঞ্চ সেরে চেপে বসলাম লোকাল বাসে, উদ্দেশ্য বান্দরবান। রাঙ্গামাটির কাপ্তাই লেকে তোলা কিছু ছবি আমার আনাড়ি হাতে ছোট্ট ক্যামেরায় তোলা আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম। 

ভ্রমণকালঃ ১৬ মে, ২০১৪

আগের পর্ব পরের পর্ব

Translate

বোকা পর্যটকের কথা

মানুষ যেমন হঠাৎ করেই কারো প্রেমে পড়ে, ঠিক তেমনই করে আমিও প্রেমে পড়েছি ভ্রমণের। আজব এক নেশায় নেশাগ্রস্থ, কবে থেকে জানি না। তবে নিজের আর্থ-সামাজিক অবস্থানে লড়াই করে টিকে থাকার পর ভ্রমণে মনঃসংযোগ করতে উদ্যত হই। সেই থেকে যখনই সময়-সুযোগ হয় বেড়িয়ে পড়ি ঘর হতে, ভ্রমণের তরে। মজার ব্যাপার হল, আমি সাইক্লিস্ট নই, সাঁতার কাটতে পারি না, না পারি ট্র্যাকিং, হাইকিং, ক্লাইম্বিং। কোন ধরণের এডভেঞ্চারধর্মী কোন গুণই আমার নেই, শুধু আছে ভ্রমণের শখ আর অদম্য ইচ্ছাটুকু। আর সেই ইচ্ছা থেকেই সময় সময় আমার ঘুরে বেড়ানো আর সেই গল্পগুলো লিপিবদ্ধ করে রাখা এই ডায়েরীতে। আমার এই লেখাগুলো বিভিন্ন সময়, বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে এবং ব্যক্তিগত ডায়েরীতে লেখা ছিল; সেগুলো সব একত্রে সংরক্ষণ করে রাখার নিমিত্তেই এই ব্লগ। যদি আপনাদের কারো এই লেখাগুলো কোন কাজে লাগে তবে আমার পরিশ্রম কিছুটা হলেও সার্থক হবে।

পোস্ট সংরক্ষণাগার

যোগাযোগ ফর্ম

প্রেরণ